বৃহস্পতিবার, ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

“বিপদের মুখে ইসরায়েলের অর্থনীতি, দুটি যুদ্ধের চাপের কারণে ধসের আশঙ্কা”

“বিপদের মুখে ইসরায়েলের অর্থনীতি, দুটি যুদ্ধের চাপের কারণে ধসের আশঙ্কা”

৮৮ Views

গত বছর যখন হামাস ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করে, তখন শেলি লোটানের খাদ্যবিষয়ক স্টার্টআপটি কেবল যাত্রা শুরু করেছিল। হামলা শুরুর পর ইসরায়েল সরকার ওই অঞ্চলের সব বাসিন্দাকে সরিয়ে নেয়।

ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদন অনুসারে, যুদ্ধ শুরুর পর শেলি লোটানের দুই কর্মীকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীতে ডাকা হয়। বাকি কর্মীরা এক কর্মীর বাবা-মায়ের বাড়ির ভূগর্ভস্থ কক্ষে কার্যালয় সরিয়ে নেন। এরপর বিনিয়োগের প্রবাহ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।

ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের এক বছর পূর্ণ হতে চলেছে, কিন্তু যুদ্ধের কোনো সমাপ্তির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এরই মধ্যে ইসরায়েল লেবাননের হিজবুল্লাহর ওপর হামলা শুরু করেছে। এ অবস্থায় লোটানের ব্যবসা কোনোভাবে টিকে আছে, কিন্তু সরকারের প্রতি তাঁর ক্ষোভ এবং অর্থনৈতিক চাপ ক্রমাগত বাড়ছে।

গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলা থেকে চলমান যুদ্ধের সূত্রপাত। ইসরায়েলের অর্থনীতিতে এই যুদ্ধের প্রভাব নিয়ে খুব কম আলোচনা হয়েছে, তবে এর মধ্যে দেশটির ঋণমান অবনমিত হয়েছে এবং জিডিপি সংকুচিত হয়েছে। হাজারো ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে, কর্মসংস্থান হারিয়েছে বহু মানুষ। অনেক প্রতিষ্ঠান দূরবর্তীভাবে কাজ চালাচ্ছে। রিজার্ভ সেনা হিসেবে যারা যুদ্ধে যোগ দিয়েছেন, তারা সৈনিক জীবনের সঙ্গে পেশাদার জীবনের ভারসাম্য আনতে হিমশিম খাচ্ছেন।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর ২ লাখ ৮৭ হাজার মানুষ রিজার্ভ সেনা হিসেবে যুদ্ধে যোগ দিয়েছেন, যা ইসরায়েলের মোট জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশের বেশি। এতে অর্থনীতির স্থিতিশীলতা নিয়ে বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ইসরায়েলের অর্থনীতির মূল ভিত্তি প্রযুক্তি খাত, যা তুলনামূলকভাবে যুদ্ধের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকলেও কৃষি ও নির্মাণ খাত বড় ক্ষতির মুখে পড়েছে। এই খাতগুলো ফিলিস্তিনি শ্রমিকদের ওপর নির্ভরশীল, কিন্তু তাদের কাজের অনুমতি বাতিল করা হয়েছে।

পর্যটন খাতেও ব্যাপক ধস নেমেছে, ব্যবসায় ৭৫ শতাংশেরও বেশি হ্রাস পেয়েছে। জেরুজালেমের পুরোনো শহর, যেখানে সাধারণত পর্যটকের ভিড় লেগে থাকে, এখন অনেক দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। বেকারি ব্যবসায়ী আয়মান শাওয়ারের আয় কমে গেছে এবং আইসক্রিম বিক্রেতা আব্দুল কাদের আলামির ব্যবসাও প্রায় বন্ধ।

যুদ্ধের কারণে প্রতিরক্ষা ব্যয় স্বাভাবিকভাবেই বেড়েছে, এবং ইসরায়েলের কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনুমান করেছে যে ২০২৫ সালের মধ্যে যুদ্ধের কারণে ক্ষতির পরিমাণ ৬৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। লেবাননে চলমান হামলা এই পূর্বাভাসকে আরও প্রকট করে তুলেছে।

শেলি লোটান তাঁর তিন সন্তানকে দেখাশোনার পাশাপাশি স্টার্টআপ চালাচ্ছেন, অথচ তাঁর স্বামী পাঁচ মাস ধরে রিজার্ভ সেনা হিসেবে যুদ্ধ করছেন। এই পরিস্থিতিতে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল বিনিয়োগ প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায়, ব্যবসা চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। কার্যালয় পরিবর্তনের ব্যয় সামলানো কঠিন হয়ে পড়েছে, আর জীবনযাত্রার ব্যয়ও বেড়েই চলেছে।

এক স্টার্টআপ মালিকের সঙ্গে আলোচনা করে লোটান সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়াই এখন সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। লোটানের ভাষায়, “এ মুহূর্তে কিছু পরিবর্তন না হলে ইসরায়েলের অর্থনীতি খুব শিগগিরই ধসে পড়তে পারে।”

ইসরায়েলের অর্থনৈতিক সংকট শুধু যুদ্ধের কারণে নয়, এর আগেও প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সুপ্রিম কোর্ট দুর্বল করার উদ্যোগ নিয়ে দেশে বিক্ষোভ দেখা দেয়। তখন থেকেই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়।

ইসরায়েলের অর্থনীতি প্রযুক্তি ও গবেষণা খাতের ওপর নির্ভরশীল হলেও, গত বছরের ৭ অক্টোবরের পর থেকে পরিস্থিতি দ্রুত বদলে যাচ্ছে। হামাসের সঙ্গে যুদ্ধের শেষ দেখা যাচ্ছে না, আর হিজবুল্লাহর সঙ্গে সংঘাত ইসরায়েলের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে আরও কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে। দেশটির অনেক নাগরিকের ধারণা, দুটি যুদ্ধের ভার ইসরায়েলের অর্থনীতি বহন করতে পারবে না।

Share This