শনিবার, ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মনোহরগন্জে নূরুজ্জামান ভূঁইয়া খোকন স্মৃতি সংস্থার উদ্যোগে শিক্ষা প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ৫৫ জন শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদান

মনোহরগন্জে নূরুজ্জামান ভূঁইয়া খোকন স্মৃতি সংস্থার উদ্যোগে শিক্ষা প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ৫৫ জন শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদান

মনোহরগঞ্জ উপজেলার বাইশগাঁও ইউনিয়নের সাবেক সফল চেয়ারম্যান নূরুজ্জামান ভূঁইয়া খোকন স্মৃতি সংস্থার উদ্যোগে গত শুক্রবার (১লা মার্চ) ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে সংস্থার শিক্ষা প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ৫৫ জন শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদান করা হয়। সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, সংস্থার উপদেষ্টা মনোহরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাস্টার আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন, বিশিষ্ট সাংবাদিক লাকসামবার্তা পত্রিকার সম্পাদক শহীদুল্লাহ ভূঁইয়া, সংস্থার সদস্য মরহুম নুরুজ্জামান ভূঁইয়া খোকনের ছোট মেয়ে আমেরিকা প্রবাসী রাবেয়া ভূঁইয়া, মরহুমের ছোট জামাতা আমেরিকা প্রবাসী আইটি বিশেষজ্ঞ ফয়সাল নাহিয়ানসহ কার্যকরী পরিষদের সদস্যবৃন্দ, গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, বিশ্ববিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় এবং স্থানীয় মান্দারগাঁও উচ্চ বিদ্যলয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সাল থেকে এ সংস্থার মাধ্যমে এলাকার মেধাবী এবং দরিদ্র শিক্ষার্থীদের উৎসাহ প্রদানে শিক্ষা সহযোগিতা হিসেবে নগদ টাকা, বিভিন্ন জনহৈতিষীমুলক কাজ যেমন- দরিদ্র ও অসহায়দের সাহায্য, বিয়েতে সহযোগিতা, দরিদ্র এবং বৃদ্ধদের চিকিৎসা সহায়তা, গৃহনির্মান, বৃক্ষ রোপন কর্মসূচি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দান-অনুদান, ধর্মীয় উপাসনালয়ে দানসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় দিবসসমূহ যথাযথভাবে পালন করে আসছে। এ সকল কার্যক্রমে অত্র সংস্থার সভাপতি, তোফাজ্জল হোসেন ভূঁইয়া (পিন্টু), তাঁর পরিবারবর্গ এবং আত্মীয়-স্বজনরা আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে আসছেন। ভবিষ্যতেও এই সংস্থার কার্যক্রম সুন্দরভাবে চালিয়ে নেয়ার জন্য সভাপতি এলাকার মহতি ব্যক্তি এবং দানশীলদের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেছেন।

তিনি বলেন, শিক্ষা এবং সুশিক্ষাই একটি মেধাবী জাতি তৈরি করতে পারে- যারা পরবর্তীতে একটি রাষ্ট্র এবং সুন্দর সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারবে। এছাড়া, অনুষ্ঠানে লাকসামবার্তা পত্রিকার সম্পাদক শহীদুল্লাহ ভূঁইয়া এক লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেন- “আসলে অত্র মান্দারগাঁও গ্রামের কৃতি ব্যক্তিত্ব বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম নূরুজ্জামান ভূঁইয়া খোকন সাহেবের কর্মময় জীবনের স্মৃতির উপর অনেক কথাই বলার আছে! বলার আছে তাঁর অনেক গৌরবময় ইতিহাসের কথা! দেশ স্বাধীন হওয়ার আগ থেকেই খোকন সাহেব সমাজে অনেক ভূমিকা পালন করে এসেছিলেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্বে ১৯৬৬ সালে অনেকটা তাঁর উদ্যোগেই মান্দারগাঁও হাইস্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। ৫২ বছর আগে ১৯৭১ সালে মরহুম নূরুজ্জামান ভূঁইয়া খোকন সাহেব অজপাড়াগাঁয়ের এই মান্দারগাঁও থেকেই মহান মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এক গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়েই জীবন বাজি রেখে জীবন-যৌবন ও পরিবার-পরিজনের মায়া তুচ্ছ করে তিনি মহান মুক্তি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। বলা বাহুল্য, আজকের দিনে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। আগে এই দেশ পশ্চিম পাকিস্তানের শাসনাধীনে ছিল। কিন্তু ১৯৭১ সালে সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামে ৩০ লক্ষ বাঙ্গালীর জীবন বিসর্জনের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের এই স্বাধীনতা অর্জন করতে পেরেছি। মুক্তিযুদ্ধে এ দেশের অনেক মানুষ জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছিলেন। সেই সঙ্গে বর্তমান মনোহরগন্জ উপজেলার ১৪৫ জনের মধ্যে তেমনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরুজ্জামান ভূঁইয়া খোকন সাহেবের নামও স্বাধীনতার ইতিহাসের পাতায় স্থান পেয়েছিল। এটি লাকসাম-মনোহরগন্জ এলাকাবাসীরও বড় গৌরবের ফসল। এ জন্য তাঁর নাম ইতিহাসের পাতায় কেয়ামত পর্যন্ত লেখা থাকবে। অথবা যত দিন বাংলাদেশ থাকবে- ততদিন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরুজ্জামান ভূঁইয়া খোকনের নাম ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

