
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ২০শে জানুয়ারি সোমবার ডোনাল্ড ট্রাম্প-এর শপথ

১২৪ Views
জান্নাতুল ফেরদাউস পুষ্প।। ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম মেয়াদে নির্বাচিত হয়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েই ‘ওবামা কেয়ার’ বাতিলে নির্বাহী আদেশ জারি করেছিলেন। এবার দ্বিতীয় মেয়াদে ফিরে এসেও তিনি প্রথম দিনেই নির্বাহী আদেশে তাঁর একাধিক প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের কথা বলেছেন ইতোমধ্যেই। এ ব্যাপারে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন যে ট্রাম্পের এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতি এবং ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। প্রথমেই গণপ্রত্যাবাসন: ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিবাসন নীতিকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম দিনের প্রধান অ্যাজেন্ডা ঘোষণা করেছেন। নিউইয়র্কে এক সমাবেশে তিনি বলেছিলেন, ‘প্রথম দিনেই আমি মার্কিন ইতিহাসের বৃহত্তম গণপ্রত্যাবাসন কর্মসূচি শুরু করব। এর মাধ্যমে অপরাধীদের দেশ থেকে বের করে দেওয়া হবে’ বলে তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন।
কিন্তু ট্রাম্পের এই প্রতিশ্রুতি অভিবাসীদের অধিকার রক্ষাকারী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ইতোমধ্যে বেশ একটা উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। তারা বলছেন, এমন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যেমন জটিল, তেমনি মানবিক দিক থেকেও বিতর্কিতই বটে! জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব: ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের অধিকার বাতিল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১৪তম সংশোধনী অনুযায়ী, ‘যদি কেউ মার্কিন ভূমিতে জন্ম নেয়, তিনি দেশটির নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকার রাখেন।’ ট্রাম্প এই আইন পরিবর্তন করার ঘোষণা দিয়ে বলেছিলেন, ‘প্রথম দিনেই আমি এই অধিকার বাতিল করব।’ তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি বাস্তবায়নে ব্যাপক আইনি বাধার সম্মুখীন হতে হবে তাঁকে। ক্যাপিটল হিল দাঙ্গায় অভিযুক্তদের সাধারণ ক্ষমা: এছাড়া, ট্রাম্পের আরও একটি বিতর্কিত প্রতিশ্রুতি হলো ২০২১ সালের ৬ই জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে হামলায় অভিযুক্তদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা। তিনি বলেছেন, ‘আমি প্রথম দিনেই এই বিষয়টি বিবেচনা করব।’ টাইম ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম নয় মিনিটের মধ্যেই আমি এ বিষয়ে কাজ শুরু করব।’ তবে সমালোচকেরা বলছেন, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ আইন ও বিচারব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা কমিয়ে দিতে পারে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান: দ্বিতীয় বারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ট্রাম্পের সবচেয়ে সাহসী প্রতিশ্রুতির মধ্যে একটি ছিল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করা। তিনি একটি নির্বাচনী প্রচারণায় বলেছিলেন, ক্ষমতায় যাওয়ার আগেই তিনি এই যুদ্ধ শেষ করবেন।
কমলা হ্যারিসের সঙ্গে এক বিতর্কে তিনি বলেন, ‘এই যুদ্ধের দ্রুত সমাধান করা হবে। আমি জানি, জেলেনস্কি এবং পুতিন কীভাবে কাজ করেন। তাদের দুজনের সঙ্গেই আমার ভালো সম্পর্ক এবং তারা দুজনই আমাকে সম্মান করেন; বাইডেনকে নয়।’ বিভিন্ন ক্ষেত্রে শুল্ক আরোপ: ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, মেক্সিকো ও কানাডার সব ধরনের পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন। গত বছরের ২৫শে নভেম্বর ট্রুথ সোশ্যালের এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, ‘২০শে জানুয়ারি, প্রথম দিনের নির্বাহী আদেশগুলোর একটি হবে মেক্সিকো ও কানাডার সব পণ্যে শুল্ক আরোপ করা। এটি আমার প্রথম দিনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ।’ তবে অর্থনীতিবিদেরা সতর্ক করেছেন, এমন পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ চালিত গাড়ি–সংক্রান্ত: বিভিন্ন অর্থনৈতিক ইস্যু নিয়ে দেওয়া প্রতিশ্রুতিতে ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, তিনি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিনেই বাইডেন প্রশাসনের ‘ইলেকট্রিক ভেহিক্যাল (ইভি) ম্যান্ডেট’ বাতিল করবেন। হিউস্টনে নির্বাচনী প্রচারণায় ট্রাম্প বলেন, আমি ক্ষমতায় আসার প্রথম দিনেই ‘কুটিল জো’–এর ইলেকট্রিক ভেহিক্যাল ম্যান্ডেট বাতিল করবো। আর এই ম্যান্ডেটটি হলো বাইডেন প্রশাসনের একটি নির্দেশনা।
যেখানে বলা হয়, ২০৩০ সালের মধ্যে নতুন বিক্রি হওয়া ৫০ শতাংশ গাড়ি ও ট্রাকে কোনো সাইলেন্সার থাকবে না। অর্থাৎ এসব গাড়ি ও ট্রাক হবে ধোঁয়াহীন। পরিবেশ সংরক্ষণ সংস্থা (ইপিএ) জানিয়েছে, বিদ্যুচ্চালিত গাড়ি এই লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হতে পারে। যদিও বাইডেন প্রশাসন কাউকে বাধ্যতামূলক এ ধরনের গাড়ি কিনতে বলেনি। তবে ট্রাম্প এই উদ্যোগকে ‘ইলেকট্রিক ভেহিক্যাল ম্যান্ডেট’ বা ‘বৈদ্যুতিক গাড়ির ম্যান্ডেট’ বলে সমালোচনা করেছিলেন। দেশের জ্বালানি খাত: ডোনাল্ড ট্রাম্প জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদন বাড়ানোর প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। ফক্স নিউজে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি আমেরিকায় আরও বেশি জ্বালানি তেল উত্তোলন করব। এতে জ্বালানি খরচ কমবে।’ তবে পরিবেশবাদীরা বলছেন, এ ধরনের পদক্ষেপ জলবায়ু পরিবর্তনের সংকটকে আরো তীব্র করতে পারে। ট্রান্সজেন্ডার অধিকার: প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ট্রান্সজেন্ডার নারীদের অধিকার সীমিত করতে চান। তিনি ট্রান্সজেন্ডার নারীদের খেলায় অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমি প্রথম দিনেই ট্রান্সজেন্ডারদের ওপর বাইডেনের আরোপিত সব নীতি বাতিল করব।’
জেন্ডার–অ্যাফার্মিং কেয়ার: লিঙ্গ পরিচয় নিশ্চিত করা ও ট্রান্সজেন্ডারদের চিকিৎসা সহায়তা দেওয়ার উদ্দেশ্যে বাইডেন সরকারের উদ্যোগ ‘জেন্ডার-অ্যাফার্মিং কেয়ার’ বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। কিন্তু ট্রাম্পের এই ঘোষণা ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে এলজিবিটিকিউ প্লাস সম্প্রদায়ের মধ্যে। মেড-ইন-আমেরিকা উদ্যোগ: ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার গাড়িশিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করার বিষয়েও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, ‘আমার জন্য একটি ভোট মানে আমার নেতৃত্বে আমেরিকার অটোমোবাইল শিল্প পুনরায় শীর্ষস্থানে যাবে। এটি নতুন সুযোগ তৈরি করবে আমেরিকান শ্রমিকদের জন্য।‘ তাছাড়া, প্রথম কর্মদিবসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের ঘোষণা উচ্চাভিলাষী এবং বিতর্কিতই বটে! তবে এসব পরিকল্পনা কতটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে, তা নিয়ে বেশ সংশয় রয়েছে। এ ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াতে পারে আইনি বাধা, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং জনমত তার নতুন প্রশাসনের সামনে। মূলতঃ ট্রাম্পের অভিষেকের আগেই সীমান্তে এবং অন্যান্য ক্ষেত্রেও নানা তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে। আর ধারণা করা হচ্ছে যে, সামগ্রিকভাবে আমেরিকার প্রায় প্রতিটি খাতেই ব্যাপক সংস্কার আনতে পারেন প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার শপথ গ্রহণ এবং দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই সে সব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জোরালোভাবে তাঁর পাশে থাকছেন কংগ্রেস- গণমাধ্যমকে জানালেন সেনেট মেজরিটি লিডার জন থুন। Ref: thikananews, Photo Courtesy: CNN