মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে আগ্রহী হলে ১৬টি ফুল ফ্রি বৃত্তি সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন!

            ষ্টাফ রিপোর্টার\ বিশ্বের অসংখ্য শিক্ষার্থীদের কাছে বৃত্তি নিয়ে পড়াশোনার জন্য পছন্দের তালিকার শীর্ষে আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের অগণিত শিক্ষার্থী বৃত্তি নিয়ে এই দেশে পড়তে যান। বিশ্বের বড় বড় প্রতিষ্ঠান যেমন গুগল, অ্যান্ড্রয়েড, অ্যাপল, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব, মেটা, এয়ারবাস, বোয়িং, ওয়ালমার্ট ও অ্যামাজন আছে। যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা শেষে ইন্টার্নশিপের মাধ্যমে অনেকেই এসব প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগও পেয়ে যান। এ কারণে অনেকেই এখন পড়াশোনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকেই বেছে নিচ্ছেন।

            বিদেশি শিক্ষার্থীরা দেশটির প্রায় পাঁচ হাজার ফুল ফ্রি স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারেন। স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি প্রোগ্রামে বিদেশি শিক্ষার্থীদের এসব বৃত্তি দেয়া হয়। এ ছাড়া দেশটিতে বিনিময় প্রোগ্রামে শতাধিক বৃত্তি আছে। ফুল ফ্রি বৃত্তির আওতায় নিজ দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্র আসা-যাওয়ার বিমান টিকিট, আবাসন, খাবার, মাসিক ভাতা, ফিসা ফি, টিউশন ফি ও স্বাস্থ্য সুবিধা পাওয়া যায়। এসব বৃত্তি পাওয়ার জন্য মোটিভেশন লেটার, রেকমেন্ডেশন লেটার ও গবেষণা প্রস্তাব মুখ্য ভূমিকা পালন করে। তাই বৃত্তি পেতে এসব বিষয়ে মনোযোগী হতে হবে। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য নিম্নে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি ফুল ফ্রি স্কলারশিপের তথ্য তুলে ধরা হলো।

১. ফুলব্রাইট স্কলারশিপ:

এই বৃত্তি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের একটি ফুল ফ্রি স্কলারশিপ। স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি প্রোগ্রামে বিদেশি শিক্ষার্থীদের এই বৃত্তি দেয়া হয়। ফুলব্রাইট বৃত্তির সুবিধার মধ্যে রয়েছে যাতায়াত ভাতা, শিক্ষাদান ও সংশ্লিষ্ট একাডেমিক ফি, মাসিক বৃত্তি, বইপত্র ক্রয়ের ভাতা, ভিসা ফি ও স্বাস্থ্যবীমা।

            বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য প্রায় পাঁচ হাজার ফুল ফ্রি স্কলারশিপ ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।

২. ফুলব্রাইট স্কলার প্রোগ্রাম:

এক বছর মেয়াদি এই বৃত্তি স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি প্রোগ্রামে বিদেশি শিক্ষার্থীদের এই বৃত্তি দেয়া হয়। ফুলব্রাইট স্কলার প্রোগ্রাম সুবিধার মধ্যে রয়েছে যাতায়াত ভাতা, গবেষণা ভাতা, মাসিক বৃত্তি, ভিসা ফি ও স্বাস্থ্যবিমা। এই বৃত্তিসংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য এই ওয়েবসাইট থেকে জানা যাবে।

৩. হিউবার্ট এইচ হামফ্রে ফেলোশিপ:

হিউবার্ট এইচ হামফ্রে ফেলোশিপ এক বছর মেয়াদি ও এটি সরকারি ও বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত পেশাজীবীদের দেয়া হয়। হামফ্রে কর্মসূচি প্রয়াত মার্কিন সিনেটর ও ভাইস প্রেসিডেন্ট হিউবার্ট এইচ হামফ্রের স্মৃতি ও কৃতিত্বের প্রতি সম্মান জানাতে ১৯৭৮ সালে চালু করা হয়।

এই ফেলোশিপের আওতায় নির্ধারিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পূর্ণ টিউশন ফি দেওয়া হয়। প্রয়োজন হলে প্রাক্-একাডেমিক ইংরেজি ভাষা প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এ ছাড়া জীবনযাত্রার ব্যয় ভাতা; এককালীন সেটলিং ভাতা; দুর্ঘটনা ও অসুস্থতাজনিত ব্যয় ভাতা; বই কেনার খরচ; কম্পিউটার কেনার জন্য এককালীন ভাতা; বিমান ভ্রমণ ভাতা (প্রোগ্রামের জন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে আন্তর্জাতিক ভ্রমণ ও প্রয়োজনীয় প্রোগ্রাম ইভেন্টে অভ্যন্তরীণ ভ্রমণ) ও ফেলোশিপের জন্য প্রয়োজনীয় পেশাদার উন্নয়ন ভাতা (যেমন ফিল্ড ট্রিপ, পেশাদার পরিদর্শন ও সম্মেলন) দেয়া হয়।

 

৪. স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি স্কলারশিপ:

এটি একটি বহুল পরিচিত বৃত্তি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাইট হেনেসি স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি স্কলারশিপ ১০০টি ফুল ফ্রি বৃত্তির ঘোষণা দিয়েছে। স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি প্রোগ্রামে এই বৃত্তি দেয়া হবে। এই বৃত্তির আওতায় যাতায়াত ভাতা, ভ্রমণ ভাতা, টিউশন ফি ও জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহের মাসিক ভাতা দেওয়া হয়।

৫. ইয়েল ইউনিভার্সিটি স্কলারশিপ:

