১৪ মিয়ানমার সেনা প্রাণ বাঁচাতে আশ্রয় নিল বাংলাদেশে
মিয়ানমারের তুমব্রু রাইট ক্যাম্পে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে সংঘর্ষ চলছে জান্তা সরকারের সেনাদের। এর মধ্যে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের দিয়ে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ১৪ সদস্য পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন।
আজ রোববার ৩৪ বিজিবি অধিনায়ক লে: কর্ণেল আবদুল্লাহ আল মাশরাফি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, তাঁদের অস্ত্র ও গুলি বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) কাছে জমা রেখেছে।
৩৪ বিজিবি অধিনায়ক জানান,সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের নিজেদের দুই বাহিনীর মধ্যে সংঘাত চলছে। যার পরিস্থিতি নাজুক মনে হচ্ছে। এ সময় বেশ কজন মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাংলাদেশ সীমানায় সশস্ত্র অবস্থায় চলে এসেছে। তাদেরকে কর্ডন করে এনে নিরাপদ আশ্রয়ে রাখা হয়েছে।
এদিকে, গোলাগুলির ঘটনায় আতঙ্কে দিন পার করছে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের বাসিন্দারা। তুমব্রুতে গোলাগুলিতে বাংলাদেশের একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। গুলিবিদ্ধ ব্যক্তি হলেন স্থানীয় তুমব্রু বাজার পাড়ার প্রবিন্দ্র ধর (৬০)।
মিয়ানমারের তুমব্রু রাইট ক্যাম্প দখল করতে আজ রোববার ভোর ৪টা থেকে মর্টারশেল ও ভারী অস্ত্রের গোলা ছুটছে পরস্পরকে। গুলি এসে পড়ছে বাংলাদেশ সীমান্তে। তুমুল সংঘর্ষে ঘুমধুম ইউনিয়নের মানুষ দিগ্বিদিক ছুটছে। যাদের বাড়ি ঘরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো তারা দরজা-জানালা বন্ধ করে নিরাপদ আশ্রয়ে রাত কাটিয়েছে।
হামিদুল হক নামের এক প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘ঘর সংসার ফেলে কোথাও যাওয়াও যাচ্ছে না। আবার বাড়িতেও নিরাপদ না। ভয়ে-আতঙ্কে পরিবারের ছোটরা কান্না করছে।’
তুমব্রু রাইট ক্যাম্পের মাত্র দেড় শ গজ অদূরে তুমব্রু বাজার। এ বাজারের ব্যবসায়ী শফিক আহমদ, আবুল হোসেন আলী আকবর ও গুরা মিয়া বলেন, মাঝখানে তুমব্রু বাজার। পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে বিদ্রোহী আরকান (এএ), পশ্চিম ও উত্তর দিকে আরএসও ঘিরে রেখেছে ক্যাম্পটি। তারা (বিদ্রোহী) যে কোনো মূল্যে তুমব্রু রাইট ক্যাম্পটি দখল করে নিতে চায়।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সীমান্তের ওপারের উত্তেজনা সম্পর্কে তারা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন।
তিনি জানান, ঝুঁকিপূর্ণ বসতিগুলো থেকে লোকজনকে সরিয়ে তাদের স্বজনদের বাড়িতে নিয়ে আসতে ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদকে বলা হয়েছে।
এ ছাড়া প্রয়োজন হলে সীমান্ত লাগোয়া স্কুলগুলোকে সাময়িক বন্ধ রাখার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, এ সীমান্তের বাংলাদেশ অংশের অন্তত ছোট-বড় ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অঘোষিত বন্ধ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। দুটি মাধ্যমিক স্তরের প্রতিষ্ঠান। তিনটি নুরানি স্তরের প্রতিষ্ঠান।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা শিক্ষা অফিসার ত্রিরতন চাকমা জানান, অবস্থার কথা শুনে পাঁচটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।