
যে কোন মূহুর্তে ধ্বসে প্রাণহানির আশংকা নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে সাড়ে চার লক্ষাধিক জনগণের স্বাস্থ্য সেবা

সাইফুল ইসলাম॥ নাঙ্গলকোটের সাড়ে চার লক্ষাধিক জনগণের স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর প্রধান ভবনটি খুব ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ভবনটির প্রবেশ মুখ থেকে শুরু করে ভবনের ভিতরের নিচতলাসহ দ্বিতীয় তলায় ভবনের বিভিন্ন পিলারের ইট-সুরকী খসে পড়ে ফাটল সৃষ্টি হয়ে রড বের হয়ে যাওয়া, ভবনের বিভিন্ন কক্ষের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে ভবনটি খুব ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটিতে স্বাস্থ্যসেবা পরিচালিত হওয়ায় ভবনটি ধ্বসে যে কোন মূহুর্তে প্রাণহানির আশংকা করছেন হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীরা। তারা প্রাণহানি থেকে বাঁচতে ভবনটি থেকে সেবা কার্যক্রম অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানান।
ভবনটিতে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, আন্তঃবিভাগ, ডাক্তার, নার্স ও কর্মচারীদের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় নিয়মিত দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। এছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডরমেটরীসহ ১০টি আবাসিক ভবন ও প্রশিক্ষণ ভবনের দ্বিতীয় তলার দু’টি কক্ষও জরাঝীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের একটি টিম গত মাসে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটির বিভিন্ন অংশ সরেজমিনে পরিদর্শন করে ভবনটি ভেঙ্গে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করেছেন বলে জানা যায়। বর্তমানে নতুন ভবন নির্মাণের বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে বলে জানান, কুমিল্লা বিভাগ স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী (এইচইডি) মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ।
সরেজমিনে ভবনটি ঘুরে দেখা যায়, ভবনটির প্রবেশ মুখে হাতের ডানপাশের মূল পিলারের ইট-সুরকি বের হয়ে রড বের হয়ে আছে। প্রবেশমুখ থেকে ভিতরে ঢুকতেই আরো দু’টি পিলারের ইট-সুরকি খসে পড়ে রড বের হয়ে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকতে দেখা যায়। দ্বিতীয় তলার বিভিন্নস্থানে ইট-সুরকি খসে পড়ে পিলারে ফাটল সৃষ্টিসহ শিশু ওয়ার্ডের বারান্দার ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘদিন থেকে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকলেও ভবনটিতে জরুরী বিভাগ, আন্তঃবিভাগ, ল্যাব, ফার্মেসীসহ প্রশাসনিক সকল কার্যক্রম ঝুঁকিপূর্ণভাবে পরিচালিত হচ্ছে। ভবনটি যে কোন ধ্বসে পড়ে প্রাণহানির আশংকা রয়েছে বলে জানান, হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীরা। এছাড়া ভবনটির আন্তঃবিভাগের রোগীদের কক্ষগুলোও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকতে দেখা যায়। এদিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান ভবন ঝুঁকিপূর্ণের পাশাপাশি একটি ডরমেটরীসহ ১০টি আবাসিক ভবনও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকতে দেখা যায়। এছাড়া প্রশিক্ষণ ভবনের দ্বিতীয় তলার দু’টি কক্ষও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকতে দেখা যায়।
জানা যায়, ১৯৯৬ সালে নাঙ্গলকোটের তৎকালীন বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য ডাঃ এ কে এম কামারুজ্জামান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান ভবনসহ আবাসিক ভবন উদ্বোধনের মাধ্যমে নাঙ্গলকোটের জনগণের স্বাস্থ্যসেবার পথ সুগম করেন। বিভিন্ন সময়ে ভবনটি মেরামতের মাধ্যমে কোনভাবে ভবনটি ব্যবহারের উপযোগী রাখা হয়।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা পৌরসভার হরিপুর গ্রামের মফিজুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালের প্রবেশমুখ এবং ভিতরের বিভিন্ন অংশে ফাটল সৃষ্টি হয়ে ভবনটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ভবনটি ধ্বসে যে কোন মূহুর্তে প্রাণহানির আশংকা রয়েছে।
স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কুমিল্লা বিভাগের সহকারি প্রকৌশলী (পুর) সাইফুল ইসলাম বলেন, ভবনটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ভবনটির ঝুঁকিপূর্ণের বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগে আমাদের প্রেরিত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে গত ডিসেম্বর মাসে মন্ত্রণালয়ের একটি ডিজাইন টিম এসে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। তারা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগে নতুন ভবন নির্মাণের সুপারিশসহ প্রতিবেদন দিয়েছেন বলে জানতে পারছি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ বেলায়েত হোসেন ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ স্বীকার করে বলেন, স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের একটি টিম ভবনটি সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন। তারাই ভবনটির ঝুঁকিপূর্ণের বিষয়টি বলতে পারবেন।
কুমিল্লা বিভাগীয় স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবন ঝুঁকিপূর্ণের বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দেয়ার পর একটি টিম সরেজমিনে ভবনটি পরিদর্শন করে মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ প্রেরণ করেছে। নতুন ভবন নির্মাণের বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে।