বৃহস্পতিবার, ৩১শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

মনোহরগঞ্জ ও লক্ষনপুরে সড়কের ওপরই বসছে পশুর হাটঃ জনদুর্ভোগ চরমে

মনোহরগঞ্জ ও লক্ষনপুরে সড়কের ওপরই  বসছে পশুর হাটঃ জনদুর্ভোগ চরমে
১৪৪ Views

            আব্দুল গাফফার সুমন\ কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার হাসনাবাদ- নাথেরপেটুয়া সড়কের লক্ষণপুর বাজারে সড়কের উপর বসছে গরুর হাট। ব্যস্ততম এ সড়কটিতে গরুর হাট বসায় বাজারে আসা সাধারণ মানুষ, পথচারী ও যাত্রীরা চলাচলে দুর্ভোগে পড়ার অভিযোগ করেছেন। কর্তৃপক্ষের কোন হস্তক্ষেপ না থাকায়  নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বছরের পর বছর এ সড়কে এভাবেই বসছে পশুর হাট। জনদুর্ভোগ লাগবে সড়ক থেকে পশুর হাট সরাতে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা।

            সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, হাসনাবাদ-নাথেরপেটুয়া সড়কের লক্ষণপুর বাজারের অংশে সড়কের দু’পাশে হাতে রশি নিয়ে সারিবদ্ধভাবে গরুসহ  দাঁড়িয়ে আছেন ক্রেতা-বিক্রেতা, পাইকারসহ শতশত গরু ব্যবসায়ী। ব্যস্ততম এ সড়কটিতে গরুর হাট বসায় দেখা দিয়েছে জনদুর্ভোগ। গরু ব্যবসায়ী, পাইকার, ক্রেতা-বিক্রেতা, পথচারী, যানবাহন সবমিলিয়ে যেন সড়কটিতে লেজেগোবরে অবস্থা।

            স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সপ্তাহে ২দিন এ সড়কটির উপরেই বসে পশুর হাট। উপজেলার সবচেয়ে বড় পশুর হাট হিসেবেও এটি বেশ পরিচিত। উপজেলার তিনটি স্থায়ীভাবে ইজারাপ্রাপ্ত বাজারের মধ্যে এটি অন্যতম। সোম ও শুক্র সাপ্তাহিক হাটবারের দিনগুলোতেই এখানে পশুর হাট বসার কথা জানিয়েছেন বাজার ব্যবসায়ীরা। হাটবারে শতশত, ক্রেতা-বিক্রেতা পাইকারের হাকডাকে মুখরিত থাকে ওই সড়ক এলাকা। হাটবারে বিকাল তিনটার মধ্যেই ওই সড়কের প্রায় আধা কি.মি.জুড়ে জমে উঠে পশুর হাট। পাইকাররা দুর-দূরান্ত থেকে পিকআপ ভর্তি গরু নিয়ে আসে এ হাটে। হাটবারে ব্যস্ততম এ সড়কে পশুর হাট বসায় গরু ব্যবসায়ী ও ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড়ে এটি আরও জনাকীর্ণ হয়ে পড়ে। সড়কটির দু’পাশ থেকে আসা রিক্সা, অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, সিএনজি, প্রাইভেটকার, ট্রাক্টর, পিকআপ ভ্যানসহ সব ধরনের গাড়ি চলাচলে বিঘœ ঘটে। ক্রেতা বিক্রেতার ভিড়ে সড়কের উপর এ পশুর হাট কখনো কখনো যানজটের কারণও হয়।

            নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যবসায়ীরা জানান, সপ্তাহে দু’দিন শুক্রবার ও সোমবার এ সড়কের উপর বসে ভ্রাম্যমান হাট। সড়কের দু’পাশে সারিবদ্ধভাবে গরুসহ পাইকার ও ক্রেতা-বিক্রেতারা দাঁড়িয়ে থাকায় দোকান খোলা নিয়ে বিপাকে পড়ার কথা জানান তারা। হাট শেষে অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় পড়ে থাকা গরু-ছাগলের বর্জ্যে সংশ্লিষ্ট এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। সপ্তাহে দুইদিন রাস্তার উপর বিচ্ছিন্নভাবে গরুর হাট বসায় সড়কের দু’পাশে ব্যবসায়ীদের নিয়মিত বেচা কেনায় বিঘœ ঘটছে।

            ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, গরু ছাগলের বর্জ্যে সড়কটির লক্ষণপুর বাজার এলাকায় তৈরি হয় এক নোংরা পরিবেশ। শুক্রবারে সড়কের উপর গরুর হাট বসায় দোকানের সামনে গরু ছাগলের বর্জ্য পড়ে থাকায় দোকানে ক্রেতা সমাগম হয় না। ফলে ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা জানান। বাজার এলাকায় সড়কের উপর থেকে পশুর হাট সরাতে তারা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

            এ বিষয়ে লক্ষণপুর বাজার ইজারাগ্রহীতা মিজানুর রহমান এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, এখানে পশুর হাট বসার জন্য নির্দিষ্ট কোন জায়গা নেই। ১৩ লাখ টাকায় এ বাজারের ইজারা নেয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইজারায়ও পশুর হাটের জন্য নির্দিষ্ট কোন স্থানের নাম উল্লেখ করা নেই। বিগত সময়েও সড়কের উপরই পশুর হাটের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। তিনি বলেন, এ হাটে গরু ছাগল, পাইকার ও ক্রেতা-বিক্রেতার পর্যাপ্ত সমাগম হওয়ায় জায়গা সংকট ও বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় পাইকারদের সড়কেই দাঁড়াতে দেখা যায়। সড়কে জনদুর্ভোগ এর কথা স্বীকার করে তিনি সড়ক থেকে আশপাশে সরকারি কোন স্থানে গরুর হাট সরিয়ে নিতে প্রশাসনের সহযোগিতা চান।

            এদিকে উপজেলা সদরের মনোহরগঞ্জ বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, খোদ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনেই সড়কের উপর বসছে গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগীর হাট। সেখানেও একই কায়দায় সড়ক দখল করে মিলছে পশু পাখি ও তরকারির হাট। বাজার এলাকায় পর্যাপ্ত সরকারি খাস জমি থাকলেও বিগত দিনে সড়ক থেকে পশুর হাট ও তরকারির হাট নিরসনে কর্তৃপক্ষকে কোন ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি।

            এ বিষয়ে কথা হলে মনোহরগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী কমিটির সভাপতি মাসুদুল আলম বাচ্চু বলেন, বাজারের এ সমস্যা দীর্ঘদিনের। বাজারের বিভিন্ন গলিতে অটোরিকশা অপরিকল্পিতভাবে দাঁড়িয়ে থাকা, সড়কের উপর পশুর হাট ও তরকারির হাট বসায় এখানে প্রায়ই যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে বাজার এলাকায় তৈরি হয় জনদুর্ভোগ। সমস্যা নিরসনে বাজার ব্যবসায়ী ও প্রশাসনের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের কথা জানান। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গাজালা পারভীন রুহীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, এ উপজেলায় ৩টি স্থায়ী পশুর হাট ও ১৭টি অস্থায়ী পশুর হাট রয়েছে। স্থায়ী পশুর হাটগুলোর ইজারা ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে, বাকী ১৭টি অস্থায়ী পশুর হাটের ইজারা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আসন্ন ঈদুল আযহা উপলক্ষে স্থায়ী, অস্থায়ী মিলে উপজেলার মোট ২০টি স্পটে পশুর হাট বসার অনুমতি রয়েছে।

            লক্ষণপুর বাজারে সড়কের উপর পশুর হাট বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জনদুর্ভোগ তৈরি করে সড়কে পশুর হাট বসার কোন সুযোগ নেই। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে সরেজমিন পরিদর্শন সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Share This