
বাংলাদেশীদের স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার জন্য মার্কিন গ্রিনকার্ড প্রসঙ্গ:

ষ্টাফ রিপোর্টার॥ আমেরিকায় ২০২৩ সালে স্থায়ী বাসিন্দা হওয়া বা পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট হিসেবে নতুন অভিবাসীদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সম্পর্কে দেশ পত্রিকা কর্তৃক বিভিন্ন ডাটা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে যে, যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার জন্য বেশির ভাগ মানুষ বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে নতুনভাবে আসছেন এবং এতে করে অভিবাসী সংখ্যাটি বছরে বছরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশিদের জন্য একটি নতুন মাইলফলক!
মূলত: বাংলাদেশের অভিবাসীদের জন্য ২০২৩ সাল একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এর আগে ২০২১ সালে যেখানে মাত্র ৬ হাজার ৪১০ জন বাংলাদেশি যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী বাসিন্দা হন, ২০২২ সালে তা বেড়ে ১০ হাজার ৮৬০ জনে দাঁড়ায়। ২০২৩ সালে এসে তা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে ১৮ হাজার ৯১০ জনে পৌঁছে। এটি বাংলাদেশের অভিবাসন ইতিহাসে একটি বড় সাফল্য এবং প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশি নাগরিকদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের আকাঙ্খা বৃদ্ধি পাচ্ছে নিঃসন্দেহে।
এখানে উল্লেখ থাকে যে, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে গত কয়েক বছরে অভিবাসন সংখ্যা কম ছিল, তবে ২০২৩ সালে তা আবারও পুনরুদ্ধার হয়েছে। এই পুনরুদ্ধার যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন প্রবণতার একটি ইতিবাচক সংকেত প্রদান করছে। ২০২৩ সালে প্রায় ১১ লাখ ৭২ হাজার ৯১০ জন ব্যক্তি পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট বা গ্রিনকার্ডধারী হিসেবে অনুমোদিত হয়েছেন। এসংখ্যা ২০২২ সালের তুলনায় ১৫ শতাংশ এবং ২০২১ সালের তুলনায় ৬৬ শতাংশ বেশি। ২০২১ থেকে ২০২৩ অর্থ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে নতুন ল-ফুল পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট হিসেবে অনুমোদিত অভিবাসীদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২১ সালে মোট ৭ লাখ ৪০ হাজার জন পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট অনুমোদিত হন, ২০২২ সালে এই সংখ্যা বেড়ে ১০ লাখ ১৮হাজার ৩৫০ জনে পৌঁছে এবং ২০২৩ সালে তা আরো বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ১১ লাখ ৭২ হাজার ৯১০ জন।
এছাড়া, নতুন আসা অভিবাসীদের সংখ্যা ২০২১ সালে ছিল ২ লাখ ২৭ হাজার ২১০ জন, যা মোট অভিবাসীদের ৩০.৭শতাংশ ছিল। ২০২২ সালে এই সংখ্যা বেড়ে ৪ লাখ ৬৫ হাজার ৭২০ জন (৪৫.৭%) এবং ২০২৩ সালে আরো বৃদ্ধি পেয়ে ৫ লাখ ৬৪ হাজার ৬৬০ জন (৪৮.১%) হয়। অন্যদিকে যারা যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছিলেন এবং তাদের স্থায়ী বাসিন্দার স্ট্যাটাস পরিবর্তন করেছেন, তাদের সংখ্যা ২০২১ সালে ছিল ৫ লাখ ১২ হাজার ৮০০ জন, যা মোট অভিবাসীদের ৬৯.৩ শতাংশ ছিল। ২০২২ সালে এটি বেড়ে ৫ লাখ ৫২ হাজার ৬৩০ জন (৫৪.৩%) এবং ২০২৩ সালে ৬ লাখ ৮ হাজার ২৬০ জন (৫১.৯%) হয়েছে।
পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট অনুমোদিত ক্যাটাগরি ও সংখ্যা:
২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে মোট ১১ লাখ ৭২ হাজার ৯১০ নতুন ল-ফুল পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট হিসেবে অনুমোদিত অভিবাসীদের মধ্যে ৬৪.৪ শতাংশ বা ৭ লাখ ৫৫ হাজার ৮৩০ জন অভিবাসী পরিবারভিত্তিক ক্যাটাগরি থেকে স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে অনুমোদন পেয়েছেন। এর মধ্যে নিকটাত্মীয়দের সংখ্যা ছিল ৫ লাখ ৫১ হাজার ৫৯০, যার মধ্যে স্বামী/স্ত্রী ২ লাখ ৭৬ হাজার ৮০, পিতা/মাতা ২ লাখ ৮ হাজার ৩৫০ এবং সন্তান ৬৭ হাজার ১৫০ জন ছিলেন। পরিবারভিত্তিক অগ্রাধিকার ক্যাটাগরিতে ২ লাখ ৪ হাজার ২৪০ জন স্থায়ী বাসিন্দা হয়েছেন, যাদের মধ্যে অবিবাহিত পুত্র/কন্যা ২৩ হাজার ৬৯০, গ্রিনকার্ডধারীদের স্বামী/স্ত্রী ও সন্তান ১ লাখ ১৬ হাজার ৫৬০, বিবাহিত পুত্র/কন্যা ১৯ হাজার ১৮০ এবং ভাই/বোন ৪৪ হাজার ৮২০ জন ছিলেন।
চাকরিভিত্তিক অভিবাসীদের মধ্যে ১৬.৮ শতাংশ বা ১ লাখ ৯৬ হাজার ৭৬০ জন অভিবাসী স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে অনুমোদন পেয়েছেন। এর মধ্যে ৫৭ হাজার ১৪০ জন প্রাধান্যপ্রাপ্ত কর্মী (প্রায়োরিটি ওয়ার্কার্স), ৫৫ হাজার ৭৯০ জন উচ্চতর ডিগ্রিধারী পেশাজীবী, ৫৭ হাজার ৩১০ জন দক্ষ ও অদক্ষ কর্মী, ১৪ হাজার ৬০০ জন বিশেষ অভিবাসী এবং ১১ হাজার ৯৩০ জন বিনিয়োগকারী ছিলেন। ডাইভারসিটি প্রোগ্রাম (ডিভি লটারি) থেকে ৬৭ হাজার ৩৫০ জন স্থায়ী বাসিন্দা হয়েছেন, যা মোট অভিবাসীদের ৫.৭ শতাংশ। শরণার্থী এবং আশ্রয়প্রার্থী সমন্বয়ে ৯৯ হাজার ৩৬০ জন ল-ফুল পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট হিসেবে অনুমোদন পেয়েছেন, যার মধ্যে শরণার্থী সমন্বয় ৫৯ হাজার ৩০ এবং আশ্রয়প্রার্থী সমন্বয় ৪০ হাজার ৩৩০ জন।
অন্যান্য ক্যাটাগরিতে ৫৩ হাজার ৬০০ জন অভিবাসী স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে অনুমোদন পেয়েছেন, যার মধ্যে বাহিরে জন্ম নেওয়া শিশু ৬১০, ইরাকি ও আফগান কর্মীরা ২৬ হাজার ৪৩০, অপসারণের বাতিল ৪ হাজার ৯০০, নির্দিষ্ট বার্ষিক সীমায় অভিবাসী ৪ হাজার ৫৮০, নিকারাগুয়ান অ্যাডজাস্টমেন্ট অ্যান্ড সেন্ট্রাল রিলিফ অ্যাক্ট সেকশন ২০৩-এর অধীনে ৩২০, মানব পাচারের শিকার ৮০০, অপরাধের শিকার এবং তাদের পরিবার ১৯ হাজার ৭২০ এবং অন্যান্য ১ হাজার ১৪০ জন ছিলেন।
অভিবাসনের উৎস দেশ ও অঞ্চল:
