বুধবার, ২৫শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কানাডায় ভিজিট ভিসায় এসে হাজারো মানুষের অসহায় দশা

কানাডায় ভিজিট ভিসায় এসে হাজারো মানুষের অসহায় দশা

১১ Views

            মোহাম্মদ সাকিবুর রহমান খান\ ভিজিট ভিসা বেশ সহজ করার ফলে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে লাখো ভ্রমণপ্রত্যাশী বছরখানেক ধরে কানাডা আসছেন। ভিজিট ভিসা আরও লোভনীয় করার জন্য  কানাডা সরকার ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, যাঁরা এলএমআইএ (লেবার মার্কেট ইম্প্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট) অ্যাপ্রæভড চাকরি খুঁজে পাবেন, তাঁরা কানাডায় এসে অস্থায়ীভাবে কাজ করতে পারবেন। এলএমআইএ অ্যাপ্রæভড চাকরি হচ্ছে কানাডার মধ্য থেকে যাঁদের কাজ করার অনুমতি আছে তাঁদের মধ্যে সেই কাজের জন্য কাউকে যদি খুঁজে না পাওয়া যায়, সে ক্ষেত্রে ভিজিট ভিসায় এসে বা বিদেশিরা কাজ করতে পারবেন।

            যদিও কানাডায় বর্তমানে মোট জনসংখ্যার ৬ দশমিক ১ ভাগ লোক বেকার কিন্তু তারপরও সরকার এই সুযোগটি দিয়েছিলেন। অনেকেই মনে করেন কোভিড এবং ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবিলা করার জন্য কানাডা বিদেশিদের ভ্রমণে এনে তাঁদের অর্থনীতিকে চাঙা করার চেষ্টা করেছে। নিজস্ব অর্থনীতিকে চাঙা করার সিদ্ধান্তে অনেকেই না বুঝে কানাডায় এসে এখন বিপদে পড়েছেন। সেই সঙ্গে লাখো লোক পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আসার ফলে কানাডার আবাসন শিল্পেও একটি বড় ধরনের সংকট দেখা দিয়েছে। কানাডায় এত মানুষের থাকার জায়গা পর্যন্ত নেই।

            এখানে উল্লেখ্য যে, যারা কানাডায় এসে একবার ঢুকেছেন তাদের অধিকাংশই রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন। কানাডায় যদি কেউ জীবনের হুমকির কথা বলে কেউ রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন, তবে কানাডা তাদের রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়ে থাকেন। এতে করে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থীরা কানাডায় প্রটেকটিভ পারসন হিসেবে মর্যাদা পায় এবং কোনো কাজ খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত কম বেশি ৭০০ ডলার করে প্রতি মাসে সরকারের কাছ থেকে ভাতা পায়। তারা কাজ খুঁজে পেলে সেই ভাতা আর থাকে না। তখন নিজের আয়ের টাকা দিয়েই চলতে হয়।

অন্যদিকে, রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণ হলে তাঁদের প্রমাণ করতে হয় যে নিজ দেশে তাঁর জীবন হুমকির সম্মুখীন ছিলেন। রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে হয় ইমিগ্রেশন ল’ইয়ার। আর কেসে যদি সে হেরে যায় তাহলে তাকে কানাডা থেকে বের করে দেয়া হয়।

            এসব ভিজিট ভিসায় আসা লোকজন যখন কানাডায় ভিজিট ভিসার জন্য অ্যাপ্লি­কেশন করে তখন তাঁদের নিজ দেশে ভাল চাকরি বা ব্যবসা-বাণিজ্য, ব্যাংকে অনেক টাকা, কান্ট্রি টাই, ফ্যামিলি টাই, ভাল ট্রাভেল হিস্ট্রি ইত্যাদি দেখায়। কানাডায় আসার আগে এক ধরনের ডকুমেন্ট দিয়ে ভিসা নেয়া এবং আসার পরে অন্য কথা বলে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার ফলে অনেকেরই এই রাজনৈতিক আশ্রয়ের মামলায় হেরে যাওয়ার দশায় পড়তে হয়। শেষ পর্যন্ত তাঁদের দেশ থেকে বের করে দেয়া হবে।

