শনিবার, ১৬ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

<span class="entry-title-primary">বৃহত্তর লাকসামের গৌরব</span> <span class="entry-subtitle">বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের  নতুন খতিব মুফতি আব্দুল মালেক</span>

বৃহত্তর লাকসামের গৌরব বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের নতুন খতিব মুফতি আব্দুল মালেক

৪৮ Views

            ষ্টাফ রিপোর্টার\ বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের নতুন “খতিব” নিয়োগ পেয়েছেন ইসলামি আইন বিশেষজ্ঞ ও হাদিস বিশারদ আল্লামা মুফতি আবদুল মালেক। হাদিসশাস্ত্রসহ বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণামূলক কর্মকান্ডের জন্য তিনি বাংলাদেশসহ পুরো মুসলিম বিশ্বে সুপরিচিত। গত বৃহস্পতিবার (১৭ই অক্টোবর) তাঁকে খতিব হিসাবে নিয়োগের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

            এর আগে শুক্রবার (১৮ই অক্টোবর) ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, মুফতি আবদুল মালেক দেশ-বিদেশের প্রসিদ্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইসলামিক স্টাডিজ, হাদিস ও ফিকহের ওপর উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনকারী একজন পন্ডিত ব্যক্তি। বিশ্বখ্যাত মুফতি বিচারপতি তাকী ওসমানী তার ওস্তাদ। আরব বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইসলামি পন্ডিত ও সৌদি আরবের রিয়াদে অবস্থিত ইমাম মোহাম্মদ ইবনে সাউদ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের উসুলুদ্দীন অনুষদের অধ্যাপক শায়খ আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহর (রহ.) অধীনে তিনি দুই বছরের বেশী সময় ধরে হাদিস ও ইসলামি আইন বিষয়ে উচ্চতর গবেষণা পরিচালনা করেন।

            উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সালে তার রচিত আল মাদখাল ইলা উলুমিল হাদিস শরিফ প্রকাশিত হয়, যা বিভিন্ন দেশে পাঠ্যবই হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এর আগে মুফতি আবদুল মালেক ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত মারকাযুদ দাওয়াহ আল ইসলামিয়ার সহপ্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। বর্তমানে তিনি এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাসচিব ও উচ্চতর হাদিস বিভাগের প্রধান হিসেবে বিদ্যমান রয়েছেন। এই প্রতিষ্ঠানের মুখপত্র হিসেবে ২০০৫ সালে তাঁর তত্ত¡াবধানে মাসিক আল কাউসার প্রকাশিত হয়। ২০১২ সালে তিনি বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কমিশনের সদস্য মনোনীত হন। এছাড়াও মুফতি আবদুল মালেক ভারতের ইসলামি ফিকহ একাডেমিরও সদস্য আছেন।

            আবদুল মালেক মক্কা, মদিনা, পাকিস্তান, ভারত ও তুরস্ক সফর করেছেন এবং বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন। তিনি ইতোমধ্যে বাংলা, আরবি, ইংরেজি ও উর্দু ভাষায় মোট ১৬টি গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাঁর তত্ত¡াবধানে মাসিক আল-কাউসার নামে নিয়মিত একটা গবেষণা পত্রিকাও বের করা হয়।

            মুফতি আবদুল মালেক ১৯৬৯ সালের ২৯শে আগস্ট কুমিল্লা জেলার বৃহত্তর লাকসাম বর্তমানকার মনোহরগঞ্জ উপজেলার সরসপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। তাঁর পিতা শামসুল হকও একজন আলেম ছিলেন।

            পরিবারিকভাবে কুরআন ও প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনের পর তিনি পার্শ্ববর্তী চাঁদপুর জেলার শাহারাস্তি উপজেলার খেড়িহর কওমী মাদ্রাসায় মিশকাত শরীফের জামায়াত পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। ১৯৮৮ সালে তিনি পাকিস্তানের জামিয়া উলুমুল ইসলামিয়ায় দাওরায়ে হাদিস সমাপ্ত করেন। এরপর তিনি এই মাদ্রাসার উচ্চতর হাদিস বিভাগে ভর্তি হয়ে তিন বছর আব্দুর রশীদ নোমানীর তত্ত¡াবধানে হাদিস অধ্যয়ন করেন। ১৯৯২ সালে তিনি দারুল উলুম করাচিতে ভর্তি হয়ে দুই বছর তাকি উসমানির তত্ত¡াবধানে উচ্চতর ফিকহ্ ও ফতোয়া অধ্যয়ন করেন। ১৯৯৫ সালে তিনি সৌদি আরব গমন করে আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহর তত্ত¡াবধানে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত প্রায় আড়াই বছর হাদিসশাস্ত্রসহ অন্যান্য গবেষণামূলক কাজের গবেষণা সহযোগী হিসেবে কাজ করেন।

            এরপর, ১৯৯৬ সালে তিনিসহ আরও কয়েকজন আলেম ঢাকায় উচ্চতর ইসলামি শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান মারকাযুদ দাওয়াহ আল-ইসলামিয়া প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে তিনি এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাসচিব ও উচ্চতর হাদিস গবেষণা বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও তিনি জামিয়াতুল উলুম আল-ইসলামিয়া ঢাকার শায়খুল হাদিস হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।

