রবিবার, ৯ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

লালমাইয়ে খালের মাটি যাচ্ছে ইটভাটা ও পুকুর ভরাটের কাজে

লালমাইয়ে খালের মাটি যাচ্ছে ইটভাটা ও পুকুর ভরাটের কাজে

১৮ Views

            নিজস্ব প্রতিনিধি\ কুমিল্লার লালমাই উপজেলায় একটি খালের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মাটি কেটে লুট করে নেয়া হয়েছে। শুধু খালের ভেতরেই নয়; লুট করা হয়েছে পাড়ের মাটিও। বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসী প্রতিবাদ করেও খালটির অস্তিত্ব রক্ষা হচ্ছে না।

            ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার বাগমারা দক্ষিণ ইউনিয়নের চাঁদকলমিয়া ও বরল গ্রামে। লালমাই উপজেলার আশকামতা, বরল, চাঁদকলমিয়া, ফতেহপুর ও পশ্চিম অশ্বত্থতলা হয়ে খালটি ডাকাতিয়া নদীতে মিশেছে। খালটির দৈর্ঘ্য প্রায় তিন কিলোমিটার। এর মধ্যে এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে লুট করে নেয়া হয়েছে মাটি। বর্তমানে চাঁদকলমিয়া ও বরল গ্রাম এলাকায় খালের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া কষ্টকর। প্রায় এক মাস ধরে মাটি কাটা চলছে। প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই মাটি কাটা হচ্ছে।

            স্থানীয়দের ভাষ্য, সম্প্রতি গভীর রাত থেকে শুরু করে সকাল পর্যন্ত এই খালের মাটি কাটা হয়েছে। লুটের এসব মাটি গেছে আশপাশের বিভিন্ন ইটভাটা ও পুকুর ভরাটের কাজে। বাগমারা দক্ষিণ ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয় থেকে প্রায় ৫০০ গজের মধ্যেই খালটির মাটি লুট হয়েছে। এরপরও খালটির অস্তিত্ব রক্ষা হয়নি।

            বাগমারা দক্ষিণ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আবদুল মালেক বলেন, ‘মাটি কাটার বিষয়টি আমার জানা ছিল না। সরেজমিন তদন্ত করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে প্রতিবেদন পাঠানো হবে শিগগিরই।’

            সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, খালটির ওপর দিয়ে কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়ক ও ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ গেছে। উপজেলার বাগমারা দক্ষিণ ইউনিয়নের চাঁদকলমিয়া ও বরল এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের একটি রেলসেতু সংলগ্ন স্থানে খালের ভেতরে বড় বড় গর্ত। খালটির দুই পাড়েও মাটি নেই। কোথাও কোথাও পাড়েও গর্ত তৈরি হয়েছে।

            স্থানীয় কৃষক আবদুস ছোবহান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও এক মাডি কারবারি খালের দুই হাড়ের মাডি (দুই পাড়ের মাটি) কাটতো চাইছিল। তখন আমরা প্রতিবাদ করছি। কিন্তু এইবার আর রক্ষা করতাম পারিনো। সব কাডি লই গেছে তারা। খালটার কোনো অস্তিত্ব রাখেনো।’

            স্থানীয় লোকজন জানান, খালের মাটি কাটাকে কেন্দ্র করে চাঁদকলমিয়া গ্রামের শাহজাহান ও তাঁর লোকজনের সঙ্গে বরল গ্রামের মহিন উদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলম পরে মারামারি হয়েছে। শাহজাহানের সমর্থকেরা বরল গ্রামের মাটি শ্রমিকদের মারধর করেন। খবর পেয়ে পুলিশ এলেও এ ঘটনায় কাউকে আটক করতে পারেনি।

            চাঁদকলমিয়া গ্রামের বাসিন্দা শাহজাহান স্থানীয়দের কাছে বিএনপি কর্মী হিসেবে পরিচিত। তিনি বলেন, ‘আমি মাটি কাটার বিরুদ্ধে। বরল গ্রামের মহিন, জাহাঙ্গীর, মনির পুরা খালটারে শেষ করে ফেলছে। খালের কোনো অস্তিত্ব তারা রাখেনি। আমরা তাদের বাধা দিতে গেছি, তখন সেখানে ঝামেলা হয়েছে। প্রায় এক মাস ধরে মাটি কাটা চলছে। প্রশাসনের লোকজন সবকিছু জানে। প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই মাটি কাটা হচ্ছে। যার কারণে যারা মাটি কাটে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না। উল্টো আমাদের মতো যারা প্রতিবাদ করে, তাদের ফাঁসিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়।’

            লালমাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহ আলম বলেন, ‘চাঁদকলমিয়া ও বরল এলাকায় মাটি কাটা নিয়ে মারামারি হচ্ছে- এমন খবর পেয়ে পুলিশ পাঠানো হয়। পরে উভয় পক্ষকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। বর্তমানে মাটি কাটা বন্ধ আছে। কেউ লিখিত অভিযোগ করলে পুলিশ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে।’

            লালমাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এহসান মুরাদ বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। এছাড়া স্থানীয় এলাকাবাসীর পক্ষ থেকেও বিষয়টি নিয়ে কোনো অভিযোগ করা হয়নি। আমি ঘটনাটির খোঁজ নিয়ে দেখছি। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

Share This

COMMENTS