সেবা থেকে বঞ্চিত দূর-দূরান্তগামী যাত্রীরা কুমিল্লায় সড়কের পাশের যাত্রী ছাউনিগুলো স্থানীয়দের দখলে


আবুল কাশেম গাফুরী\ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে দাউদকান্দি পর্যন্ত যাত্রীদের পরিবহনে উঠা নামার সুবিধার্থে সড়ক ও জনপদ বিভাগ অনেকগুলো যাত্রী ছাউনি নির্মাণ করেছে। শুধু চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় ১২টি যাত্রী ছাউনি নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে এই ছাউনিগুলোর বেহাল দশা। কোন কোন যাত্রী ছাউনিতে চলছে ইট বালুর ব্যবসা, মাইক্রো স্ট্যান্ড ও দোকান। আবার কোনটির ছাউনি খুলে নিয়ে গেছে স্থানীয়রা। সরেজমিনে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সড়ক ও জনপদ কুমিল্লা অঞ্চলের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নতি করার সময় যাত্রীদের গণ পরিবহনে উঠা-নামার জন্য দু’পাশে যাত্রী ছাউনি নির্মাণ করা হয়। জেলার দাউদকান্দি থেকে উপজেলার চৌদ্দগ্রাম পর্যন্ত ৯১ কিলোমিটারের মহাসড়কের মধ্যে চৌদ্দগ্রামে রয়েছে ৪৪ কিলোমিটার। মহাসড়কটির ঢাকা এবং চট্টগ্রামমুখি লেনে ১২টি যাত্রী ছাউনি নির্মাণ করা হয়।
বর্তমানে এই ছাউনিগুলোর এমন দশা হয়ে পড়েছে সেগুলো ব্যবহারে অনুপযোগী। আবার ইচ্ছে থাকলেও যাত্রীরা তা ব্যবহার করতে পারছে না। কারন এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তি ছাউনিগুলো দখল করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। আবার কোথাও ছাউনিগুলোর পাটিশান এবং উপরের ছাদ খুলে নিয়ে গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, যাত্রী ছাউনিগুলো বাজার থেকে কিছুটা দূরত্ব হওয়ায় যাত্রীরা ছাউনিগুলো ব্যাবহার করতে অনেকটা অনীহা প্রকাশ করার কারনে যাত্রী ছাউনিগুলোর এই দুরবস্থা।
সওজ সূত্রে আরো জানা গেছে, চৌদ্দগ্রামের লালবাগ রাস্তার মাথা, মিয়ার বাজার, নোয়া বাজার, ছুপুয়া, দোলবাড়ী, সৈয়দপুর, নাটাপাড়া, উপজেলা সদরের চৌদ্দগ্রাম সরকারি হাসপাতালের সামনে, বাতিসা বাজার ও বাতিসা নতুন সড়ক, চিওড়া, ফকির বাজার ও জগন্নাথদিঘী এলাকায় এ সকল ছাউনি তৈরি করা হয়।
সরেজমিনে মিয়া বাজার ছাউনিতে দেখা যায়, স্থানীয় মাইক্রোবাস চালকরা সেখানে অবৈধ স্ট্যান্ড গড়ে তুলেছে। যার কারনে ছাউনিটি এখন যাত্রীরা ইচ্ছে করলেও ব্যবহার করতে পারছে না।
চৌদ্দগ্রাম হাসপাতালের সামনে ছাউনিটি ইট বালু ব্যবসায়ীদের দখলে। পিছনের পাটিশান খুলে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। বাতিসা নতুন সড়কে দখল করে রেখেছে এক মুদি দোকানি আর পুরাতন সড়কের ছাউনিটি হোটেল ব্যবসায়ীদের দখলে, চিওড়া ছাউনিটি অসাধু ব্যবসায়ীরা দখল করে পান সিগারেটের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এভাবে প্রতিটি ছাউনি বেদখল হয়ে আছে।
ফেনী-কুমিল্লা আঞ্চলিক সড়কের লোকাল গণ পরিবহন চালক নূর মোহাম্মদ বলেন, আমরা ইচ্ছে করলেই যাত্রী ছাউনির সামনে গাড়ী দাড় করাতে পারি না। কারন এগুলো লোকাল বাস যাত্রীদের পছন্দের জায়গায় তাদের নামিয়ে দিতে হয়। অন্যথায় তারা আমাদের সাথে ঝামেলা করে। সে জন্য ইচ্ছে থাকলেও ছাউনি ব্যবহার করতে পারছি না। মহাসড়কে নিয়মিত চলাচলকারী অন্তত ১৫ জন যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছাউনিগুলো মূল বাসস্ট্যান্ড থেকে কিছু দূরে স্থাপন করায় যাত্রীরা ব্যবহার করতে পারছেন না। কর্তৃপক্ষ ছাউনিগুলো ব্যবহার উপযোগী করতে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিলে যাত্রীরা এর সুফল ভোগ করতে পারবেন। কুমিল্লা-ফেনী রুটে চলাচলকারী যাত্রীবাহী বাসের চালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, ‘আমরা চাইলেও যাত্রীছাউনির সামনে গাড়ি দাঁড় করাতে পারি না। আর যাত্রীরাও ছাউনি থেকে দূরে দাঁড়ায়। ফলে আমাদের বাধ্য হয়ে যাত্রীদের কাছে গিয়ে গাড়ি থামাতে হয়।’
এদিকে পদুয়ার বাজার রাস্তার মাথায় গাড়ির জন্য অপেক্ষা করা টিপু নামের এক যাত্রী বলেন, যাত্রীছাউনির কাছে বাস থামানোর কথা সাইনবোর্ডে লেখা থাকলেও চালকরা তা মানছেন না। ফলে ঝুঁকি নিয়ে মহাসড়কের মধ্যেই যাত্রী ওঠানামা করেন।
সড়ক ও জনপদ কুমিল্লা অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার গোলাম মোস্তফা বলেন, যাত্রী ছাউনিগুলোর দৈন্যদশা সম্পর্কে আপনাদের মাধ্যমে জেনেছি। খোজ নিয়ে এগুলো পুনরুদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জামাল হোসেন বলেন, যাত্রী ছাউনিগুলোর বেহাল দশা আমার নজরে এসেছে। এ বিষয়ে সওজের সাথে কথা বলে যাত্রী ছাউনিগুলো ব্যবহারের উপযোগী করে তোলার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ওয়াসিউজ্জামান চৌধুরী বলেন, সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।