শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে ১০  সুপারিশ সুজন সম্পাদক বদিউল আলমের

সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে ১০ সুপারিশ সুজন সম্পাদক বদিউল আলমের

            ষ্টাফ রিপোর্টার\ সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, ডামি, একতরফা ও মধ্যরাতের নির্বাচন করে নির্বাচন ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করেছে আওয়ামী লীগ। যারা ডামি নির্বাচনের আয়োজন করেছে তারা সুস্পষ্টভাবে সংবিধান লঙ্ঘনকারী। সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগে বিচার হওয়া দরকার। সাবেক প্রধানমন্ত্রী পালিয়ে যাওয়ার পর আওয়ামী লীগের অনেকেই পালিয়ে গেছেন। নেতৃত্ব দেয়ার মতো কাউকে এখন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আওয়ামী লীগ ছাড়া জাতীয় নির্বাচন হলে তা অগ্রহণযোগ্য হবে না।

            গত শনিবার ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি›র আয়োজনে ‘গণতন্ত্র সুরক্ষায় রাষ্ট্র মেরামত এবং জাতীয় নির্বাচন’ শীর্ষক ছায়া সংসদ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বর্তমান সরকার তত্ত¡াবধায়ক সরকার নয়। তত্ত¡াবধায়ক সরকার ছিল রুটিন সরকার। অন্তর্বতীকালীন সরকারকে পনের-ষোলো বছরের জঞ্জাল দূর করতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। তারপরেও জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত হলে অন্তর্বতী সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা কমতে পারে। গত ৩ ডামি নির্বাচনে অভিযুক্ত সবার বিচারের দাবি জানিয়ে বদিউল আলম বলেন, গত তিনটি নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন, পুলিশ, প্রশাসন, রিটার্নিং অফিসার, পোলিং অফিসারসহ নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত প্রায় সবাই অপরাধী কর্মকান্ডে জড়িত ছিল। কমিশন নির্বাচন ব্যবস্থাকে বিভিন্ন অজুহাতে দলীয়করণ করে সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করেছে। আদালতের নির্দেশ অমান্য করেছে। অতি-উৎসাহী হয়ে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করেছে। তাই নির্বাচনী অপরাধে অভিযুক্ত সবাইকে বিচারের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা উচিত। তিনি বলেন, নির্বাচনের জন্য সমতল ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে পারেনি। সেসময় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে সরকারের রূপরেখা বাস্তবায়নের জন্য কয়েকটি কথিত দলকে নিবন্ধন দিয়েছে। সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, এদেশের মানুষ ভুলে যায়নি কীভাবে দিনের ভোট রাতে হয়েছিল। মৃত মানুষ ভোট দিয়েছে। বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তিরাও ভোট দিয়েছে। কোথাও কোথাও শতভাগ ভোট পড়েছে। শিশুরাও ভোট দিয়েছে। আমি আর ডামি প্রার্থীর নির্বাচন হয়েছিল। ৮ থেকে ১০ শতাংশ ভোট পড়লেও ভোটের সংখ্যা বাড়িয়ে ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ দেখানো হয়েছিল। বিশেষ পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের বিচার শেষ সম্পন্ন না হলে এবং তারা পুনর্গঠিত হতে না পারলে নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হবে না। যারা ডামি নির্বাচনের আয়োজন করেছে তারা সুস্পষ্টভাবে সংবিধান লঙ্ঘনকারী। সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগে বিচার হওয়া দরকার বলেও মনে করেন বদিউল আলম মজুমদার। না হলে আগামীতে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি হবে না। তিনি বলেন, বিগত তিন জাতীয় নির্বাচন পরিচালনায় যুক্ত ১০ লাখ মানুষ সবাই নির্বাচনী অপরাধী, তাদের শাস্তি হওয়া যৌক্তিক। নির্বাচন সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আরপিও আইন ও নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন সংস্কারের প্রস্তাব দেয়া হবে। ছায়া সংসদে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতার্কিকদের পরাজিত করে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকরা বিজয়ী হন।

            সুপারিশগুলো হলো ১. নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কারের পর একটি পূর্ণাঙ্গ নির্বাচনি রোডম্যাপ জাতির সামনে ঘোষণা করা। ২. অভিজ্ঞ, সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করা, যারা কোনো চাপে বা লোভে মাথানত করবে না। ৩. তত্ত¡াবধায়ক বা অর্ন্তর্বতী সরকার সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত করে নির্বাচনকালীন দল নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের দ্বারা জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন বিধান রাখা। ৪. বিদ্যমান সংসদীয় ব্যবস্থার পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের সমম্বয়ে দেশের বিশিষ্ট নাগরিক, প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ, পেশাজীবী, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী ও প্রশাসনিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের সমন্বয়ে সংসদে উচ্চকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা প্রবর্তন করা। ৫. ইভিএমে ভোট প্রদানে কারচুপির শঙ্কা বেশি থাকায় এবং ইতোপূর্বে ইভিএমে ভোট জালিয়াতির ঘটনা প্রমাণিত হওয়ায় ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোট আয়োজন করা। ৬. নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের লক্ষ্যে সদ্য ঘোষিত কমিশনকে এজেন্ডাভিত্তিক রাজনৈতিক দলসহ নাগরিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে সংলাপের আয়োজন করা। ৭. দুর্নীতিবাজ, টাকা পাচারকারী, ব্যাংক লুটেরাসহ ঋণ খেলাপিরা কোনোভাবেই যাতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারে- সেই জন্য কঠিন আইনের বিধান রাখা। ৮. পর পর দুই টার্মের অতিরিক্ত কেউ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে না পারার বিধান রাখা। ৯. একটি নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়ন করে তা নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা। ১০. বিগত কয়েকটি নির্বাচনকে যেসব কমিশন বা যারা বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে তাদেরকে আইনের আওতায় আনার বিধান তৈরি করা।

            তিনি বলেন, ‘নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার ব্যতীত রাজনৈতিক দলগুলো দ্রæত নির্বাচন আয়োজনের চাপ দিলে গণতন্ত্রের অভিযাত্রা ব্যাহত হতে পারে। ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী বিপ্লবে যে বিজয় অর্জিত হয়েছে সে বিজয়ের সুফল ব্যাহত হবে। তাই অর্ন্তর্বতীকালীন সরকারকে নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কারসহ রাষ্ট্র সংস্কারে কাজ করতে প্রয়োজনীয় সময় দেয়া উচিত। তবে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের পর অর্ন্তর্বতীকালীন সরকার আগামী জাতীয় নির্বাচন আয়োজন নিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য রোডম্যাপ ঘোষণা করবে বলে সবার প্রত্যাশা।’

Share This