শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ডিউটি না করেই নিয়মিত বেতন তোলেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা

ডিউটি না করেই নিয়মিত বেতন তোলেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা

জহিরুল ইসলাম\ বছরের পর বছর ধরে রোগীদের সেবা না দিয়েই বেতনসহ সরকারি সকল সুবিধা ভোগ করছেন কুমিল্লার লালমাই উপজেলার বাগমারা উত্তর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের ইনচার্জ উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার (স্যাকমো) মোসাম্মৎ খোরশেদা খানম। কর্মস্থলের ৫০ গজের মধ্যে নিজের বাড়িতে চেম্বার করে সন্তানসম্ভবা নারীদের ফি নিয়ে চিকিৎসা দিলেও তিনি নিজের অসুস্থতার অজুহাতে অফিসে রোগী দেখেন না। ২-৩ দিন পরপর সকালে আধা ঘণ্টার জন্য অফিসে এসে স্বাক্ষরের কাজ সেরে বাসায় ফিরে যান।
সূত্র জানায়, ২০০৭ সালে যোগদানের পর থেকে এ পর্যন্ত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তিনি সন্তানসম্ভবা একজন নারীকেও সরকারি সুবিধায় বিনামূল্যে নরমাল ডেলিভারি করাননি। অথচ তিনি নিজের বাসায় ৮/১০ হাজার টাকার চুক্তিতে নিয়মিত নরমাল ডেলিভারি করান। তাকে এই কাজে সহযোগিতা করেন অফিসের আয়া পেয়ারা বেগম। অফিসে ডেলিভারির জন্য কোনো নারী আসলে আয়া ঘরোয়া পরিবেশে ডেলিভারির কথা বলে খোরশেদা খানমের বাসায় নিয়ে যান। ডেলিভারি শেষে চুক্তির টাকা থেকে খোরশেদা কিছু টাকা আয়াকে দেন।
এসব অনিয়মের বিষয়ে অবগত হয়ে গত সরকারের আমলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ একাধিকবার তাকে অন্যত্র বদলির উদ্যোগ নিলে তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাকে দিয়ে তদবির করান।
গত ২৪শে আগস্ট সকাল সাড়ে ১০টায় উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের মেডিক্যাল অফিসার ডা. সৈয়দা তাহসিন সিফাত পরিদর্শনে গিয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের গেট তালাবদ্ধ দেখতে পান। খবর পেয়ে প্রায় এক ঘণ্টা পর ওই কেন্দ্রে দায়িত্বরত আয়া পেয়ারা বেগম অফিসে আসেন। পরিদর্শন শেষে অনুপস্থিতি, অব্যবস্থাপনা ও অপরিচ্ছন্নতাসহ বিভিন্ন অভিযোগে খোরশেদা খানম ও পেয়ারা বেগমকে শোকজ নোটিশ দেন মেডিকেল অফিসার। শোকজ নোটিশ দেয়ার পরও খোরশেদা খানম অফিসে আসেননি।
গত বুধবার (৪ঠা সেপ্টেম্বর) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার খোরশেদা খানমের কক্ষের দরজা খোলা থাকলেও ভেতরে কেউ নেই। সামনে কয়েকজন রোগী বসে আছেন। পাশের কক্ষে রোগীদের সিরিয়ালে ডেকে চিকিৎসা দিচ্ছেন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা কেয়া বড়–য়া। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রক্ষিত হাজিরা খাতায় গত ২৪শে আগস্ট থেকে ৪ঠা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খোরশেদা খানমের স্বাক্ষরের স্থলে অনুপস্থিত হিসেবে ‘এ’ লিখা রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনের একজন দোকানদার বলেন, সরকারি চাকরি করলেও খোরশেদা খানম ম্যাডাম সারা দিন বাসায় রোগী দেখেন। মোটা অংকের টাকায় বাসায় ডেলিভারি করান। সরকারি বেতন-ভাতা ও ডেলিভারি করিয়ে তিনি মাসে ৩/৪ লাখ টাকা আয় করেন। বাড়িতে পুরনো ২ তলা একটি ভবন রয়েছে। নতুন করে ১০ হাজার স্কয়ার ফুটের আরেকটি বাড়ি দ্বিতীয় তলার কাজ করাচ্ছেন। কয়েক মাস আগে শুনেছি তিনি জটিল রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তারপরও তিনি ডিউটি না করে সরকারি বেতন-ভাতা উত্তোলন বন্ধ করেননি। তার কারণে এলাকার রোগীরা সরকারি চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
শোকজের বিষয়ে আয়া পেয়ারা বেগম বলেন, দেরি করে অফিসে আসায় ম্যাডাম আমাকে শো-কজ করেছে। শো-কজের জবাব এখনো দিতে পারিনি। তবে আমি এখন নিয়মিত অফিসে আসি। আমার বাড়ি বাগমারা উত্তর ইউনিয়নের দুতিয়াপুর। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় চাকরি করেছি। ২০১১ সালে নিজ বাড়ির পাশে বদলি হয়েছি। কর্তৃপক্ষ এখন যদি আমাকে অন্যত্র বদলি করে আমি চাকরি করতে পারব না।
অভিযোগের বিষয়ে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার মোসাম্মৎ খোরশেদা খানম বলেন, আমি অসুস্থ। সে কারণে ঢাকায় আছি। আরো ১০/১২ দিন পর এলাকায় আসব। অফিস থেকে ছুটি নিয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, না ছুটি নিইনি। বাসায় ডেলিভারি করেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে বাসায় ডেলিভারি করাতাম। কিছুদিন ধরে অসুস্থতার কারণে বাসায় ডেলিভারি বন্ধ রেখেছি।
এ বিষয়ে লালমাই উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. সৈয়দা তাহসিন সিফাত বলেন, গত ২৪শে আগস্ট উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার খোরশেদা খানম ও আয়া পেয়ারা বেগমকে অনুপস্থিতির অভিযোগে শো-কজ করা হয়েছে। এর আগেও খোরশেদা খানমকে ছুটিবিহীন সরকারি চাকরিতে অনুপস্থিতির অভিযোগে একাধিকবার শো-কজ করা হয়েছিল। শো-কজের দিন আয়া অফিসে হাজির হলেও খোরশেদা খানম অদ্যাবধি (৪ঠা সেপ্টেম্বর) অফিসে হাজির হননি।

Share This

COMMENTS