মনোহরগঞ্জের লক্ষনপুর বাজারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ১১টি দোকান ভস্মীভূত


নিজস্ব প্রতিনিধি\ কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার লক্ষনপুর পশ্চিম বাজারে মধ্যরাতে এক ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে পুড়ে গেছে ১১টি দোকান। গত শুক্রবার দিবাগত রাত প্রায় আড়াইটায় সংঘটিত অগ্নিকান্ডে অর্ধকোটি টাকার ক্ষতিসাধিত হওয়ার কথা জানান ব্যবসায়ীরা। ফায়ার সার্ভিসের দু’টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
বাজার ব্যবসায়ীরা জানান, শুক্রবার দিবাগত রাত প্রায় আড়াইটায় লক্ষণপুর পশ্চিম বাজারে আবুল কাসেমের চা দোকানে আগুন লাগে। বাজারে কর্তব্যরত নৈশ প্রহরী দোকানে আগুন দেখতে পেয়ে মসজিদের মাইকে প্রচার করলে বাজার ব্যবসায়ী ও আশপাশের লোকজন ছুটে এসে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। আগুনের লেলিহান শিখা মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়লে ওই দোকানে থাকা ১টি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়। এতে আগুন আরও ভয়াবহ রূপ নেয়, পরবর্তীতে পাশের দোকানে থাকা আরও ২/৩টি সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হলে আগুন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। পরে মনোহরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের দু’টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছলে ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় ঘন্টাব্যাপী চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
ব্যবসায়ীদের ভাষ্য অনুযায়ী, এর আগেই পুড়ে ছাই হয়ে যায় নুরুল ইসলামের চা দোকান, দিপুর ফার্মেসি, ইলিয়াস টেলিকম, ইলিয়াস স্টোর, সোহাগ অটো বাইক এন্ড ওয়ার্কসপ, বিসমিল্লাহ মেটাল, বাবুল ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপ, লক্ষণপুর ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপ, মা মনি ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপসহ ১১টি দোকান।
ইলিয়াস টেলিকম ও ইলিয়াস স্টোর এর স্বত্বাধিকারী ব্যবসায়ী ইলিয়াস হোসেন জানান, প্রবাস থেকে বাড়ি এসে গেল রমজানের আগে নতুন দোকান শুরু করেন তিনি। নিজের সামান্য পুঁজি ও স্থানীয় এনজিও থেকে লোন নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। তার দোকানে থাকা প্রায় ২৫টি এ্যান্ড্রয়েড মোবাইলসহ প্রায় ৬০টি মোবাইল ফোন, মোবাইল এক্সেসরিজ, মোবাইল সার্ভিসিং এর প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি, বৈদ্যুতিক পাখাসহ ইলেকট্রনিক্স সব মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ব্যবসার সকল মালামাল আগুনে পুড়ে যাওয়ায় কিস্তির টাকা পরিশোধ নিয়ে হতাশায় ভুগছেন তিনি।
সোহাগ অটো বাইক এর স্বত্বাধিকারী মো. সোহাগ বলেন, নিজে অসুস্থ থাকায় সেদিন দোকান খোলেননি। মধ্যরাতে খবর পেয়ে ছুটে এসে দেখেন দোকানে আগুন জ্বলছে। ব্রাক ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করার কথা জানান তিনি। চোখের সামনে আগুনে নিজ দোকানের মালামাল পুড়ে গেছে বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি।
এ বিষয়ে মনোহরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মাসুম মিয়া বলেন, ফায়ার সার্ভিসের দু’টি ইউনিট প্রায় ঘন্টাব্যাপী চেষ্টার পর স্থানীয়দের সহায়তায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এর মধ্যে প্রায় ১১টি দোকান পুড়ে যাওয়ার কথা জানান তিনি।
মনোহরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাহরিয়া ইসলাম বলেন, অগ্নিকান্ডের খবর আমরা পেয়েছি। খোঁজ খবর রাখছি। সাধ্যমতো ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থাকার চেষ্টা করা হচ্ছে। মনোহরগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ বিপুল চন্দ্র দে অগ্নিকান্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এদিকে, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা জামায়াতের সেক্রেটারী ড. সৈয়দ এ কে এম সরোয়ার উদ্দিন সিদ্দিকীর নেতৃত্বে জামায়াতের একটি প্রতিনিধিদল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন, মনোহরগঞ্জ উপজেলা জামায়াত মনোনীত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হামিদুর রহমান সোহাগ, মনোহরগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের আমির হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ নুরুন্নবী, সেক্রেটারী ফয়েজুর রহমান, সহকারি সেক্রেটারী মহিন উদ্দিন, লক্ষণপুর ইউনিয়ন আমির খায়রুল বাশার জাহান প্রমুখ।