শনিবার, ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

রমজানের ফজিলত: করণীয় ও বর্জনীয়

রমজানের ফজিলত: করণীয় ও বর্জনীয়

            আদিয়াত উল্লাহ\ একটি হিজরী সন শেষে মুসলমানদের মাঝে ফিরে এলো রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস রমজান। হিজরী সনের মাসের ক্রমানুসারে রমজান ষষ্ঠ মাস। সিয়াম সাধনার এ মাস মুমিনদের জন্য অতি ফজিলতপূর্ণ একটি মাস। এ মাসে আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক নেক কাজের এত বেশি প্রতিদান দেন যা অন্য কোনো মাসে দেন না। এ মাসে আল্লাহ তায়ালা মুমিনদের জন্য একমাস রোজা রাখা ফরজ করে দিয়েছেন। রমজান মাসে রোজা রাখা ইসলামের প্রধান বুনিয়াদগুলোর একটি বুনিয়াদ। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমাদের জন্য সিয়াম ফরজ করা হয়েছে যেমনিভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরজ করা হয়েছিল যেন তোমরা সফলকাম হতে পার।’ (সুরা বাকারা : ১৮৩)। এ মাসকে আল্লাহ তায়ালা কুরআন নাজিলের মাধ্যমে অন্য সকল মাস থেকে অধিকতর সম্মানিত করেছেন। এ মাসের এমন একটি রাত রয়েছে যার মর্যাদা হাজার মাসের চেয়ে বেশি, সেই রাতটি হলো লাইলাতুল কদর। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় আমি তা নাজিল করেছি কদরের রাতে। আর আপনি কি জানেন কদরের রাত কি? কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। এ রাতে ফেরেশতাগণ ও রূহসমূহ নাজিল হয় তাদের রবের অনুমতিক্রমের প্রত্যেক দিক থেকে। সেখানে সূর্যোদয় পর্যন্ত শান্তি বর্ষিত হতে থাকে।’( সুরা কদর : ১-৫)।

            রমজান মাসে কোরআন নাজিল হওয়ার কথা উল্লেখ করে এ মাসের শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা এবং এ মাসে রোজা পালনের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘রমজান মাস তো এমন মাস যাতে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে যা মানবজাতির জন্য হেদায়েতস্বরূপ এবং হেদায়াতকারী ও পার্থক্যকারী নিদর্শনাবলি দ্বারা পরিপূর্ণ। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে এ মাসকে পাবে সে যেন রোজা রাখে।’ (সুরা বাকারা : ১৮৫)।

            রমজান মাসে রোজা রাখা ইসলামের পাঁচ বুনিয়াদের মধ্যে একটি। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘ইসলাম পাঁচটি বিষয়ের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে : এ মর্মে সাক্ষ্য দেয়া যে আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই এবং নিশ্চয় হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তায়ালার বান্দা ও রাসুল, সালাত কায়েম করা, জাকাত আদায় করা, জিলহজ মাসে হজ পালন করা এবং রমজানের রোজা পালন করা।’ (বুখারী ও মুসলিম) রমজান মাসে ঈমানের সাথে রোজা পালন করার রয়েছে বিশাল সাওয়াব, ফজিলত ও আল্লাহ তায়ালার নিজ হাতে প্রতিদান দানের প্রতিশ্রæতি। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমান ও সাওয়াবের আশায় রমজান মাসের রোজা রাখবে তার পূর্ববর্তী সকল সগিরা গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।’ (বুখারী ও মুসলিম) হাদীসে কুদসীতে তিনি বলেন, আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘রোজা আমারই জন্য এবং আমি নিজেই এর প্রতিদান দেব।’