এই বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি পর্যায়ে এই বৃত্তি দেওয়া হয়। এই বৃত্তির আওতায় যাতায়াত ভাতা, টিউশন ফি, আবাসন, খাবার, ভ্রমণ ভাতা ও প্রথম বছরে দুই হাজার ডলারসহ স্বাস্থ্যবিমার সুযোগ দেয়া হয়।

৬. বিল গেটস স্কলারশিপ:

এক শিাবর্ষে তিন শতাধিক বিদেশি শিক্ষার্থীকে বিল গেটস স্কলারশিপ দেয়া হয়। এই বৃত্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনাসহ সব ধরনের খরচ দেয়া হয়।

৭. ইউনিভার্সিটি অব নিউ হ্যাভেন স্কলারশিপ:

ইউনিভার্সিটি অব নিউ হ্যাভেন প্রতিবছর বিদেশি শিক্ষার্থীদের ফুল ফ্রি বৃত্তি দেয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু স্নাতকোত্তর পর্যায়ে এবার বৃত্তি দেয়া হবে।

৮. এএইউডবিøউ ইন্টারন্যাশনাল ফেলোশিপ:

এএইউডবিøউ ইন্টারন্যাশনাল ফেলোশিপ প্রোগ্রাম একটি ফুল বৃত্তি। আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব ইউনিভার্সিটি উইমেন এই বৃত্তি দেয়। নারীদের জন্য এটি দারুণ একটি বৃত্তি। স্নাতকোত্তর, ডক্টরাল, পোস্ট ডক্টরাল পর্যায়ে এই বৃত্তি দেয়া হয়। এই বৃত্তির আওতায় স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ২০ হাজার ডলার, ডক্টরাল পর্যায়ে ২৫ হাজার ডলার ও পোস্ট ডক্টরাল পর্যায়ে ৫০ হাজার ডলার অনুদান দেয়া হয়।

৯. বোস্টন ইউনিভার্সিটি স্কলারশিপ:

এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বোস্টন ইউনিভার্সিটি ট্রাস্টি স্কলারশিপ ও বোস্টন ইউনিভার্সিটি প্রেসিডেন্সিয়াল স্কলারশিপ নামে দুই ধরনের বৃত্তি দেওয়া হয়। ট্রাস্টি স্কলারশিপে টিউশন ফি ফ্রি ও প্রেসিডেন্সিয়াল স্কলারশিপে বার্ষিক ২৫ হাজার ডলার অনুদান দেয়া হয়। স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি পর্যায়ে এই বৃত্তি দেয়া হয়।

১০. হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি স্কলারশিপ:

হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি এমবিএ স্কলারশিপ যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় বৃত্তিগুলোর মধ্যে অন্যতম। এমবিএ প্রোগ্রাম এই বৃত্তি দেয়া হয়। দুই বছর মেয়াদি এই বৃত্তির আওতায় ৭৫ শতাংশ টিউশন ফি, ভ্রমণ ও আবাসন ভাতা দেয়া হয়।

১১. গুগল স্কলারশিপ:

গুগল যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দিয়ে থাকে। ২০২২ সালে এই প্রতিষ্ঠান প্রায় এক লাখ বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য বৃত্তির ঘোষণা দিয়েছে।

১২. জর্জিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি স্কলারশিপ:

আটলান্টার জর্জিয়া ইউনিভার্সিটি স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি পর্যায়ে বিদেশি শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেয়।

এ ছাড়া বিদেশি কলেজ পর্যায় এবং স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি শিক্ষার্থীদের শিক্ষাবৃত্তি দেয়া হয়। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

সুসি স্টুডেন্ড লিডারশিপ প্রোগ্রাম। ছয় মাস মেয়াদি এই প্রোগ্রামে বিনা মূল্যে পড়াশোনা করা যায়। নারী ও পুরুষ উভয়েই এই প্রোগ্রামের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এই প্রোগ্রামে আবেদনের জন্য আইইএলটিএস/ টোফেল স্কোরের প্রয়োজন নেই। এই প্রোগ্রামের আওতায় ভিসা ফি, ভ্রমণ ভাতা, মাসিক ১ হাজার ৫০০ ডলার বৃত্তি, খাবার, আবাসন ও যোগাযোগের খরচ দেওয়া হয়। ইউপিজি লিডারশিপ প্রোগ্রাম: বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ইউপিজি (ইউনাইটেড পিপল গেøাবাল) লিডারশিপ প্রোগ্রামের আওতায় বৃত্তি দেয়া হয়। ৩০টি দেশ থেকে মোট ৬০ জনকে এই বৃত্তি দেয়া হয়।

কমিউনিটি সল্যুশনস এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম:

চার মাস ফেলোশিপসহ এক বছর মেয়াদি এই প্রোগ্রামের আওতায় ভিসা সাপোর্ট, নিজ দেশ থেকে যাতায়াতে বিমানের টিকিট, মাসিক ভাতা এবং দুর্ঘটনা ও স্বাস্থ্যবিমা দেয়া হয়। এই প্রোগ্রামে আবেদনের জন্য আইইএলটিএস/ টোফেল স্কোরের প্রয়োজন নেই।

হ্যানসেন লিডারশিপ ইনস্টিটিউট প্রোগ্রাম:

এই ইনস্টিটিউট বিদেশি শিক্ষার্থীদের তিন সপ্তাহব্যাপী এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের সুযোগ দেয়। এই প্রোগ্রামের আওতায় আবাসন, স্বাস্থ্যবিমা, পরিবহনের সুবিধা, প্রোগ্রামের সরঞ্জাম, খাবার, ভিসা ফি ও নিজ দেশ থেকে যাতায়াতে বিমান টিকিট দেয়া হয়।

এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের মায়ামি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্ট্যাম্প স্কলারশিপ’, হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কলারশিপসহ আরও অনেক বৃত্তি আছে।

সৌজন্যে: প্রথম আলো