শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনী মাঠে  নামার নির্দেশনা প্রধানমন্ত্রীর

ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনী মাঠে নামার নির্দেশনা প্রধানমন্ত্রীর

            ষ্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের মানুষকে ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগ নিয়ে গুজব-অপপ্রচারে কান না দিয়ে উপযুক্ত জবাব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে একই সঙ্গে তিনি নেতাকর্মীদের প্রতি সরকারের উন্নয়নের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন।

গত রোববার গণভবনে আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় সমাপনী বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা এসব নির্দেশনা প্রদান করেন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মাঠ পর্যায়ের প্রায় ৩ হাজার নেতা এবং জনপ্রতিনিধিকে নিয়ে এ বিশেষ বর্ধিত সভার আয়োজন করা হয়।

সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমি জানি আমাদের বিরুদ্ধে অনেকে অপপ্রচার চালায় আর অপপ্রচার চালায় কারা? যারা ভোট চুরির মধ্য দিয়ে, যাদের জন্ম হয়েছে ক্ষমতা দখলের মধ্য দিয়ে, সন্ত্রাসের মধ্য দিয়ে। যেটা আমাদের কথা না, উচ্চ আদালত যেটা ঘোষণা দিয়েছিল- জেনারেল জিয়া, জেনারেল এরশাদের ক্ষমতা দখল সম্পূর্ণ অবৈধ।’

তিনি বলেন, ‘এখন থেকে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। তাছাড়া তাদের কিছু দোসর আছে। আর কিছু লোক আছে যারা এখানে বিভিন্ন অপরাধ করে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে। সেখান থেকে টাকা পায় কোথায়? সেটাই প্রশ্ন। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি এর মাধ্যমেই তারা অপপ্রচার চালায়।

কাজেই এই গুজবে কান না দেয়া, অপপ্রচারে কান না দেয়া, তার উপযুক্ত জবাব দেয়া, সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। সেই সাথে সাথে আমাদের উন্নয়নের কথা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। আমি বিশ্বাস করি আপনারা যদি মানুষের কাছে যান আর যদি বলেন- আপনাদের জন্য এই কাজ করেছি- ভবিষ্যতে এটা করা হবে তাহলে অবশ্যই মানুষ আওয়ামী লীগকে ভোট দিবে, নৌকা মার্কায় ভোট দিবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সামনে আমাদের নির্বাচন, এ ব্যাপারে এখন থেকেই সকলকে প্রস্তুতি নিতে হবে। আমাদের একমাত্র শক্তি হচ্ছে জনগণ। জনগণের শক্তিই হচ্ছে আওয়ামী লীগের একমাত্র শক্তি। কারণ আওয়ামী লীগ এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কোনো দিন কারও কাছে মাথা নত করেনি। নিজের জীবনকে কবুল করে তিনি এই দেশের মানুষের মুক্তি এনে দিয়েছেন। আমরা তারই আদর্শের অনুসারী। আমরা কারও কাছে মাথা বিকাই না, মাথা নত করি না।’

তিনি বলেন, ‘আর তাদের মুখে যখন বড় বড় কথা শুনি তখন অবাকই লাগে। তারা নাকি অনেক কিছু করবে, ক্ষমতায় তো ছিল- লুটপাট করেছে, মানিলন্ডারিং করেছে, পাচার করেছে। নিজেদের ভাগ্য তারা গড়েছে, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য তারা গড়েনি। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য গড়া হয়েছে শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় এসেছে তখনই।

একটা কথা মনে রাখতে হবে ২০১৪ নির্বাচন ঠেকাতে এই বিএনপি ৫২৫টির মত স্কুল পুড়িয়েছিল, ৩২৫টি গাড়ি পুড়িয়েছিল, বাস-ট্রাক, প্রাইভেট কার, ২৯টি লঞ্চ, ৭০টি সরকারি অফিস, ছয়টি ভূমি অফিস, তিন হাজার মানুষকে আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে, পাঁচশত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে ওই বিএনপি জামায়াত জোট, সেই পোড়া মানুষগুলো এখনও আছে, তাদের কী অপরাধ ছিল?’

মানুষ পুড়িয়ে আর বাসে আগুন দিয়ে সরকার পতন হবে না জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘সাধারণ মানুষ বাসে যাচ্ছে, তাদের পুড়িয়ে মারা হচ্ছে, এটা কী এটা তাদের আন্দোলন, তাদের আন্দোলন মানুষকে পুড়িয়ে মারা, মানুষের জন্য কাজ করা না। তারা ভাবছে, মানুষকে আগুন দিয়ে পুড়ালে, গাছ কাটলে আর বাসে আগুন দিলেই সরকার পড়ে যাবে। সরকার এত কাঁচা না, আওয়ামী লীগের শিকড় প্রথিত এই মাটিতে।

