শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সম্পাদকীয় বন্ধ হোক মানবপাচার

            বাংলাদেশে এখনো বেকার তরুণ ও যুবকের সংখ্যা অনেক। আর এই সুযোগটিই কাজে লাগায় দেশি-বিদেশি মানব পাচারকারী চক্র। উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতিবছর শত শত তরুণ-যুবকের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। হাতিয়ে নেয় বিপুল পরিমাণ অর্থ।

            বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি এবং কিছুটা উন্নত জীবনের প্রত্যাশায় বহু তরুণ ঘর ছাড়ে, পাড়ি জমায় অজানা গন্তব্যের উদ্দেশে। তাদের একটি বড় অংশই বিপদগ্রস্ত হয়। অনেকে বেচাকেনার শিকার হয়। অনেকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হাতে আটক হয়ে নির্যাতনের শিকার হয়।

            বাংলাদেশিদের ইউরোপে পাচারের প্রধান রুট ভূমধ্যসাগরের লিবিয়া-তিউনিশিয়া চ্যানেল। নৌপথে তিউনিশিয়া হয়ে ইতালি ও মাল্টায় পাচার করা হয়। একদিকে ভোগবিলাস ও প্রাচুর্যের হাতছানি, অন্যদিকে জীবনের রূঢ় কঠিন বাস্তবতা। এরই মধ্যে কিছু মানুষ জীবন বাজি রেখে বেঁচে থাকার উপায় খোঁজে। সামান্য উন্নত জীবনের আশায় নিজের পাশাপাশি পরিবারকেও ঠেলে দেয় প্রচন্ড ঝুঁকির মধ্যে। যেমনটি ঘটেছে ভৈরবের ৬ পরিবারে। ইতালি যেতে গিয়ে লিবিয়ায় নিখোঁজ হয়েছেন ভৈরবের ৬ তরুণ। ইতালি যাওয়ার স্বপ্নপূরণের আশায় দালালের খপ্পরে পড়ে লিবিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিলেন তাঁরা। সেখান থেকে তাঁদের সাগরপথে অবৈধভাবে ইতালি নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে চক্রটি।

            এর পর থেকে পরিবারের সঙ্গে ওই যুবকদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। অভিযুক্ত মানব পাচারকারীও তাঁদের সন্ধান দিতে পারছেন না বলে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছে। ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা জানায়, লিবিয়ায় যাওয়া পর্যন্ত কয়েক ধাপে ব্যাংকের চেক ও নগদে ৬ পরিবারের কাছ থেকে মোট ৬০ লাখ টাকা নেন এক মানবপাচারকারী। গত মার্চ মাসে ৬ জনকে লিবিয়ায় নেয়া হয়। সেখান থেকে ২০শে মে নৌকায় করে সাগর পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করেন। নৌকার তলা ফেটে গেলে কোনো রকম জীবন বাঁচান তাঁরা। বেঁচে যাওয়া যুবকরা ২২শে মে এ ঘটনা বাড়িতে ফোন করে জানান। বাড়ি থেকে ওই মানব পাচারকারীকে ফোন করে চাপ দেয়া হয়। পরবর্তী সময়ে বড় নৌকায় পাঠানো হবে জানিয়ে তিনি ফোন রেখে দেন। এর পর থেকে পরিবারের সদস্যরা ৬ জনের কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে না। তাঁদের সন্ধান চেয়ে ওই মানব পাচারকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো সুরাহা হয়নি। সর্বশেষ ২৮শে মে থেকে স্বজনরা মানব পাচারকারীর সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারছে না। তিনি বর্তমানে পলাতক।

            দীর্ঘকাল ধরেই বিদেশ গমনেচ্ছু সাধারণ মানুষ প্রতারকদের দ্বারা হয়রানির শিকার হচ্ছে। মিথ্যা আশ্বাস, প্রলোভন, বৈধভাবে বিদেশে পাঠানোর কথা বলে অবৈধভাবে বিদেশে পাঠানোর ঘটনা ঘটছে। মিথ্যা আশ্বাসে অসংখ্য মানুষ সর্বস্বান্ত হচ্ছে, বিপদে পড়ছে।

            সারা দেশে পাচারকারীদের বিশাল নেটওয়ার্ক রয়েছে। তারা বেকার যুবকদের টার্গেট করে নানা ধরনের মিথ্যা প্রলোভন দিতে থাকে। একসময় বহু তরুণ তাদের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে দেয়। সাধারণত ইউরোপে পাঠানোর প্রলোভন দিয়ে লিবিয়ায় নেয়া হয়।

            বাংলাদেশে মানবপাচারের মতো একটি ভয়াবহ অপরাধ রোধে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নেয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে বিচারপ্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে অপরাধীদের দ্রæত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা চাই বাংলাদেশ থেকে অবৈধ পথে মানবপাচার দ্রæত নির্মূল হোক।

Share This

COMMENTS