ইজিবাইক ও মিশুকের যন্ত্রনায় লাকসাম পৌরবাসী অতিষ্ঠ


এম.এ মান্নান\ লাকসাম পৌর শহরে ব্যাটারিচালিত তিন চাকার ইজিবাইক ও মিশুকের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধির কারণে পৌরশহরে প্রতিদিনই দেখা দিচ্ছে অসহনীয় যানজট। এসব ইজিবাইক ও মিশুক চালকদের কোনও সিগন্যাল জ্ঞান না থাকায় যেভাবে খুশি সেভাবে ইজিবাইক চলাচল, যত্রতত্র পার্কিং ও যাত্রী উঠা-নামা, সড়কে অবৈধ স্ট্যান্ড এবং ফুটপাত দখল হয়ে যাওয়ায় অতিমাত্রায় বেড়েছে যানজট ও সড়ক দুর্ঘটনা। এতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যানবাহনের যাত্রী, চালক, স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পৌরবাসীকে। বর্তমানে লাকসাম শহরবাসীর দুর্ভোগের নতুন নাম ‘অনাকাঙ্খিত যানজট’।
আবদুর রহমান (৫৫) একজন মিশুক চালক। তার বাড়ি লালমাই উপজেলার দরবেশপাড়া গ্রামে। প্রতিদিন উপজেলা শহরে ব্যাটারিচালিত মিশুক চালান। তিনি জানালেন, ‘প্রতিদিন রাতে ১২০ টাকা দিয়ে ব্যাটারি চার্জ দিই, দিনে মিশুক চালাই। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত গাড়ি চালিয়ে ৮শ’-১ হাজার টাকা আয় করি এর মধ্যে মালিকে ৪শ’ টাকা দিতে হয়। তার পর সারাদিনের ১৪০ টাকা খরচ করতে হয়, দিনশেষে ৩-৪শ’ টাকা পকেটে নিয়ে বাড়ীতে যাই। সারা রাত চার্জ দিয়ে সারা দিন মিশুক চালানো যায় কোনো সমস্যা হয় না। কিন্তু যানজটের কারণে হাঁফিয়ে উঠেছি। ৫ মিনিট চালালে ২০ মিনিটই জ্যামে (যানজটে) আটকে থাকতে হয়। দুপুরের পরই ব্যাটারি চার্জ শেষ হয়ে যায়।’ গত শনি ও রোববার লাকসাম শহরে ১২ জন মিশুক-ইজিবাইকের সঙ্গে কথা বলে যানজটের এই ভয়াবহ অবস্থার কথা জানা গেছে।
পৌরসভার বাসিন্দা আবদুল কুদ্দুসের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত তিন কারণে লাকসাম শহরে যানজট বেড়েছে। এগুলো হচ্ছে অতিরিক্তসংখ্যক মিশুক ও ইজিবাইক চলাচল, অবৈধ স্ট্যান্ড এবং বিশৃঙ্খলভাবে মিশুক ও ইজিবাইক চলাচল। এসব কারণে শহরের ব্যস্ততম ব্যাংক রোড, থানা রোড়, নোয়াখালী রেলগেট, বাইপাস মোড়, হকার্স মার্কেট এবং উপজেলা পরিষদের প্রধান সড়ক রোডে সব সময় যানজট লেগেই থাকে। যানজটের কারণে ভোগান্তি পোহাচ্ছে কয়েক লাখ মানুষ।
পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, এক হাজার মিশুক ও ২৭টি ইজিবাইকের লাইসেন্স দিয়েছে তারা। যেগুলো পৌরশহরে চলাচল করার কথা। এছাড়াও সড়কের যানযট নিরসনের জন্য পৌর আইনশৃঙ্খলা ১১ জন বাহিনী কর্মরত রয়েছে। এছাড়াও লাকসাম প্রধান প্রধান সড়কে ট্রাফিক বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত রয়েছে ৭ জন পুলিশ। কিন্তু এসব সমস্যা সমাধানে জন্য পৌর আইনশৃঙ্খলা ১১ জন ও ট্রাফিক বিভাগের ৭ জন পুলিশ দায়িত্বপ্রাপ্ত বাহিনী তেমন কোনও তৎপরতা চোখে পড়ে না। শহরের কয়েকটা পয়েন্টে পৌর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন থাকলেও তারা যানজট নিরসনে কার্যকর তেমন কোনও ভূমিকা রাখতে পারছেন না। এমতাবস্থায় তীব্র যানজটে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পৌর এলাকায় প্রতিদিন গড়ে চলাচল করছে ৪ হাজারের মতো মিশুক ও ২ হাজার ইজিবাইক। তাছাড়া দিনের বেলায় পৌরশহরের ভেতর দিয়ে চলাচল করছে লরি, ট্রাকসহ বিভিন্ন বড় বড় যানবাহন। অপরদিকে দেখা গেছে পুরাতন বাসস্ট্যান্ড চত্বরে, বাইপাস ডায়গনস্টিক সেন্টার, কবুতর বাজার, রেলগেট (রিনা হোটেল) সামনে প্রধান সড়কের দু’পাশে ইজিবাইক ও মিশুকের অবৈধ স্ট্যান্ড। এসব স্ট্যান্ড সড়কের বড় অংশ দখল করে নিয়েছে। এসব স্ট্যান্ডের কোনো অনুমোদন নেই।
এ কারণে পৌরশহরে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজটের। ফলে সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী ও সেবা নিতে আসা রোগীরা।
কামাল উদ্দিন নামে এক নাগরিক বলেন, শহরে অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত রিকশা ব্যাপকহারে বেড়ে গেছে। ব্যস্ততম সড়কের মোড়গুলোতে যানজটে আটকে থাকতে হচ্ছে। আর এসব রিকশায় উঠলেই খারাপ লাগে। যানজটে অতিষ্ঠ হয়ে উঠি।’ তিনি বলেন, গত ৫ই আগস্টের পর কিছুদিন ছাত্ররা ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করে। তখন শহরের অবস্থা ভালো ছিল। এখন পৌর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ট্রাফিক পুলিশ থাকলেও যানজট কমছে না।
শহরের ধান বাজার ব্রিজ রোডের মুদি দোকানদার সরোয়ার আলম বলেন, লাকসাম পৌর শহরের চার দিক থেকে মনোহরগঞ্জ, নাঙ্গলকোট, লালমাই উপজেলা প্রায় ৪০টি ইউনিয়নের ৮ লক্ষাধিক মানুষ শহরে প্রবেশ করেন। ফলে এ রোডে দিনরাত যানজট লেগেই থাকে।
লাকসাম ট্রাফিক বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্রাফিক ইনচার্জ আমিনুল কবির বলেন, সড়কের যানজটের অন্যতম কারণ হলো, যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি। এ ক্ষেত্রে পৌরসভার নিবন্ধন করা অটোরিকশা ও রিকশা চিহ্নিত করা দরকার। এতে বাইরের অটোরিকশা শহরে ঢুকতে পারবে না। তখন যানবাহন নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশের কাজ করতে সুবিধা হবে। বিষয়টি একাধিকবার পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
এ বিষয়ে লাকসাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নার্গিস সুলতানা বলেন, বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। যানজট নিরসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা নিয়ে ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা হয়েছে। আশা করি খুব শিঘ্রই কার্যকর ভূমিকা নেয়া হবে।
