রবিবার, ১৭ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শবেবরাতে যেসব আমল করবেন

শবেবরাতে যেসব আমল করবেন

৭৯ Views

শবেবরাত হলো ক্ষমার রাত। মানুষ ইচ্ছায়-অনিচ্ছায়, শয়তানের কুমন্ত্রণায়, নফসের তাড়নায় বিপথগামী হয় পড়ে, পাপাচারে লিপ্ত হয়। মানুষের পাপ মোচনের জন্য আল্লাহ তওবা ও ইস্তিগফারের ব্যবস্থা রেখেছেন। বিশেষ কিছু দিবস ও রজনি দিয়েছেন, এর মধ্যে অন্যতম ও বিখ্যাত রজনি হলো-শবেবরাত।

আরবি অষ্টম মাস শাবানে চৌদ্দতম তারিখ দিবাগত রাত তথা পবিত্র শবেবরাতে সূর্যাস্তের পর থেকে শেষ রাত পর্যন্ত মহান আল্লাহ পৃথিবীর প্রথম আকাশে এসে তার বান্দাকে মায়া আর দয়া নিয়ে ডাকতে থাকেন-কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আছ কি? আমার কাছে ক্ষমা চাও-আমি ক্ষমা করে দেব।

কারও রিজিকের প্রয়োজন আছে কি? আমার কাছে চাও-আমি রিজিক দেব। কোনো বিপদগ্রস্ত আছ কি? আমার কাছে মুক্তি চাও, আমি বিপদমুক্ত করে দেব!

মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি কুরআন অবতীর্ণ করেছি ‘বরকতময় রাতে’। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। এ রাতে গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত করা হয়।’ (সূরা দুখান : ২-৩)

বিখ্যাত তাফসিরবিদদের মতে ‘বরকতময় রাত’ মানে শবেবরাত। মহান আল্লাহ শবেবরাতে সবকিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। শবেকদরে নির্দিষ্ট কিছু লোককে সেসব বিষয়ে দায়িত্ব অর্পণ করেন। (তাফসিরে কুরতুবি।)

আমাদের উচিত অপ্রয়োজনে সময় ব্যয় না করে এ পবিত্র রজনিতে আল্লাহর ইবাদত বন্দিগিতে আত্মনিয়োগ করা। তাহিয়্যাতুল অজু, দুখুলিল মাসজিদ, আউওয়াবিন, তাহাজ্জুদ, সালাতুত তাসবিহ, সালাতুল হাজাত ও অন্যান্য নফল নামাজ করা।

কারণ নফল ইবাদতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো-নামাজ। প্রতিটি নফল ইবাদতের জন্য তাজা অজু বা নতুন অজু করা মোস্তাহাব। অত্যধিক নফল নামাজ এ রাতের শোভাবর্ধন করে। আমাদের উচিত নামাজে কিরাত ধীরগতীতে পড়া। রুকু-সেজদা দীর্ঘ করা।

অধিক পরিমাণে কুরআন তেলাওয়াত করা। দরুদ শরিফ পড়া। অধিক পরিমাণে তাওবা-ইস্তিগফার করা। তাসবিহ তাহলিল, জিকির-আজকার ইত্যাদি ইবাদতে মগ্ন থাকা। নিজের জন্য, পিতা-মাতার জন্য, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবের জন্য, সব মুমিন মুসলমান এবং দেশ ও জাতির কল্যাণের জন্য মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা।

মহান আল্লাহর কাছ থেকে আমাদের পাপ মোচন করানো এবং ভাগ্যোন্নয়নের জন্য প্রার্থনা করার এটাই শ্রেষ্ঠ সুযোগ। শবেবরাত রজনিতে নিজের যাবতীয় গোনাহের জন্য তাওবা করে রাব্বুল আলামিনের দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করা। নিজের মনের নেক আশা-আকাঙক্ষা পূরণের জন্য ও মৃতদের মাগফিরাতের জন্য বেশি বেশি করে দোয়া করা।

নফল নামাজ, কুরআন তেলাওয়াত, জিকির-আজকার, দোয়া-দরুদ, তাওবা-ইসতিগফার, দান-সদকা, উমরি কাজা নামাজ, কবর জিয়ারতসহ ইত্যাদি নফল আমলের মাধ্যমে রাতগুজার করা। তবে মাকবারে তথা কবরে যাওয়া জরুরি নয়। কবর জিয়ারতকে রুসম বা রেওয়াজে পরিণত করা যাবে না।

কারণ রাসূল (সা.) চুপিসারে একাকী জান্নাতুল বাকিতে কবর জিয়ারত করেছেন। আয়েশা সিদ্দিকা (রা.)-কে নিদ্রা থেকে জাগ্রত করেননি এবং পরেও কবর জিয়ারত করার কথা বলেননি। তবে দলবদ্ধ ছাড়া একাকীভাবে কবর জিয়ারতে কোনো বাধা নেই।

আনুষ্ঠানিকতা ও জামাত ছাড়া একাকীভাবে সামর্থ্যানুযায়ী নফল ইবাদত-বন্দেগি করা। মসজিদে গিয়ে সমবেতভাবে ইবাদতের প্রয়োজন নেই।

শবেবরাতের আলাদা কোনো নামাজ তথা নির্দিষ্ট সূরা দিয়ে নির্দিষ্ট রাকাত পড়ার নিয়ম ইসলামে নেই। শবেবরাতের নামে রাস্তাঘাটে আতশবাজি, ফটকাবাজি, ঘর আলোকসজ্জা, রাতে মসজিদে অতিরিক্ত আলোকসজ্জা করা, মরিচলাইট, তারাবাতি, আগরবাতি, মোমবাতি, গোলাপজল, কবরে পুষ্প অর্পণ, বাসাবাড়িতে খিচুড়ি পাকানো, হালুয়া রুটি, তাবারুক তৈরি ও মিষ্টান্ন বিতরণের ধুমধামে মত্ত থাকা, রাস্তা-হাটবাজারে যুবকদের আড্ডা ইত্যাদি ইসলাম পরিপন্থি কাজগুলো করা যাবে না।

লেখক: মুফতি, লেখক ও গবেষক, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ

Share This