রবিবার, ১৬ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

১১ বছরেও সন্ধান মিলেনি গুম হওয়া লাকসামে  বিএনপি’র শীর্ষ ২ নেতা হিরু-হুমায়ুনের

১১ বছরেও সন্ধান মিলেনি গুম হওয়া লাকসামে বিএনপি’র শীর্ষ ২ নেতা হিরু-হুমায়ুনের

৯৩ Views

            ষ্টাফ রিপোর্টার॥ দীর্ঘ ১১ বছরেও সন্ধান মিলেনি কুমিল্লার লাকসাম উপজেলা বিএনপি’র শীর্ষ ২ নেতা সাবেক এমপি সাইফুল ইসলাম হিরু এবং হুমায়ুন কবির পারভেজের। ২০১৩ সালের ২৭শে নভেম্বর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিচয়ে তাদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এদের ফিরে পেতে এখনো অপেক্ষার প্রহর গুনছেন স্বজন ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা।

            জানা গেছে, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে ২০১৩ সালে বিএনপি’র টানা অবরোধ কর্মসূচি চলছিল। ওই বছরের ২৭শে নভেম্বর রাত ৯টার দিকে লাকসামে বিশেষ অভিযান চালায় র‌্যাব-পুলিশসহ যৌথবাহিনী। একপর্যায়ে সাইফুল ইসলাম হিরুর মালিকানাধীন লাকসাম ফ্লাওয়ার মিলে অভিযান চালিয়ে ৯ জনকে আটক করা হয়। ওই রাতে সাইফুল ইসলাম হিরু, হুমায়ুন কবির পারভেজ ও জসিম উদ্দিন একটি এম্বুলেন্সযোগে লাকসাম থেকে কুমিল্লার উদ্দেশ্যে রওনা দিলে কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের লালমাই উপজেলার হরিশ্চর-আলীশ্বর এলাকায় সাদা পোশাকে একদল লোক এম্বুলেন্স থামিয়ে র‌্যাব পরিচয়ে এদের তিনজনকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে কুমিল্লার দিকে চলে যায়। পরে রাত সাড়ে ১২টার দিকে জসিম ও লাকসামে আটক হওয়া ৯ জনকে লাকসাম থানায় হস্তান্তর করে র‌্যাব। পরদিন ২৮শে নভেম্বর সকালে তাদের বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কুমিল্লা কারাগারে পাঠায় পুলিশ। এরপর থেকে সাইফুল ইসলাম ও হুমায়ুন কবির পারভেজের খোঁজ পাওয়া যায়নি।

            এদিকে, অপহরণ ও গুমের অভিযোগে ২০১৪ সালের ১৮ই মে র‌্যাবের ৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কুমিল্লার আদালতে মামলা করেন হুমায়ুন কবিরের বাবা রঙ্গু মিয়া। মামলায় আসামিরা হলেন- বাধ্যতামূলক অবসরে যাওয়া র‌্যাব-১১ এর সাবেক অধিনায়ক (সিইও) ও নারায়ণগঞ্জের ৭ খুনের ঘটনায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, র‌্যাব-১১ এর তৎকালীন কুমিল্লা ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা কোম্পানি অধিনায়ক-২ মেজর শাহেদ হাসান (রাজীব), উপ-সহকারী পরিচালক (ডিএডি) শাহজাহান আলী, উপ-পরিদর্শক (এসআই) কাজী সুলতান আহমেদ ও অসিত কুমার রায়। এরপর ২০১৪ সালের ৩১শে আগস্ট ছেলে হারানোর শোকে মারা যান মামলার বাদী রঙ্গু মিয়া। বর্তমানে তার ছেলে হুমায়ুন কবির পারভেজের ছোট ভাই মো. গোলাম ফারুক মামলাটি পরিচালনা করছেন।

            লাকসাম থানায় সোপর্দ করা জসিম উদ্দিন বলেন, আমাদের তিনজনকে আটকের পর চোখ বেঁধে ফেলা হয়। ওইদিন মধ্যরাতে চোখ খোলার পর দেখি, আমি লাকসাম থানায়। তখন সেখানে হিরু ও হুমায়ুন কাউকে দেখতে পাইনি। আমাকে র‌্যাব থানায় দিয়ে গেছে। তার মানে এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায়, র‌্যাবই তাদের গুম করেছে। পারভেজের স্ত্রী শাহনাজ আক্তার বলেন, তার স্বামী পারভেজ এবং চাচা সাইফুল ইসলঅম হিরুকে র‌্যাবই গুম করেছে। আমরা আজও জানি না, তারা কি জীবিত, না কি তাদের মেরে ফেলা হয়েছে।             তিনি বলেন, হিরু-হুমায়ূনকে গুম করার উদ্দেশ্য হলো রাজনীতি। তাদের সরিয়ে প্রতিপক্ষ দলের স্থানীয় শীর্ষ নেতা লাভবান হয়েছিলেন। সাইফুল ইসলামের একমাত্র ছেলে রাফসান ইসলাম বলেন, অপহরণ ও গুমের একজন প্রত্যক্ষদর্শী তো আছেই। র‌্যাব তাকে থানায় পাঠিয়ে বাকি দু’জনকে গুম করেছে বিষয়টি পরিষ্কার। তারেক সাঈদ এই গুমের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত বলে আমরা বিশ্বাস করি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই সব বেরিয়ে আসবে।

            বর্তমানে মামলার বাদী গোলাম ফারুক বলেন, ৫ই আগস্টের পর অনেকেই আয়নাঘর থেকে ফিরে এসেছেন। এ খবর পেয়ে আমরা ডিজিএফআই’র কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেছি। কিন্তু এখনো কোনো হদিস মেলেনি হিরু ও হুমায়ুনের। বাদী পক্ষের প্রধান আইনজীবী মুহাম্মদ বদিউল আলম সুজন জানান, অপহরণ ও গুমের অভিযোগে ২০১৪ সালের ১৮ই মে র‌্যাবের ৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কুমিল্লার আদালতে মামলা করেন হুমায়ুন কবিরের বাবা রঙ্গু মিয়া। পুলিশ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিলেও তাতে নারাজি দেন বাদী। কয়েক দফা তদন্ত সংস্থা পরিবর্তন হলেও অভিযুক্ত ব্যক্তিদের একবারও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। এছাড়া এখন পর্যন্ত যারা মামলাটির তদন্ত করেছেন, তাদের কেউই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করেননি। আগে যারা মামলার তদন্ত করেছেন, তাদের কেউ চাননি মামলাটি আলোর মুখ দেখুক। এজন্য তারা তদন্তের নামে সময়ক্ষেপণ করেছেন।

            মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কুমিল্লার সহকারী পুলিশ সুপার (লাকসাম সার্কেল) সৌমেন মজুমদার বলেন, সরকারের ৩টি তদন্ত সংস্থা কাজ করছে। আমরাও তদন্ত অব্যাহত রেখেছি। মনগড়া কোনো প্রতিবেদন জমা দিতে চাই না। বাদীপক্ষের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীর কাছ থেকেও বিস্তারিত তথ্য নেয়া হবে এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি চেয়ে চিঠি দেয়া হবে।

Share This