শনিবার, ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ভালো লাভের আশায় আগাম মিষ্টি আলু চাষে ব্যস্ত কৃষকরা

ভালো লাভের আশায় আগাম মিষ্টি আলু চাষে ব্যস্ত কৃষকরা

            মো. আনোয়ারুল ইসলাম\ কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণপাড়ার অনেক কৃষকই আগাম মিষ্টি আলু চাষ করেছেন এবার। মিষ্টি আলু থেকে ভালো লাভের আশা করছেন তাঁরা। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের নানা জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয় এই আলু।

            উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মালাপাড়া ইউনিয়নের অলুয়া, চন্ডীপুর, পূর্ব চন্ডীপুর, রামনগর, আসাদনগর ও মাধবপুর ইউনিয়নের মনগোজ, নুনহাটি, কলেজপাড়াসহ বিভিন্ন গ্রামের মাঠ থেকে বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার পর কার্তিক মাসের প্রথম সপ্তাহে থেকে শুরু হয় মিষ্টি আলুর চারা বপন। ফাল্গুন মাসের প্রথম দিকে থেকে মিষ্টি আলু মাটির নিচে পরিপক্ব হয় এবং এসব আগাম জাতের আলু তোলা শুরু হয়। চৈত্র ও বৈশাখ মাসে এখানকার মাঠে আবাদকৃত আলু তোলার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়বেন চাষিরা।

            উপজেলার মালাপাড়া ইউনিয়নের অলুয়া এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, খেতজুড়ে আবাদ করা হয়েছে মিষ্টি আলু। কেউ কেউ কোদাল দিয়ে মাটি কুপিয়ে আলগা করে বিট করছেন। কেউবা আবার আগাছা পরিষ্কার ও সেচের পানি দিয়ে জমি ভিজিয়ে দিচ্ছেন।

            অলুয়া গ্রামের কৃষক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, এই মৌসুমে ৪২ শতক জমিতে মিষ্টি আলু চাষ করেছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ভালো ফলন পাওয়া যাবে। গত বছর প্রতি মণ মিষ্টি আলু পাইকারি ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা দরে বিক্রি করছি। ৪২ শতক জমিতে চারা বপন ও আলু তোলা পর্যন্ত মোট খরচ হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। ১ লাখ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি হবে বলে আশা করছি।

            ওই ইউনিয়নের মনোহরপুর এলাকার কৃষক মাকসুদ আলী বলেন, এই এলাকায় এই মৌসুমে অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি মিষ্ট আলু আবাদ হয়। চলিত মৌসুমে আমি ৪৫ শতক জমিতে আগাম মিষ্টি আলুর চাষ করেছি। এখন মাঝেমধ্যে নিজেই জমির পরিচর্যা করি। এবার আগাম মিষ্টি আলুর ফলন ভালো হবে আশা করছি। এই আলু বিক্রি করতে কোনো কষ্ট করতে হয় না। জমি থেকে আলু তোলার পর বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা এসে নিয়ে যান।

            মালাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ওসমান গনি ভূঁইয়া বলেন, বর্তমান সরকার প্রণোদনার পাশাপাশি কৃষকদের অনেক সুযোগ-সুবিধা দিয়েছেন। ধান, গম, সবজিসহ সব ফসল উৎপাদনে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মধ্যে মালাপাড়া ইউনিয়নের কৃষকেরা ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। এখানে উৎপাদিত এসব কৃষিপণ্য সংরক্ষণ করে রাখতে সরকার যদি একটি হিমাগারের ব্যবস্থা করে দেয়, তাহলে কৃষকেরা আরও উদ্বুদ্ধ হতেন। কৃষকেরা তাঁদের উৎপাদিত এসব মিষ্টি আলু হিমাগারে রেখে পরে বিক্রি করতে পারলে লাভ আরও বেশি পেতেন।

            উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা বলেন, মিষ্টি আলুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ আছে। মিষ্টি আলু চাষে সময় লাগে কম এবং ফলনও ভালো হয়। এ বছর ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় মিষ্টি আলুর আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ১১০ হেক্টর ধরা হয়েছে। উপজেলার অনেক কৃষক আগাম মিষ্টি আলু আবাদ করেছেন। স্থানীয় জাতের পাশাপাশি উচ্চ ফলনশীল জাতের মিষ্টি আলুর চাষ করেছেন চাষিরা। চলতি মৌসুমে এ আলু চাষে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মিষ্টি আলুর বাম্পার ফলন আশা করছি।

            উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, বাড়ির আশপাশে আনাচে-কানাচে ও পতিত জমিতে মিষ্টি আলু চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে কৃষি বিভাগ কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে আসছে।

Share This

COMMENTS