সোমবার, ১১ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

রমজান ঘিরে অস্থির মসলার বাজার

৭২ Views

            মরিয়ম সেঁজুতি\ প্রতি বছরই রমজান সামনে রেখে ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে যায়। এবারো তার ব্যতিক্রম হয়নি। এমনকি গরম মসলার বাজারেও একই অবস্থা। রমজানের আগেই জিরা, এলাচদানার মতো মসলার দাম বেড়েছে অনেক। তবে দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে নতুন কৌশল নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সরকার ব্যবস্থা নিতে পারে- এমন ভাবনা থেকে আগেভাগেই বাড়ানোর কৌশল নিয়েছে তারা। এভাবেই নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানাচ্ছিলেন রমজান সামনে রেখে বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা রোকাইয়া সুলতানা ইতি। তিনি বলেন, দুই সপ্তাহ আগে থেকেই বেড়ে গেছে গরুর মাংসসহ রোজায় দরকারি সব পণ্যের দাম। মসলার বাজারে গিয়েই ব্যাগ ফাঁকা। ১৫ দিনের ব্যবধানে এলাচ-লবঙ্গের দাম কেজিতে বেড়েছে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা। বাজারে দেখা গেছে, রোজা সামনে রেখে এরই মধ্যে চড়া মসলার বাজার। বাজারে কোনো কোনো মসলার দাম বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। ১৫ দিনের ব্যবধানে এলাচ-লবঙ্গের দাম কেজিতে বেড়েছে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা। গোলমরিচ, দারুচিনির দামও বাড়তি। এর কারণ জানেন না খোদ বিক্রেতারাও। তাদের দাবি, সবকিছু জানেন আমদানিকারকরা। তবে আমদানিকারকরা কারণ হিসেবে রমজান কিংবা চাহিদা বাড়ার চেয়ে আন্তর্জাতিক বাজার ও ডলারের দামকে বেশি দায়ী করছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডলারের সংকট ও অতিরিক্ত মসলার দাম বাড়ার ক্ষেত্রে বেশি প্রভাব ফেলছে। আবার আমদানি করা মসলার দাম বাড়ায় এর প্রভাব পড়েছে দেশে উৎপাদিত অন্য মসলার ওপর। অন্য পণ্যের দামও বাজারে বেশি থাকায় অনেকে মসলা কেনাও কমিয়ে দিয়েছেন।

            মূলত, দেশের মসলার বাজার আমদানির ওপর নির্ভরশীল। চাহিদার সামান্যই দেশে উৎপাদন হয়। তথ্য অনুযায়ী, দেশে ৭ ধরনের গরম মসলার চাহিদা বেশি। এগুলো হলো- এলাচ, জিরা, দারুচিনি, লবঙ্গ, গোলমরিচ, জায়ফল ও জয়ত্রী। তবে এসব মসলা পুরোপুরিই আমদানিনির্ভর। দেশে মসলার মধ্যে তেজপাতা ও ধনিয়া উৎপাদন হচ্ছে। ডলার সংকটের কারণে মসলা আমদানিকারকদের অনেকেই এলসি খুলতে পারেননি। এতে মসলা আমদানি কমেছে। তবে ডলার সংকটের কারণে দাম যতটা বাড়ার কথা; অসাধু ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে বাড়িয়েছে তার চেয়ে বেশি। ব্যবসায়ীদের অনেকেই অভিযোগ করেছেন, সাধারণ ব্যবসায়ীরা এলসি খোলার সুযোগ না পেলেও প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের অনেকে ঠিকই এলসি খোলার সুযোগ পাচ্ছে।

            ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, দেশে গত এক বছরের ব্যবধানে রসুনের দাম ৫০ শতাংশ, আদার দাম ৬০ দশমিক ৬১ শতাংশ বেড়েছে। টিসিবির ওয়েবসাইটে দেয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের একই সময়ে অন্যতম গরম মসলা জিরা ৬০০-৭০০ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৯০০ টাকায়। দারুচিনি গত বছরের তুলনায় ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়। লবঙ্গ ১৭ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮০০ টাকায়, এলাচ (ছোট) প্রায় ৬০ শতাংশ বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩৫০০ টাকা। ধনে ৬২ শতাংশ বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২৬০ টাকা। দেশি জাতের রসুন ১৪০ টাকায় বিক্রি হলেও ৫০ শতাংশ বেড়ে বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকায়। যদিও টিসিবির এ দামের ব্যবধানের চেয়ে সরজমিন নিত্যপ্রয়োজনীয় এসব পণ্যের দাম বাড়ার প্রবণতা আরো বেশি দেখা যায়। গরম মসলা ব্যবসায়ী হাসান মিয়া জানান, আগে প্রতি কেজি জিরা বিক্রি হতো ৪শ’ টাকায়। এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় এ মসলা মানভেদে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭৫০ থেকে ৯০০ টাকায়। তিনি বলেন, শুধু জিরা নয়; একমাস ধরে মরিচের গুঁড়া, হলুদ, লবঙ্গ ও জয়ত্রীর দামও বেড়েছে। মরিচ গুঁড়া এখন আড়াইশো থেকে বেড়ে ৫শ টাকা হয়েছে। শুকনো মরিচের দামও বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। একই অবস্থা হলুদের। কাঁচা হলুদের দামের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রতি কেজি হলুদ গুঁড়ার দাম বেড়েছে প্রায় একশ টাকা। এখন হলুদ বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ২৪০-৩৫০ টাকায়। একইভাবে লবঙ্গ ও জয়ত্রীর দাম দেড় থেকে দুই গুণ বেড়েছে। বাজারে প্রতি কেজি লবঙ্গ এখন ১২শ থেকে ১৪শ টাকা এবং জয়ত্রী ১৭শ থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত উঠেছে।

            বাংলাদেশ পাইকারি গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এনায়েত উল্লাহ বলেন, টাকার মান কমে যাওয়া, ডিউটি বেড়ে যাওয়া প্রভৃতি কারণে পণ্যের দাম একটু বাড়তি। তবে আগের তুলনায় দাম অনেক কমেছে বলে দাবি করেন তিনি। এনায়েত উল্লাহ বলেন, ডলারের দাম বাড়ায় মসলা ব্যবসায়ীরা দুইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। মসলার এলসি ও নিষ্পত্তিতে খরচ বেড়েছে। এছাড়া, মসলার ক্ষেত্রে ডলারের দামের ওপর ভিত্তি করে আমরা ডিউটি দিচ্ছি। তিনি বলেন, গরম মসলার ক্ষেত্রে প্রকারভেদে উচ্চ কাস্টমস ট্যারিফ নির্ধারিত রয়েছে। অর্থাৎ, আমি যে দামেই জিরা কিনি না কেন, জিরার ক্ষেত্রে ১৯শ ডলার মূল্য ধরে কাস্টমস ট্যারিফ নির্ধারিত হবে। সেটা হবে ডলারের চলমান রেটে। এই ব্যবসায়ী জানান, মসলার ক্ষেত্রে ৬০ শতাংশ থেকে শুরু করে ১১০-১২০ শতাংশ পর্যন্ত ডিটটি নির্ধারিত হয়েছে। এটা বেশি। এনায়েত উল্লাহ বলেন, এসব বিষয়ে আমরা সরকারকে বারবার বলেছি। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বৈঠকেও বলেছি। কিন্তু কোনো সুফল পাইনি। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে সমস্যার কারণেই মসলার দাম বাড়ছে।

Share This

COMMENTS