            এছাড়া, কওমি মাদ্রাসার সরকারি স্বীকৃতি প্রদানের লক্ষ্যে ২০১২ সালে বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কমিশন গঠিত হলে তিনি এর সদস্য মনোনীত হন। ২০১৯ সালে তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের জাতীয় চাঁদ দেখা উপকমিটির প্রধান মনোনীত হয়েছিলেন।

            সাহিত্য ও গবেষণাকর্মেও মুফতি আবদুল মালেক-এর যথেষ্ট অভিজ্ঞতা রয়েছে। ২০০৫ সালে তাঁর তত্ত¡াবধানে মারকাযুদ দাওয়াহ আল ইসলামিয়ার মুখপত্র হিসেবে মাসিক আলকাউসার প্রকাশিত হয়। এ পত্রিকায় ইসলাম ও সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে ওঁনার লেখা প্রকাশিত হয়। আরবি ও বাংলায় তাঁর অন্যান্য রচিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে: আল মাদখাল ইলা উলুমিল হাদিসিশ শরিফ, উম্মাহর ঐক্য পথ ও পন্থা, আল ওয়াজিজ ফি শাইয়ি মিন মুসত্বলাহিল হাদিসিশ শরিফ, মুহাদারাত ফি উলুমুল হাদিস, ইনায়াতুর রহমান ফি আদাদি আয় আল কুরআন, তাসাওউফ তত্ত¡ ও বিশ্লেষণ, তালিবানে ইলম পথ ও পাথেয়, ঈমান সবার আগে, প্রচলিত ভুল এবং তাবলীগ জামাত: বর্তমান পরিস্থিতি ও উত্তরণের উপায় ইত্যাদি।

            বিশ্বখ্যাত আলেমদের স্বীকৃতি সম্পন্ন মাওলানা আব্দুল মালেক শুধু বাংলাদেশেই বরেণ্য নন; তাঁর পরিচয় ও খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে পুরো মুসলিম বিশ্বেই। ভারত, পাকিস্তান ও আরবের অনেক প্রখ্যাত আলেম তাঁর যোগ্যতার স্বীকৃতি দিয়েছেন, তার প্রশংসা করেছেন। সিরিয়ার প্রখ্যাত মুহাদ্দিস শায়খ আওয়ামা (রহ.) মাওলানা আব্দুল মালেককে ‘মুহাক্কিক আলেম’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। সিরিয়ার আরেকজন প্রখ্যাত মুহাদ্দিস শায়খ আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ (রহ.) তাঁর সম্পর্কে বলেন, তিনি দাবি করেন- আমার কাছ থেকে তিনি উপকৃত হয়েছেন। অথচ আমি দেখি তাঁর থেকে আমিই অনেক উপকৃত হয়েছি। তিনি তাঁর অনেক উস্তাদের থেকেও এগিয়ে যাবে। সেই উস্তাদদের মধ্যে আমি হব প্রথমজন।

            ভারতের প্রখ্যাত আলেম মাওলানা সাঈদ আহমদ পালনপুরী (রহ.) তাঁর কিতাব ‘আল-মাদখাল’ সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে গিয়ে বলেন, আল্লাহর বিশেষ তওফিকপ্রাপ্ত ও ইলমব্যস্ত এই উস্তাদ ও শায়খের কিতাব আমাকে বিমোহিত ও বিস্মিত করেছে।

            তদুপরি, বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় আলেমদের মধ্যে জামিয়া হাটহাজারির প্রয়াত মহাপরিচালক শাহ আহমদ শফী (রহ.) ও জামিয়া মাদানিয়া বারিধারার প্রয়াত মুহতামিম নুর হুসাইন কাসেমীও (রহ.) মাওলানা আব্দুল মালেককে ‘বাংলাদেশের গৌরব ও সৌভাগ্য’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

            প্রকাশ থাকে যে, ঢাকায় প্রাণকেন্দ্রে পল্টনে অবস্থিত বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ। এটি বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ। ১৯৬৮ সালে মসজিদটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। এর স্থাপত্যশৈলী অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন। তৎকালীন পাকিস্তানের বিশিষ্ট শিল্পপতি লতিফ বাওয়ানি ও তার ভাতিজা ইয়াহিয়া বাওয়ানির উদ্যোগে এই মসজিদ নির্মাণের পদক্ষেপ গৃহীত হয়। মসজিদে একসাথে ৩০,০০০ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। ফলে ধারণক্ষমতার দিক দিয়েও এটি বিশ্বের ১০ম বৃহত্তম মসজিদ। তবে মসজিদটিতে জুমার নামাজ ছাড়াও বিশেষত: রমজানের সময় অত্যধিক মুসল্লির সমাগম হয় বিধায় বাংলাদেশ সরকার মসজিদের ধারণক্ষমতা ৪০ হাজারে উন্নিত করেছেন।

Share This