বুধবার, ১৯শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শবে কদরের অনন্য বৈশিষ্ট্যসমূহ:

শবে কদরের অনন্য বৈশিষ্ট্যসমূহ:

Views

\ মাসুম বিন নোমান \

            শবে কদর (লাইলাতুল কদর) ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও বরকতময় রাত্রি। এ রাতের এমন কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা অন্যকোন রাতের মধ্যে নেই। আল-কুরআন ও আল-হাদিসে এই রাতের বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে।

শবে কদরের বৈশিষ্ট্যসমূহ:

১.আল-কদর সূরায় এ রাতের মর্যাদা: আল্লাহ বলেন- ‘নিশ্চয়ই আমি কদরের রাতে কুরআন নাজিল করেছি। হে রাসুল [সা.] কদরের রাত সম্পর্কে আপনাকে কী জানানো হয় নাই? কদরের রাত হলো হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।’ (সূরা আল-কদর- ১-৩) অর্থাৎ, এই রাতের ইবাদত ৮৩ বছর ৪ মাসের চেয়ে উত্তম।

২.কুরআন মাজীদ এই রাতেই নাযিল হয়েছে: কদরের রাতে মহান আল্লাহ লাওহে মাহফুজ থেকে প্রথম আকাশে সম্পূর্ণ কুরআন অবতীর্ণ করেন, যা পরবর্তীতে ধীরে ধীরে নবী মুহাম্মাদ (সা.)-এর ওপর নাজিল করা হয়। আল্লাহ বলেন- নিশ্চয়ই আমি এ কুরআনকে কদরের রাতেই নাযিল করেছি। (সুরা-কদর-১)

৩.এ রাতে ফেরেশতারা পৃথিবীতে অবতরণ করেন: ‘সে রাতে ফেরেশতারা এবং রূহ (জিবরাইল আ.) তাদের প্রভুর অনুমতিক্রমে প্রত্যেক কাজের নির্দেশসহ অবতরণ করেন।” (সূরা আল-কদর ৯৭:৪) ফেরেশতারা মুমিনদের জন্য রহমত, বরকত ও শান্তি নিয়ে আসেন।

৪.এটি বরকতময় রাত: ‘নিশ্চয়ই আমি বরকতময় রাতে কুরআন নাযিল করেছি ও আমি সতর্ককারী। সুরাঃ দুকান-৩

৫.এটি একটি পরিপূর্ণ শান্তিময় রাত: ‘এ রাত ভোর পর্যন্ত শান্তিময়।” (সূরা আল-কদর-৫ ) অর্থাৎ, এই রাতে শয়তান কোনো অনিষ্ট করতে পারে না এবং রাতটি কল্যাণ ও শান্তিতে পরিপূর্ণ থাকে।

৬.এ রাতে গুনাহ মাফের সুযোগ: নবী মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের আশায় কদরের রাতে নামাজ পড়ে, তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়।’ (বুখারি- মুসলিম)

৭.এটি ভাগ্য পরিবর্তনের রাত: এ রাতে ভাগ্যের চুড়ান্ত ফয়সালা করা করা হয় মহান আল্লাহ বলেন-এ রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থীরকৃত হয়। (সুরাঃ দুকান-৪)

৮.এ রাতের নেক-আমল বা ইবাদত এক হাজার মাসের চাইতেও উত্তম: আল্লাহ বলেন- লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চাইতেও উত্তম। (সুরাঃ ক্বদর-৩)

৯.এ রাতে দোয়া কবুল হয়: এই রাতে আল্লাহর কাছে দোয়া করলে তা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। হাদিসে এসেছে, আয়েশা (রা.) বলেন: আমি বললাম, “হে আল্লাহর রাসুল! যদি আমি শবে কদর পাই, তাহলে কোন দোয়া করবো?” তিনি বললেন: পড়বে- ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফওয়া, ফা’ফু আননি।’ (অর্থ): ‘হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল, তুমি ক্ষমা করতে ভালোবাসো, আমাকে ক্ষমা করে দাও।’ (তিরমিজি)

১০.এ রাতে শয়তান দুর্বল হয়ে যায়: এই রাতে শয়তানের প্রভাব অনেক কম থাকে, কারণ আল্লাহর রহমত ও ফেরেশতাদের আগমনে চারদিক শান্তিতে ভরে যায়।

১১.শবে কদরের তারিখ: হাদিস অনুসারে, রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোর মধ্যে (২১, ২৩, ২৫, ২৭, ২৯) শবে কদর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, বিশেষত ২৭তম রাতে অনেক উলামা বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। রাসুল [সা.] রমযানের শেষ দশককে দু’টি কারণে খুব গুরুত্ব দিতেন এক. কুরআন নাযিল দুই. শবে কদর। সেজন্য রাসুল [সা.] শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন আর রাসুল [সা.] এর ওফাতের বছর বিশ দিন ইতিকাফ করেছেন।

            পরিশেষে বলা যায় যে, শবে কদর এক মহিমান্বিত রাত, যা ইবাদত, দোয়া ও আত্মশুদ্ধির জন্য বিশেষ সুযোগ এনে দেয়। তাই এই রাতে বেশি বেশি ইবাদত করা, কুরআন তেলাওয়াত, দোয়া ও জিকির করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মহান রব সকলকে কবুল করেন আমিন।

লেখকঃ পিএইচ.ডি গবেষক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও সহকারী অধ্যাপক, ফুলগাঁও ফাযিল [ডিগ্রি] মাদরাসা, লাকসাম, কুমিল্লা। মোবাইল-০১৭১৯-৯০৭৩৩৬

Share This

COMMENTS