রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় ৩ বছরের সেতুর কাজ ২৩ বছরেও শেষ হয়নি ৫টি গ্রামের মানুষের যাতায়াতে চরম ভোগান্তি
নিজস্ব প্রতিনিধি॥ কুমিল্লার সাবেক দাউদকান্দি বর্তমান তিতাস উপজেলার নারান্দিয়া ইউনিয়নের নয়াচর গ্রামের খালের ওপর সেতুটির নির্মান কাজ ২৩ বছরেও শেষ হয়নি। ২০০১ সালে বিএনপি জোট সরকারের সময় সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হলেও সরকার পরিবর্তনের প্রায় ২৩ বছরে শেষ হয়নি সেতুর কাজ। ফলে অর্ধ-নির্মিত সেতুর উভয়পাশে রাস্তা নির্মাণের টেন্ডার হলেও ঠিকাদার কাজ শুরু না করায় শেষ হয়েছে মেয়াদ। নতুন সেতু নির্মাণ না হওয়ায় এবং উভয়পাশে রাস্তা না থাকায় নারান্দিয়া ও ভিটিকান্দি ইউনিয়নের প্রায় ৫টি গ্রামের মানুষের যাতায়াতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, তিতাসের নয়াচর খালের উপর অর্ধ-নির্মিত সেতুর কাজ শেষ না করে আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতায় এসে উভয়পাশের রাস্তার কাজ করেছে। ফলে ৫ গ্রামবাসীর ভোগান্তি রয়ে গেছে। রায়পুর আসমানিয়া বাজার সড়ক থেকে মেকাডম পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ কাজ হয়েছে। এরপর গত ৪ মাস যাবৎ এ অংশের কাজ বন্ধ রয়েছে।
পরের এক কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ শুরু করেনি ঠিকাদার। কোনো কাজ ছাড়াই প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। খলিলাবাদ বারামবাড়ি খালের উপর ২০০১ সালে প্রায় ২ কোটি টাকায় সেতুটি নির্মাণে টেন্ডার আহ্বান করা হয়। কাজটি পান মেসার্স এসএন এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান।
ঠিকাদার সেতুর চারটি পিলারের নির্মাণ কাজ শেষ করার পর সরকার পরিবর্তন হলে কাজটি বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে দেড় কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন এ পথের লোকজন ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করে।
উপজেলা প্রকৌশলী অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০০১ সালে বিএনপি জোট সরকারের সময় প্রায় ২ কোটি টেন্ডারে সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। তারপর সরকার পরিবর্তনের পর সেতু নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। আওয়ামী লীগ সরকার আসার পর সেতু দু’পাশের রাস্তার নারান্দিয়া ইউনিয়নের আসমানিয়া বাজার থেকে রায়পুর সড়কের সুইচ গেইট থেকে নয়াচর হয়ে বারামবাড়ি ও আরামবাড়ি হয়ে খলিলাবাদ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার রাস্তার কাজ করেছে।
সড়কের আড়াই কিলোমিটার নির্মাণে গত বছর টেন্ডার আহ্বান করে এলজিইডি। দুই ভাগে বিভক্ত কাজের প্রথম অংশে দেড় কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণে ১ কোটি ৫৭ লাখ ৪৫ হাজার ১৪২ টাকা এবং দ্বিতীয় অংশ ১ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণে ১ কোটি ৩১ লাখ ৬২ হাজার ৭২৫ টাকার টেন্ডার হয়।
মেসার্স সাজিদ ট্রেডার্স কাজ দু’টির দায়িত্ব পান। তবে এ বছরের ২৭শে জুন প্রথম অংশ এবং ৯ই এপ্রিল দ্বিতীয় অংশের কাজের মেয়াদ শেষ হয়। সড়কের মধ্যে খলিলাবাদ বারামবাড়ি এলাকায় খালের ওপর সেতু নির্মাণের প্রস্তাব পাঠালেও সেটি বাতিল হয়ে যায়।
খলিলাবাদ গ্রামের প্রবীন ব্যক্তি ডাক্তার জিলান বলেন, ‘২০০১ সালে বারামবাড়ি খালের ওপর সেতু নির্মাণের কাজটি আমার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স এসএন এন্টারপ্রাইজ বাস্তবায়ন করছিল। ওই সময় জাতীয় নির্বাচনে সরকার গঠনে রাজনৈতিক দলের পরিবর্তন হওয়ায় কাজটি বন্ধ হয়ে যায়। মূলত রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে আওয়ামী লীগ সরকার এসে সেতু নির্মাণ কাজটি বন্ধ করে দেয় সরকার গঠন করা দলের নেতাকর্মীরা। এরপর দীর্ঘ ২৩ বছর সেতুটি অর্ধনির্মিতাবস্থায় পড়ে আছে।’
নয়াচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকা সাম্মি আক্তার বলেন, ‘খলিলাবাদের বারামবাড়ি পর্যন্ত আমাদের স্ক্যাচম্যাপ এরিয়া। খালে সেতু না থাকায় এবং রাস্তা ভালো না হওয়ায় ওই এলাকার শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসে না। বলতে গেলে, ওই খানের শিশুরা লেখাপড়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।’
নারান্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুজ্জামান খোকা বলেন, ‘সুইচ গেইট থেকে দেড় কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণের অবশিষ্ট কাজ শিগগিরই শুরু হবে। বাকি এক কিলোমিটার রাস্তার কাজ বর্ষার পানি আসায় করা সম্ভব হয়নি। তবে দীর্ঘ দিন ধরে সেতুটি নির্মাণ না করায় ৫ গ্রামবাসী ভোগান্তির শিকার।’
এ বিষয়ে জানতে মেসার্স সাজিদ ট্রেডার্সের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক মো. মোয়াজ্জেম হোসেনের ব্যক্তিগত মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
উপজেলা প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথম অংশের দেড় কিলোমিটার রাস্তার ৭০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। এই অংশ ও পরের এক কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সময় বাড়ানোর আবেদন করেছে। বারামবাড়ি সংলগ্ন খালের ওপর সেতুর প্রস্তাব পুনরায় এবং বাকি প্রায় ৮০০ মিটার রাস্তা নির্মাণের প্রস্তাবও পাঠানো হবে।’
সৌজন্যেঃ কালেরকন্ঠ