            রমজান মাসের রয়েছে ফজিলতের এক বিশাল ভান্ডার। সেহরি ও ইফতারে পরিবারের সকল সদস্য কিংবা বর্ণ-শ্রেণি নির্বিশেষে একটি এলাকার সকল মুসলমান যখন এক দস্তরখানে বসে একত্রে খাদ্য গ্রহণ করেন তখন ইসলামি ভ্রাতৃত্বের যে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয় তা হজ্জ ব্যতিত বছরের অন্য কোনো সময়ে দেখা যায় না। আবার সারাদিনের রোজা শেষে রাত্রিতে তারাবীহর নামাজে এক খতম বা দুই খতম কুরআন তেলাওয়াত মন-প্রাণ সবকিছু জুড়িয়ে দেয়। হাফেজে কোরআনদের কণ্ঠে নামাজে এক খতম কোরআন তেলাওয়াত শোনার এমন সুযোগ বছরের আর কোনো মাসেই পাওয়া যায় না। রমজান মাসে ফজরের নামাজের সময়ও প্রচুর মুসল্লির সমাগম ঘটে। এছাড়া রমজান মাসের প্রতিটি ইবাদতের জন্য রয়েছে বিশাল সাওয়াব ও আখেরাতে বিরাট পুরস্কার। আল্লাহ তায়ালা এ মাসের প্রত্যেক ইবাদতেই এত বেশি প্রতিদান যা অন্য কোনো মাসের ইবাদতে দেন না। এ মাসে প্রতিটি ইবাদতে বেশি বেশি প্রতিদান রয়েছে । রমজান মাসের অন্যতম ফজিলত হলো যে, এ মাসে জান্নাতের আটটি দরজাই খুলে দেয়া হয়। প্রত্যেক দরজাই তার মধ্য দিয়ে জান্নাতে প্রবেশের জন্য মুমিনদের আহ্বান করতে থাকে। অন্যদিকে জাহান্নামের সবগুলো দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। বছরের এ মাসেই কেবল মৃত মুমিনদের কবরের আযাব বন্ধ রাখা হয়। শয়তানকে জাহান্নামে বন্দী করে রাখা হয়। ফলে মানুষের মন ও অন্তর তখন ইবাদতের জন্য পরিপূর্ণ অবসর পায়। প্রকৃত মুমিনগণ এজন্য এ মাসকে নিজেদের আমলনামা নেক আমলে পরিপূর্ণ করার এক সুবর্ণ সুযোগ বলে মনে করেন। এজন্য এ মাসের ফরজ, সুন্নাত ও নফল আমল সম্পর্কে বিস্তারিত জানা একজন মুমিন মুসলমানের জন্য অতি জরুরি।

            রমজান মাসে ফরজ আমল একটি, আর তাহলো রোজা পালন। পুরো মাসজুড়ে এ রোজা পালন করতে হয়। এর কোনো একটিও ইচ্ছাকৃতভাবে ছেড়ে দিলে সারাজীবন রোজা রেখেও এর ক্ষতিপূরণ সম্ভব নয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমাদের জন্য সিয়াম ফরজ করা হয়েছে, যেমনিভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরজ করা হয়েছিল, যেন তোমরা সফলকাম হতে পার।’ (সুরা বাকারা : ১৮৩)।              সকল প্রকার অন্যায়, অনাচার, পাপাচার ও অবিচার থেকে নিজেকে রক্ষা করা এবং অন্যদেরও দূরে রাখা; কারও সঙ্গে দুর্ব্যবহার না করা; সবার সঙ্গে ক্ষমা ও দয়ার আচরণ করা; আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ-খবর নেয়া ও তাদের সাহায্য-সহযোগিতা করা; গরিব আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীদের সেহরি ও ইফতারের ব্যবস্থা করা; মা-বাবা, ভাই,-বোন, স্ত্রী-সন্তানদের সামর্থ্যমতো নতুন জামা-কাপড়ও বিভিন্ন উপঢৌকন দেয়া রমজানের অতি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ ও মাহাত্ম্যপূর্ণ ইবাদত।

            রমজান মাসে সকল প্রকারের পাপাচার, অবিচার, গুনাহের কাজ ও মাকরুহ কাজসমূহ বর্জনীয়। এ মাসে দিনের বেলায় সকল প্রকার পানাহার ও কামাচারও নিষিদ্ধ।

            মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে রমজান মাসের ফজিলত বুঝার এবং রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত লাভের তৌফিক দান করুন, আমিন।

Share This

COMMENTS