কাজেই আওয়ামী লীগ সংগঠন এই দেশের মাটি ও মানুষের মধ্য থেকে উঠে এসেছে। সেখান থেকে আমরা কাজ করি মানুষের জন্য কারণ মানুষের বিশ্বাস আস্থা আছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কিছু দিন আগে আমাদের হুমকি দিল- ১০ই ডিসেম্বর না কি সরকার উৎখাত করবে। কী করতে পেরেছে? কিছু করতে পেরেছে, কেন পারেনি, কারণ মানুষের সমর্থন পায়নি। কিন্তু খালেদা জিয়া ভোট চুরি করার পর আমরা কিন্তু উৎখাত করেছি। সেটা মাথায় আছে, ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি আর ২০০৬ সালে সেটাও তো নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছিল। এক কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোট সেটাও কিন্তু করতে পারেনি। উৎখাত হতে হয়েছে। চোরের মায়ের বড় গলা, বড় বড় কথা বলে বিএনপি।

‘ঘর দিয়েছি, সেখানে কে বিএনপি কে আওয়ামী লীগ, কে কোন পার্টি করে আমরা কিন্তু তা দেখিনি। সেখানে কে ভূমিহীন আমরা কিন্তু সেটাই দেখেছি। ভূমিহীনদের ঘর দিয়েছি। দল মত সেটা তাদের ইচ্ছা, আমি যখন কাজ করেছি দেশের মানুষের জন্য করেছি। আমাদের উন্নয়নটা সমগ্র বাংলাদেশে সেখানে কোন অঞ্চলে ভোট পেয়েছি, কোন অঞ্চলে ভোট পাইনি, সেটা দেখিনি। বাংলাদেশের মানুষ ভালো থাকবে উন্নত জীবন পাবে, জাতির পিতা যেমন চেয়েছিল সেটাই।’

এছাড়া, দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দায়িত্ব আছে, যেটুকু আমরা করি, সেটুকু মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া। বাংলাদেশের যে পরিস্থিতি ছিল আওয়ামী লীগ ২০০৯ এ সরকার গঠন করেছে বলেই, এই সাড়ে ১৪ বছর বিএনপির অগ্নি সন্ত্রাস জ্বালাও-পোড়াও, অবরোধ কর্মসূচি অনেক কিছুই তারা করেছে। কিন্তু জনগণের কাছে আমাদের গ্রহণযোগ্যতা আছে বলেই, আওয়ামী লীগ সংগঠন অনেক শক্তিশালী সংগঠন বলেই, তাদের কোনো আন্দোলন ক্ষতি করতে পারেনি বরং তারাই ধীরে ধীরে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে!

আজকে সাজাপ্রাপ্ত, এতিমের টাকা আত্মসাৎ করে খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত, আর ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারি, দুর্নীতি-মানিলন্ডারিং এবং অবৈধ সম্পদের জন্য সাজাপ্রাপ্ত তারেক জিয়া। লন্ডনে থাকা তারেক জিয়া এবং তার বউও সাজা পেয়েছে, এই মামলা তো আওয়ামী লীগ করে নাই। এই মামলা তো খালেদা জিয়ার প্রিয় ইয়াজউদ্দিন, ফখরুদ্দিন, মইনউদ্দিরাই করেছে। সেই মামলা চলতে চলতে এত বছরে রায় বেরুচ্ছে ইদানীংকালে।”

ড. ইউনুসের প্রতিষ্ঠানকে ইঙ্গিত করে টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক অর্থনীতিবিদ লিখেছেন কোন এক বিশেষ এনজিও ক্ষুদ্র ঋণে দেশে দারিদ্র কমেছে। আওয়ামী লীগ ২০০৯ এ সরকার গঠন করে ২০২৩ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্র পরিচালনা করেই তো আজকে আমরা দারিদ্রের হার ১৮ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। কোন বিশেষ এনজিওর ক্ষুদ্র ঋণে যদি দারিদ্র কমে তবে এই ১৮ ভাগ আগে কেন হয়নি। যারা বলে এনজিও ক্ষুদ্র ঋণে দারিদ্র কমেছে তারা কোন অংকে হিসাব করেন। দারিদ্র বিমোচন হয়েছে কারণ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে। আওয়ামী লীগের প্রতিটি কর্মসূচি গণমুখী।

তিনি বলেন, জনগণকে দারিদ্র মুক্ত করা, জনগণের শিক্ষার হার বাড়ানো, স্বাস্থ্য সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া, কর্মসংস্থানের জন্য বেসরকারি খাত উন্মুক্ত করে দেয়া, তৃণমূল পর্যন্তÍ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের ফলেই এই দারিদ্রের হার হ্রাস পেয়েছে। কোন এনজিও ক্ষদ্র ঋণ দিয়ে দারিদ্র হ্রাস পায় নাই। শেখ হাসিনা আরো বলেন, উচ্চ সুদে যারা কাজ করবে তারা দারিদ্র মুক্ত হতে পারে না বরং তারা ঋণগ্রস্থ হয়ে, ঋণের ওপরই জীবন যাপন করতে হয়। কখনো তাদের আত্মহত্যা করতে হয়েছে, কখনো জমি-জমা সব বেচতে হয়েছে।

আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র, মানুষের ভোটের অধিকারে বিশ্বাস করে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ২০০১ সালে সর্বপ্রথম বাংলাদেশের ইতিহাসে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিল আওয়ামী লীগ। তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে আসি। তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, আওয়ামী লীগ মানুষের ভোটের অধিকারে বিশ্বাস করে, সে কারণে আওয়ামী লীগ সুষ্ঠুভাবেই ক্ষমতা হস্তান্তর করে থাকে।

Share This