কুমিল্লা শহরে যানজটের কারণে রাস্তা পারাপারে দারুন ভোগান্তি
আবু মো. ফজলে রোহান\ কুমিল্লা শহরে যানজটের ভোগান্তি দিনের পর দিন বাড়ছেই। এতে শহরবাসী দারুন ত্যাক্ত-বিরক্ত হচ্ছেন হর-হামেশাই। নিস্তার পাচ্ছেন না কিছুতেই।
মূলত: কুমিল্লা দেশের একটি সিটি কর্পোরেশন। এর আয়তন ৫৩.০৪ বর্গ কিলোমিটার। এর মধ্যে মূল শহরের আশেপাশের এলাকাগুলো সিটি কর্পোরেশনের বাইরে পড়ে গেছে। সিটি কর্পোরেশনের বাইরে পড়ে যাওয়া শহর এলাকাগুলোকে উপশহর হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। ২৭টি ওয়ার্ড বিশিষ্ট কুমিল্লা মেগাসিটির মধ্যে বিস্তৃত, যার আওতায় দশ লক্ষাধিক মানুষ বসবাস করে থাকেন।
কুমিল্লা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত। এই নগরীর পাশেই রয়েছে গোমতী নদী। এক সময় প্রাচীন বাংলার শহরগুলোর মধ্যে কুমিল্লা ছিলো অন্যতম।
অথচ, ছোট্ট এই শহরে যানজট যেন শহরবাসীর পিছু ছাড়ছে না। ১০ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে সময় লাগছে ৩০ মিনিটেরও বেশি। মাত্র ১ হাজার প্যাডেলে চালিত রিকশার অনুমোদন থাকলেও শহরের অলিগলিতে ব্যাপকহারে বেড়েছে সিএনজি-মিশুক-অটোরিকশা। অথচ এসব ছোট যানের বেশির ভাগই শহরে চলাচলের অনুমতি নেই। অবৈধ এসব যানবাহন যেন কর্তৃপক্ষের ধরাছোঁয়ার বাইরে। মাঝে মাঝে পুলিশি তদারকি থাকলেও বাস্তবে তেমন সুফল মিলছে না।
অভিযোগে বলা হয়ে থাকে যে, কুমিল্লা শহরে লাইসেন্সবিহীন যানবাহনগুলো অবৈধ চাঁদা দিয়ে টোকেনে চলাচল করে থাকছে। এতে পরিবহন রাজস্ব হারাচ্ছেন সিটি করপোরেশন।
ওদিকে, ছোট্ট এই শহরে রাস্তার প্রসারতা বাড়ানো হলেও আসলে যানজট নিরসন সম্ভব হয়নি। রাস্তার দ্বারে যত্রতত্র পার্কিং, মিশুক-সিএনজির বেপরোয়া প্রতিযোগিতাসহ সামগ্রিক অব্যবস্থাপনা কুমিল্লা শহরকে দারুন বিশৃঙ্খল করে তুলেছে। শুধু তাই নয়; দ্রæতগতির এসব মিশুকের ধাক্কায় প্রতিদিনই কেউ না কেউ আহত হচ্ছেন। হাত-পায়ে আঘাত পেয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করে নিতে হয়েছে অনেক পথচারীকে। শহরের অধিকাংশ রাস্তা পারাপারে এখন এক আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তাছাড়া, কুমিল্লার হেলিকপ্টারখ্যাত এসব মিশুক পরিবহনগুলোর চালকেরা স্টিয়ারিংয়ে বসলে ভুলেই যান যে, এটা তিন চাকার একটি বাহন। তাঁরা নিজেদেরকে যেন পাইলট মনে করে থাকেন! যার ফলে এসব বাহনের অনিয়ন্ত্রিত গতি কোনোভাবেই থামছে না।
এতে করে কুমিল্লা শহরের যানজটের কারণে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন আশপাশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া শিক্ষার্থীরাও। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বাসগুলো নগরীর মূল পয়েন্ট পাড়ি দিতে হরহামেশাই দারুন ভোগান্তি পোহাতে হয়।
ওদিকে, কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সময়ে অবৈধ অটোরিকশা নিষিদ্ধ না করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে চেয়েছিলেন। কিন্ত দেশের অন্য কোনো শহরে এমন নজির নেই; কেবল কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের এমন সিদ্ধান্তে অনেকে হতভম্ব হয়েছিলেন বটে!
এহেন প্রেক্ষিতে ইতিহাস-ঐতিহ্যের শহর এই কুমিল্লাতে অবৈধ ছোট পরিবহনগুলো সরিয়ে প্রয়োজনে গণপরিবহন সেবা চালু করা এখন সময়ের দাবিই বটে! পাশাপাশি যত্রতত্র পার্কিংয়ের বিষয়ে নজর দেয়াও অতীব আবশ্যক হয়ে পড়েছে। কুমিল্লার জনভোগান্তি দূরীকরণে সুপরিকল্পিত নগরায়ণ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন নগরবাসীরা সুত্র: প্রথম আলো