বুধবার, ১৯শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

র‌্যাবের  বিলুপ্তি চেয়েছে বিএনপি

র‌্যাবের বিলুপ্তি চেয়েছে বিএনপি

১১৮ Views

পুলিশকে একটি মানবিক ও জনবান্ধব বাহিনীতে রূপান্তর করতে ‘পুলিশ কমিশন’ গঠনের প্রস্তাব এবং র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) বিলুপ্তির সুপারিশ চূড়ান্ত করেছে বিএনপি। দলটি বিশ্বাস করে, এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে পুলিশ বিভাগে বিদ্যমান অসংগতি ও অনিয়ম দূর হবে।

আজ মঙ্গলবার সকালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিটির প্রধান হাফিজ উদ্দিন আহমদ এই সুপারিশমালা উপস্থাপন করেন।

পুলিশকে জনবান্ধব বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা

হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, “পুলিশ ছাড়া কোনো রাষ্ট্র বা সমাজ কল্পনা করা যায় না। তবে বর্তমানে পুলিশ গণশত্রুতে পরিণত হয়েছে। এই বাহিনীকে ছাঁটাই না করে সংশোধন করে জনগণের সেবক হিসেবে দাঁড় করাতে হবে।” তিনি আরও বলেন, পুলিশের মগজে এই ধারণা প্রোথিত করতে হবে যে দেশের প্রকৃত মালিক জনগণ এবং তারা জনগণের সেবক, প্রভু নয়।

পুলিশের কার্যক্রমকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখতে ‘পুলিশ কমিশন’ গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে নাগরিক কমিটি গঠন এবং ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থা চালুর প্রস্তাবও তুলে ধরা হয়েছে।

র‍্যাব বিলুপ্তির প্রস্তাব

বিএনপির সংস্কার প্রস্তাবে র‍্যাব বিলুপ্তির সুপারিশ উল্লেখযোগ্য। হাফিজ উদ্দিন বলেন, “র‍্যাব আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিন্দিত এবং দেশের মানুষের কাছে দানব হিসেবে পরিচিত। তাদের কর্মকাণ্ডে বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং নিখোঁজের মতো ঘটনা ঘটেছে। তাই এই বাহিনী বিলুপ্তির সুপারিশ করেছি।”

তিনি আরও বলেন, “র‍্যাব বিলুপ্ত হলে তাদের দায়িত্ব আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন এবং থানার পুলিশ দ্বারা পূরণ করা হবে। এই পদক্ষেপ জনগণের কাছে ইতিবাচক বার্তা দেবে।”

পুলিশ কমিশনের কাঠামো

  • চেয়ারম্যান: সংসদ থাকলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়বিষয়ক সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান। সংসদ না থাকলে সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারক।
  • সদস্য: সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, উচ্চ আদালতের আইনজীবী, সমাজের বিশিষ্ট নাগরিক এবং স্বরাষ্ট্রসচিব মনোনীত অতিরিক্ত সচিব।
  • কমিশনের কার্যক্রম নির্ধারণ করবে সরকারি বিধিবিধান।

নাগরিক কমিটির ভূমিকা

প্রতিটি উপজেলা বা থানায় নাগরিক কমিটি গঠন করা হবে, যা পুলিশের কার্যক্রম তদারকি এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পরামর্শ প্রদান করবে। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি, শিক্ষিত সদস্য এবং সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এই কমিটির অন্তর্ভুক্ত হবেন।

কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থা

জনগণের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করার জন্য ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিউনিটি পুলিশিং চালু করা হবে।

  • প্রতিটি এলাকায় একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা নিয়োজিত থাকবেন।
  • তাদের বেতন-ভাতা বহন করবে স্থানীয় সরকার।
  • কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মাধ্যমে সামাজিক অস্থিরতা হ্রাস এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধি পাবে।

অন্যান্য প্রস্তাব

  • পুলিশ সদস্যদের বার্ষিক সম্পদের হিসাব জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক।
  • প্রতিটি জেলায় পূর্ণাঙ্গ পুলিশ হাসপাতাল নির্মাণ।

সংবাদ সম্মেলনে সাবেক স্বরাষ্ট্রসচিব এস এম জহিরুল ইসলাম, সাবেক আইজিপি আবদুল কাইয়ুম, আশরাফুল হুদা এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। গত ৫ ডিসেম্বর বিএনপি তাদের এই প্রস্তাবনা অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের কাছে জমা দেয়।

Share This