ভোটাধিকার ও গণঅভ্যুত্থানঃ
মোঃ ইয়াছিন মজুমদার\ এদেশের জনগণ চায় সুুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে তারাই তাদের শাসক নিযুক্ত করুক। আমার জানা মতে ভোটাধিকার হরণের কারণে তিনটি বড় গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। ১৯৭০ সনের নির্বাচনে পাকিস্তান যদি ভোটাধিকার ও ভোটের ফলাফলের ভিত্তিতে ক্ষমতা শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে হস্তান্তর করত তাহলে হয়তো স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রয়োজন হতো না। তারা ভোটাধিকার হরণ করেছে বলে গণঅভ্যুত্থান ও যুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করা হয়েছে। এরশাদের আমলে ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করায় কেন্দ্রে প্রভাব খাটিয়ে সিল মারা হতো, ফলে গণঅভ্যুত্থান ও এরশাদের ক্ষমতাচ্যুতি। এরশাদের আমলেও প্রচুর উন্নয়ন হয়েছিল কিন্তু জনগণ সেটা বিবেচনায় নেয়নি ভোটাধিকার এর কাছে উন্নয়ন চাপা পড়ে যায়। সর্বশেষ শেখ হাসিনার আমলে ভোটাধিকার সম্পূর্ণ বিনষ্ট করা হয়। মামলা হামলার মাধ্যমে প্রার্থী হতে না দেয়া, কেন্দ্রে সিল মারা, রাতে ভোট দেয়া, বিনা ভোটে নির্বাচিত হওয়া গণঅভ্যুত্থানের মূল কারণ। ঋণ করে প্রচুর উন্নয়ন করা হয়েছিল, যখন তারা ক্ষমতায় এসেছিল ৬০০০ টাকা মাথাপিছু বৈদেশিক ঋণ ছিল, বর্তমানে মাথাপিছু বৈদেশিক ঋণ এক লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা, এ উন্নয়নের কারণে ভ্যাট, ট্যাক্স খাজনা, দ্রব্যমূল্য বেড়ে গেছে, ক্ষমতার শেষ বছরে তেমন কোন উন্নয়ন কাজ করা যায়নি। এখন যারা ক্ষমতায় আসবে ঋণ শোধ করতেই তাদের অবস্থা কাহিল হবে, উন্নয়ন করার সুযোগ থাকবে না। খালেদা জিয়ার আমলে ক্ষমতায় থেকে মাগুরার উপ নির্বাচনে প্রভাব খাটানোর ফলেই নির্দলীয় তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি উঠে ফলশ্রæতিতে আন্দোলন ও তত্ত¡াবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় বাধ্য করা হয়। যদি সুষ্ঠু ভোট হতো তাহলে আওয়ামী লীগ ধারাবাহিক চারবার ক্ষমতায় না এলেও হয়তো দু’বার ক্ষমতায় আসতো, বাকি দু’বার স্বসম্মানে পুর্ণ মন্ত্রীর মর্যাদা নিয়ে বিরোধী দলীয় নেত্রী থাকতো, এখন দেশ ছেড়ে পালাতে হতো না। ধারাবাহিক ক্ষমতায় থাকলে পাতি নেতাদের মধ্যে অহংকার ও দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টি হয়, তাদের শিকড় অনেক গজিয়ে যায়, সাধারণ মানুষ নির্যাতিত হয়। ক্ষমতার পালা বদল হলে শিকড় বেশিদূর যাবার আগেই অন্য দল ক্ষমতায় এসে যায়, এদের শিকড় বেশি দূর গজানোর আগেই হয়তো আবার ক্ষমতার পালাবদল হয়, ফলে সাধারণ মানুষ শান্তিতে থাকে। ক্ষমতা আকড়ে থাকার জন্য প্রশাসন ও পুলিশকে ব্যবহার করতে হয়, দীর্ঘ সময় ব্যবহারের ফলে পুলিশ ও প্রশাসনের মধ্যে বেপরোয়া ভাব চলে আসে, দুর্নীতি বৃদ্ধি পায়। সুষ্ঠু ভোট হলে জনগণের কাছে ভোটের জন্য যেতে হয়, দায়বদ্ধতা থাকে, সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো জনমুখী হয়, জনগণের মূল্যায়ন হয়। ছাত্র আন্দোলনের ফসল এ গণতন্ত্র রক্ষায় আগামী নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ হওয়া একান্ত প্রয়োজন। গত সংসদ নির্বাচনের আগে কুমিল্লা জেলা আনসার এডজুট্যান্ট একজন প্রভাবশালী মন্ত্রীর উপস্থিতিতে প্রকাশ্য জনসভায় ঘোষণা দিয়েছে আমরা শেখ হাসিনাকে আবার ক্ষমতায় আনতে বদ্ধপরিকর। একজন সরকারি কর্মকর্তার প্রকাশ্য জনসভায় এ ধরনের ভাষণ দেয়া চাকুরী বিধি পরিপন্থী ও দলান্ধতার প্রমাণ। আনসার, পুলিশ নির্বাচনে বড় ভূমিকা পালন করে। দীর্ঘ ১৫ বছরে প্রশাসনসহ বিভিন্ন স্তরে দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ প্রাপ্তরা বহাল থাকা অবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচন কতটুকু সম্ভব হবে। প্রশাসনকে ঢেলে সাজানোর জন্য ড. ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে গঠিত সরকারকে প্রয়োজনীয় সময় দিতে হবে। আমরা যতটুকু দেখেছি তত্ত¡াবধায়ক সরকারের আমলে তুলনা মূলক সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছিল। তাই আইন করে হলেও ভবিষ্যতের নির্বাচনগুলো তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে যেন হয়, জনগণ যেন নির্বিঘেœ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে সেই ব্যবস্থা প্রণয়নের জন্য বর্তমান অস্থায়ী সরকারের কাছে আমাদের দাবি। লেখকঃ অধ্যক্ষ ফুলগাঁও ফাযিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসা, লাকসাম, কুমিল্লা।