            এই মামলা চালাতে গিয়ে অনেকেই হিমশিম খাচ্ছেন ও নিজ দেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে টাকা হুন্ডি করে কানাডায় নিয়ে আসছেন। ভিজিট ভিসায় কানাডায় এসে এলএমআইএ অ্যাপ্রæভড চাকরি না পেয়ে অনেক বাংলাদেশি রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করে এখন দারুন বিপাকেই পড়েছেন। তাঁদের অনেকেরই ইংরেজি ভাষায় যোগ্যতা, কানাডার কাজের সঙ্গে তাঁদের অতীত জীবনের কাজের অভিজ্ঞতা এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকার ফলেও হাজারো বাংলাদেশি কোনো কাজ খুঁজে পাচ্ছেন না।        অন্যদিকে, রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করার ফলে সরকারের কাছে পাসপোর্ট জমা দেওয়ার ফলে তাঁরা দেশেও ফিরে যেতে পারছেন না।

            অথচ, ভিজিট ভিসা করার সময় তারা একেকজন ৫ থেকে ১৫ লাখ বাংলাদেশি টাকা খরচ করে এসেছেন। কারণ, কানাডার ভিসা হচ্ছে ডকুমেন্ট বেসড। ফিন্যান্সিয়ালসহ বিভিন্ন ডকুমেন্ট অসাধু চক্রগুলো তাদের বানিয়ে দিয়ে এই টাকাগুলো হাতিয়ে নিয়েছে।

            অন্যদিকে, কানাডায় আসার পর তাঁরা যখন রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করছেন, তখন আইনজীবীদের কমপক্ষে ৭ থেকে ১০ হাজার কানাডিয়ান ডলার দিতে হচ্ছে।

            এমতাবস্থায় কাজ না পাওয়া, থাকা খাওয়ার অত্যাধিক ব্যয়, আইনজীবীদের খরচের ফলে এ ধরনের লোকজন মানবেতর  জীবনযাপন করছেন। এর মধ্যে ফুড ব্যাংক থেকে কোনো রকম খাদ্য সহযোগিতা নিয়ে তারা কোনো মতে বেঁচে আছেন।

            আসলে কানাডার ফুড ব্যাংকে সরকারের কোন সাহায্য-সহযোগিতা থাকে না, স্থানীয় লোকজনের দানের টাকায় এ ফুড ব্যাংকগুলো চলে। অন্যদিকে কয়েকগুণ মানুষের ভিড় বেড়ে যাওয়ায় ফুড ব্যাংকগুলো আগের চেয়ে খাওয়া অনেক কমিয়ে দিয়েছে।

            কানাডার টরেন্টোর ড্যানফোর্থ এলাকা যা এখন বাংলাটাউন নামে পরিচিত, সেখানে সকাল-বিকেল-সন্ধ্যা এ ধরনের হাজারো রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থীদের কলরবে মুখর অবস্থা। যাঁরা অনেকেই কোনো কাজ না পেয়ে উদ্দেশ্যবিহীনভাবে ঘুরছেন।

            ইদানীং আবার দেখা গেছে কানাডায় প্রবেশ করার আগেই বিভিন্ন বিমানবন্দর থেকে তাঁদের ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে কানাডা বিমানবন্দরে নামার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের ডকুমেন্টগুলো আবার চেক করা হয়। যারা ভুয়া ইনভাইটেশন লেটার ও ভুয়া ডকুমেন্ট নিয়ে কানাডায় এসেছেন, তাঁদের সঙ্গে সঙ্গে কানাডা থেকে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। এ অসহায় মানুষগুলোর অসহায়ত্বের সুযোগ দিয়ে কানাডার ভেতর থেকে একটি অসাধুচক্র তাঁদের  আমেরিকায় পাঠানোর ব্যবস্থা করছে, মন্ট্রিয়ালের বিভিন্ন অরতি বর্ডার থেকে।

            বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, আমেরিকা যেতে গিয়েও অনেকেই এখন আমেরিকার জেলখানায় আটক রয়েছেন। অভিজ্ঞ মহলের পরামর্শ হচ্ছে, এভাবে যদি কানাডায় না বুঝে লোকজন আসে, তাহলে তাদের সর্বস্ব খোয়াতে হবে এবং নিঃস্ব হয়ে অধিকাংশ মানুষকেই কানাডায় হাজার হাজার ডলার খরচ করে কয়েক বছরের মধ্যে আবার দেশে ফিরে যেতে হবে। সেহেতু, কারও প্ররোচনায় না পড়ে বুঝেশুনে ভিজিট ভিসায় কানাডায় ঢোকার সিদ্ধান্ত নেয়া একান্ত আবশ্যকীয় বটে! সুত্র: প্রথম আলো

Share This

COMMENTS