বাংলাদেশের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের সকল নাগরিকের হৃদয়ে তাঁদের অবদান থাকবে অমলিন। বাংলাদেশ সরকার মহোদয় গণও এ সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যোগ্য ও যথোপযুক্ত সম্মানের জায়গায় আসীন করেছেন এবং ভবিষ্যতেও আরো করবেন বলেই প্রত্যাশা করি। মূলত: তৎকালে এ সকল নিরস্ত্র বীর মুক্তিযোদ্ধাদের শক্তি ছিল- শুধু জাতির পিতার ৭ই মার্চের সেই ভাষণ- “তোমাদের যা আছে তাই নিয়েই শত্রুর মোকাবিলা করো।” এরপর জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানরাই নিজেদের জীবনের মায়া ত্যাগ করে পাকিস্তানি বর্বর ও এদেশীয় দোসরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছিলেন। যার ফলে বাঙ্গালিরা আজ সমাজে মাথা উঁচু করে চলতে পারছেন, আগামী দিনগুলোতেও তাঁদের আরো সম্মানিত করা রাষ্ট্রেরই দায়িত্ব। স্বচ্ছলভাবে জীবন যাপন করার জন্য তাদের অলি-ওয়ারিশদেরকে মুক্তিযোদ্ধা-ভাতা, চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা আরো বৃদ্ধি করার দাবীও উত্থাপিত হচ্ছে। এতে করে এমন ন্যায্য দাবী সরকার বিবেচনা করতেও পারেন! তবে, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি এ দেশের এবং গোটা দেশবাসীর কৃতজ্ঞতার কোনো শেষ নেই।

অবশ্য উল্লেখযোগ্য যে, মৃত্যুর সময় এসকল বীর সেনাদের দেওয়া হচ্ছে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার।’ তবে, এখন সময় এসেছে- নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যাওয়ায় নেতৃত্ব দেওয়া। প্রকৃতপক্ষে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যতদিন অবশিষ্ট থাকবে, ততদিন এ দেশকে কেউ ব্যর্থতার দিকে ঠেলে নিতে পারবে না। তাই আগামী দিন গুলোতেও দেশের প্রত্যেক আন্দোলন-সংগ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান নি:সন্দেহে অবিস্মরণীয় হয়েই থাকবে।” অবশেষে শহীদুল্লাহ ভূঁইয়া আরো আশা প্রকাশ করেন যে, ‘আমরা মরহুম নূরুজ্জামান ভূঁইয়া খোকনকে চিরদিন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবো এবং মহান আল্লাহ পাকের দরবারে তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করবো।’ তিনি উপস্থিত সকলের প্রতি বিশেষ করে উক্ত সংস্থার উপদেষ্টা আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী, মরহুমের কৃতি সন্তান এবং অনুষ্ঠানের সভাপতি মি. তোফাজ্জল হোসেন ভূঁইয়া পিন্টু ও নূরুজ্জামান ভূঁইয়া খোকন স্মৃতি সংস্থা’র সেক্রেটারী মাষ্টার মিজানূর রহমান ভূঁইয়া নয়নসহ অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলের প্রতি আন্তরিক মোবারকবাদ জ্ঞাপন করছেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেছেন, মান্দারগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজী শিক্ষক ও সংস্থার সেক্রেটারী মাস্টার মিজানুর রহমান ভূঁইয়া।

Share This