বৃহস্পতিবার, ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সংসারের অভাব মিটাতে কৃষি কাজে ঝুঁকছেন নারীরা

সংসারের অভাব মিটাতে কৃষি কাজে ঝুঁকছেন নারীরা

১০৬ Views

            মো. আনোয়ারুল ইসলাম\ কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার নারীরা ঘরের কাজের পাশাপাশি কৃষিকাজ করে আসছে বহুকাল ধরে। রবিশস্য উৎপাদন, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি পালন, সবজি ও মাছ চাষ, বনায়ন- এসব কাজে এ উপজেলার নারীরা বর্তমানে পুরুষের পাশাপাশি সমান অবদান রাখছেন। বাড়ির পাশে কিংবা উঠানে অনাবাদি জায়গায় শাক-সবজি, ফলফলাদির আবাদ করে সংসারে বাড়তি রোজগারের পথ করে নিচ্ছেন তাঁরা। এতে পরিবারের খরচ মিটানোর পাশাপাশি উপজেলার সামগ্রিক অর্থনীতিতেও তাঁদের অবদান বেড়েছে।

            উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নারীরা বাড়ির আঙিনায় ও পতিত জমির পাশাপাশি জমিতেও ফসলের বপন প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে ফসল উত্তোলন, বীজ সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ এমনকি বিপণন পর্যন্ত করে আসছেন। পুরুষ কৃষকদের পাশাপাশি কৃষি উপকরণ, সার বীজ, কৃষক কার্ড ও কৃষি ঋণের সুবিধা এখন নারীরাও পাচ্ছেন।

            উপজেলা কৃষি কার্যালয় আরও জানায়, উপজেলার আটটি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় প্রকল্প থেকে দেয়া ৫২০টি পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন করা হয়েছে। এসব পুষ্টি বাগানে বীজ বপন থেকে শুরু করে নিয়মিত পরিচর্যাসহ সব কাজ পরিবারের নারীরাই করেন। এ ছাড়া চলতি মৌসুমে উপজেলার কৃষকদের মধ্যে ৮৮০ জনকে বিনা মূল্যে সরিষা, পেঁয়াজ, ভুট্টা ও সূর্যমুখী বীজ দেয়া হয়। এর মধ্যেও অনেক নারী কৃষক সরকারি প্রণোদনার এসব বীজ পেয়েছেন।

            উপজেলার মালাপাড়া মাঠে গিয়ে দেখা হয় কৃষানি নাসিমা বেগমের সঙ্গে। তাঁর আবাদ করা লালশাকের জমিতে আগাছা পরিচর্যা করছিলেন। কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমি ৩০ শতক জমিতে লালশাকের বীজ ফেলেছি। এতে আমার সাত হাজার টাকা খরচ হয়েছে। লালশাকের চারা উঠেছে। এখন এর থেকে আগাছা পরিষ্কার করতেছি। এসব শাক বিক্রির উপযোগী হলে ৩০ হাজার টাকা বিক্রি করা যাবে। এতে পরিবারে কিছুটা হলেও আর্থিক জোগান দিতে পারব।’

            দুলালপুর সিংহারচাড়া গ্রামের কৃষানি রুবি আক্তার বলেন, ‘ছোট থেকে আমাদের মা-চাচিদের দেখেছি বাড়ির আঙিনায় ঘরের সামনে বিভিন্ন সবজির বীজ, আদা, হলুদ লাগাত। সেগুলোতে আমরা ভাই-বোনেরা সহযোগিতা ও পরিচর্যা করতাম। ছোটবেলা থেকেই কৃষির সঙ্গে জড়িত। এখন নিজের সংসার হয়েছে, এখানে এসেও পরিবারের চাহিদা মেটানোর জন্য টুকটাক বিভিন্ন সবজির চাষ করতাম। তা দিয়ে পরিবারের কোনো রকম চাহিদা মিটত। তবে কৃষি অফিসের সহযোগিতায় তিন বছর যাবৎ বাড়ির আঙিনায় সবজি চাষ করেছি। এর ফলে নিজেদের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বাড়তি সবজি বিক্রি করে আমার পরিবারের একপ্রকার বাড়তি আয়ের ব্যবস্থা হয়েছে।’

            উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মোসা. তাহমিনা হক পপি বলেন, কৃষি উন্নয়ন ও কৃষি অর্থনীতি টিকিয়ে রাখার লক্ষ্যে নারী কৃষকদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় অগ্রাধিকার দিয়েছে সরকার। দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে হলে অবশ্যই নারীর প্রতি বৈষম্যহীন সব উন্নয়নধারা নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশ সংবিধানে নারী-পুরুষনির্বিশেষে সব নাগরিকের সমান অধিকারের নিশ্চয়তার কথা বলা হয়েছে। এ লক্ষ্যেই নারীর সম-অধিকার ও সমমূল্যায়নের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। নারী কৃষকদের এগিয়ে নিতে সরকারের পাশাপাশি সবার সচেতনতা দরকার।

            উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাহবুবুল হাসান বলেন, ‘ব্রাহ্মণপাড়ায় প্রায় ৭২-৭৫ হাজার কৃষক পরিবার আছে। এসব পরিবারের নারীরাও কোনো না কোনোভাবে কৃষির সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। এছাড়া এখানকার অনেক নারী নিজেরাই কৃষিতে সব মৌসুমে সরাসরি সম্পৃক্ত থেকে চাষবাস করেছেন। আমরা তাঁদের বিভিন্ন সময়ে প্রণোদনার বিভিন্ন বীজ, সার ও বরাদ্দের সুযোগ-সুবিধা দিয়েছি। অনেক কৃষানি তাঁদের বাড়ির আঙিনায় ও জমিতে উৎপাদিত ফসল বিক্রি করে পরিবারে আর্থিক চাহিদা পূরণ করছেন।’

            কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, প্রান্তিক সুবিধাদি ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে কিষানিদের অগ্রাধিকার দেয়াসহ আরও বেশ কিছু পদক্ষেপ নিলে উন্নয়নের পথ সুগম হবে। নারীর ভাগ্যোন্নয়ন হলে নারীরা এ দেশের কৃষি উন্নয়নসহ অন্য উন্নয়নকে আরও বেগবান করতে পারবেন।

Share This