রবিবার, ১২ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সেনা হেফাজতে আসামি কর্মকর্তাদের ট্রাইব্যুনালে আনা–নেওয়ার চিন্তা

সেনা হেফাজতে আসামি কর্মকর্তাদের ট্রাইব্যুনালে আনা–নেওয়ার চিন্তা
Views

মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা তিন মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর যেসব ১৫ জন সেনা কর্মকর্তা হেফাজতে রয়েছেন, তাঁদের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত সেনাবাহিনী নিজেদের হেফাজতে রাখতে চায় বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সেনা কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা হলো— বিচার চলাকালীন সময়ে আসামিদের সেনা হেফাজতেই রাখা হবে। নির্ধারিত তারিখে তাঁদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হবে এবং আদালতের কার্যক্রম শেষে আবার সেনা হেফাজতে ফিরিয়ে নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর  তাজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, “আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দিয়েছেন। আইন অনুযায়ী গ্রেপ্তারের পর আসামিকে অবিলম্বে আদালতে হাজির করতে হয়। এরপর আদালত ঠিক করবেন— তাঁদের কারাগারে পাঠানো হবে নাকি জামিন দেওয়া হবে।” তিনি আরও জানান, সরকার চাইলে কোনো স্থাপনাকে কারাগার ঘোষণা করতে পারে। সে ক্ষেত্রে আদালতই নির্ধারণ করবেন, আসামিরা কোথায় থাকবেন।

আইন মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, সরকার যদি কোনো বাড়িকে সাবজেল ঘোষণা করে, সেখানে মামলার আসামিদের রাখা যায়। ২০০৭–০৮ সালের এক–এগারোর সময় শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে সংসদ ভবন এলাকার দুটি বাড়িতে সাবজেল হিসেবে রাখা হয়েছিল— এমন নজিরও রয়েছে।

গত বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সেনাবাহিনীর ২৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এত সংখ্যক সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একসঙ্গে পরোয়ানা জারির ঘটনা দেশের ইতিহাসে প্রথম।

এই ২৫ জনের মধ্যে ১৫ জন কর্মরত, একজন এলপিআরে (অবসরোত্তর ছুটি) এবং বাকিরা অবসরপ্রাপ্ত। সেনাবাহিনী জানিয়েছে, কর্মরত ১৫ কর্মকর্তাকে ইতিমধ্যে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। একজন কর্মকর্তা, মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদ, আত্মগোপনে আছেন বলে জানা গেছে। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামরিক সচিব ও ডিজিএফআইয়ের পরিচালক ছিলেন।

অন্যদিকে, অবসরপ্রাপ্ত ৯ কর্মকর্তার বেশিরভাগই বর্তমানে দেশের বাইরে। তাঁদের মধ্যে পাঁচজনই ডিজিএফআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক— লে. জেনারেল (অব.) মো. আকবর হোসেন, মেজর জেনারেল (অব.) মো. সাইফুল আবেদিন, লে. জেনারেল (অব.) মো. সাইফুল আলম, লে. জেনারেল (অব.) আহমেদ তাবরেজ শামস চৌধুরী ও মেজর জেনারেল (অব.) হামিদুল হক।

এছাড়া, মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশ ত্যাগ করেন। তিনি তখন শেখ হাসিনার নিরাপত্তা–বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন। আরও রয়েছেন মেজর জেনারেল (অব.) তৌহিদুল ইসলাম, লে. কর্নেল (অব.) মখছুরুল হক ও লে. কর্নেল (অব.) খায়রুল ইসলাম— তাঁরা ডিজিএফআই ও র‍্যাবের গোয়েন্দা শাখায় কর্মরত ছিলেন।

গত বুধবার তিনটি মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়। এর দুটি মামলা আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সংঘটিত গুম–নির্যাতনের ঘটনার ভিত্তিতে। এসব মামলায় শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

অন্য মামলাটি জুলাই মাসের গণ–অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর রামপুরা ও বনশ্রী এলাকায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা হয়। এতে চারজনকে আসামি করা হয়েছে— বিজিবির সাবেক কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেদোয়ানুল ইসলাম, মেজর রাফাত–বিন–আলম মুন, পুলিশের সাবেক এডিসি রাশেদুল ইসলাম ও সাবেক ওসি মশিউর রহমান।

মোট তিন মামলায় ৩২ জনের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন র‍্যাবের তিন সাবেক মহাপরিচালক— বেনজীর আহমেদ, এম খুরশিদ হোসেন ও হারুন অর রশিদ। বেনজীর বর্তমানে দেশের বাইরে আছেন বলে জানা গেছে।

হেফাজতে থাকা কর্মকর্তারা
বর্তমানে সেনা হেফাজতে থাকা ১৫ জন কর্মকর্তার মধ্যে রয়েছেন— মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, কে এম আজাদ, মো. কামরুল হাসান, মো. মাহবুব আলম, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম, মশিউর রহমান জুয়েল, সাইফুল ইসলাম সুমন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী, আহমেদ তানভীর মাজহার সিদ্দিকী, লে. কর্নেল মোহাম্মদ রেদোয়ানুল ইসলাম ও মেজর মো. রাফাত–বিন–আলম মুন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল নির্দেশ দিয়েছে, ২২ অক্টোবরের মধ্যে সব আসামিকে আদালতে হাজির করতে হবে।

চাকরি–সংক্রান্ত প্রশ্ন
৬ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল আইনে আনা সংশোধনী অনুযায়ী, কারও বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল হলে তিনি সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের কোনো পদে থাকবেন না এবং প্রজাতন্ত্রের কোনো সেবায় নিয়োগ পাওয়ারও অযোগ্য হবেন। তবে কেউ যদি খালাস পান, এই নিষেধাজ্ঞা তাঁর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

প্রসিকিউশন বলছে, অভিযোগ দাখিলের পর থেকেই চাকরি বহাল রাখা আইনবিরুদ্ধ। তবে সেনাবাহিনীর অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান বলেন, “সংশোধিত আইনের সঠিক প্রয়োগবিধি এখনো প্রকাশিত হয়নি। কীভাবে এটি সশস্ত্র বাহিনীতে কার্যকর হবে, সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে।

Share This

COMMENTS