বুধবার, ৩০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

লাকসামে ইক্বরা মহিলা মাদরাসায় সপ্তম শ্রেণির আবাসিক শিক্ষার্থীর মৃত্যু ঘিরে নানা রহস্য

৩২ Views

            ষ্টাফ রিপোর্টার\ কুমিল্লার লাকসামে ইক্বরা মহিলা মাদরাসায় সপ্তম শ্রেণির এক আবাসিক শিক্ষার্থীর মৃত্যু ঘিরে রহস্য ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। নিহত শিক্ষার্থীর নাম সামিয়া আক্তার (১২)। সে নাঙ্গলকোট উপজেলার হেসাখাল ইউনিয়নের নাওগোদা গ্রামের প্রবাসী নিজাম উদ্দিনের মেয়ে।

            গত শুক্রবার (১৮ই এপ্রিল) রাজধানী ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই শিক্ষার্থী মারা যায়। খবর পেয়ে রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডি থানা পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।

            মাদরাসা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, লাকসাম পৌরসভা কার্যালয় সংলগ্ন কামাল টাওয়ারে ‘ইক্বরা মহিলা মাদরাসা’ নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (১৭ই এপ্রিল) গভীর রাতে ওই শিক্ষার্থী মাদরাসার ৫ম তলার একটি কক্ষের জানালার গ্রিলের ফাঁক দিয়ে নিচে পড়ে যায়। এ সময় তার চিৎকার শোনে আশেপাশের লোকজন এসে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় একটি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা ও পরে ঢাকায় নিয়ে যায়। ওই শিক্ষার্থীর শরীরের ডান পাশের অংশ থেঁতলে গেছে।

            মাদরাসা কর্তৃপক্ষের দাবি, গভীর রাতে মাদরাসার পাঁচতলা ভবন থেকে নিচে পড়ে গুরুতর আহত হয় সামিয়া। দ্রæত তাকে উদ্ধার করে প্রথমে লাকসামের একটি হাসপাতালে নেয়া হয় এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় স্থানান্তর করা হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়।

            ওই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনার ব্যাখ্যায় মাদরাসা কর্তৃপক্ষের বক্তব্যে অসঙ্গতি থাকায় এলাকাবাসীর মধ্যে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তারা মৃত্যুর ঘটনাটিকে রহস্যজনক মনে করছেন এবং সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনের জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্ট মহল আশাবাদী, শিগগিরই এই মৃত্যু রহস্যের জট খুলবে।

            সামিরার মামা নাছির উদ্দিন ও একই বাড়ির চাচা সৈকত বলেন, ‘পোস্টমর্টেম ছাড়া লাশ দাফন করার জন্য পুলিশকে অনুরোধ করেছি। পুলিশ পোস্টমর্টেম ছাড়া লাশ দাফন করতে দেয়নি। তারা বলেন, মাদরাসা কর্তৃপক্ষ জোর করে মেয়েটিকে আবাসিকে রেখেছে। পাঁচ তলা থেকে পড়ে হাঁড় ভাঙার বিষয়টি সঠিক নহে। সে রাস্তার পাশে পড়ে কাঁদছিল, বিষয়টি সন্দেহজনক। সামিয়ার মৃত্যুর সাথে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ জড়িত।’

            এদিকে কুমিল্লার সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি, লাকসাম সার্কেল) সৌমেন মজুমদার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি বিষয়টি অত্যন্ত সূক্ষভাবে তদন্ত এবং সংশ্লিষ্ট মাদরাসার শিক্ষকদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য লাকসাম থানার অফিসার ইনচার্জকে (ওসি) নির্দেশ দেন।

            এই ব্যাপারে লাকসাম থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আনোয়ার হোসেন জানান, ধানমন্ডি থানা পুলিশ লাকসাম থানায় যোগাযোগ করে ওই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, ভিকটিমের পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ করা হয়নি। এছাড়া, মাদরাসা কর্তৃপক্ষও এ ঘটনায় পুলিশকে অবহিত করেনি।

            তিনি আরো জানান, ওই মাদরাসার প্রধান শিক্ষক মো. জামাল হোসেনকে থানায় এনে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত মৃত্যুর ঘটনার সঠিক কোনো কারণ জানা যায়নি। এ ঘটনায় লাকসাম থানায় একটি অপমৃত্যু (ইউডি) মামলা রুজু হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে। তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

Share This