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এশিয়া অঞ্চলে ২০২৩ সালে সর্বোচ্চ সংখ্যক অভিবাসী প্রদান করেছে, যেখানে ৪ লাখ ১৮ হাজার ৯৩০জন অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী বাসিন্দা হন। এটি মোট অভিবাসনের ৩৫.৭ শতাংশ। উত্তর আমেরিকা থেকে ৪ লাখ ৫০হাজার ৩১০ জন (৩৮.৪%) এবং আফ্রিকা থেকে ১ লাখ ৫ হাজার ৫২০ জন (৯.০%) অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী বাসিন্দাহন। এর পাশাপাশি, দক্ষিণ আমেরিকা, ইউরোপ ও ক্যারিবীয় অঞ্চল থেকেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। বিশেষ করে ক্যারিবীয় অঞ্চল থেকে ২০২১ সালে ৭৭ হাজার ৫৬০ জন অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী বাসিন্দা হন, যা ২০২৩ সালে বেড়ে ১ লাখ ৯৩ হাজার ৫৮০ জনে পৌঁছায়।
পরিবারভিত্তিক এবং চাকরিভিত্তিক অভিবাসন:
২০২৩ সালে ৬৪ শতাংশ নতুন পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট পরিবারভিত্তিক অভিবাসন দ্বারা স্থায়ী বাসিন্দা হয়েছেন, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় হিসেবে। এই ক্যাটাগরির জন্য বার্ষিক সীমা নেই এবং এটি পরিবারভিত্তিক অভিবাসনের বৃহত্তম অংশ। চাকরিভিত্তিক অভিবাসন ২০২৩ সালে হ্রাস পেয়েছে, যেখানে মাত্র ১৭ শতাংশ নতুন পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট চাকরিভিত্তিক ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী বাসিন্দা হয়েছেন। গত দুই বছর মহামারির কারণে অব্যবহৃত পরিবারভিত্তিকভিসা পুনর্বণ্টন হওয়ার কারণে চাকরিভিত্তিক অভিবাসন বৃদ্ধি পেয়েছিল।
ডাইভারসিটি ভিসা প্রোগ্রাম ও মানবিক অভিবাসন:
ডাইভারসিটি ভিসা প্রোগ্রামের মাধ্যমে ২০২৩ সালে ৫৪ হাজার ৮৩৩ জন অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী বাসিন্দা হন। এই প্রোগ্রামটি ওই দেশগুলোর নাগরিকদের জন্য পরিচালিত হয় যেসব দেশ থেকে কম অভিবাসন হয়েছে। এছাড়া শরণার্থী ও আশ্রয়প্রার্থীদের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ রয়েছে। ২০২৩ সালে শরণার্থী গ্রহণের সীমা ১ লাখ ২৫ হাজার ছিল এবং যুক্তরাষ্ট্রে মানবিক ভিত্তিতে অভিবাসন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনের প্রবণতা একটি ইতিবাচক পরিবর্তন দেখিয়েছে। বিশেষ করে, বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য ২০২৩ সাল ছিল একটি মাইলফলক। বাংলাদেশের অভিবাসীরা তাদের ক্রমবর্ধমানযোগ্যতা ও অভিবাসনের জন্য উৎসাহের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেছেন। এটি বাংলাদেশের অভিবাসন ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক এবং ভবিষ্যতে আরো বৃহত্তর অভিবাসন প্রবাহের আশাবাদী সংকেত।
উল্লেখ থাকে যে, এ বছরের গোড়ার দিকে অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন কার্ড আবেদনকারীদের জন্য একটি খবর দেওয়া হয়েছিলো যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন কার্ড আবেদনকারীদের জন্য দুঃসংবাদ দিয়েছিলেন দেশটির থিংকট্যাংক সংস্থা দ্য ক্যাটো ইনস্টিটিউট। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি শ্বেতপত্র দিয়েছিলেন ওয়াশিংটনভিত্তিক এই সংস্থাটি। সেখানে বলা হয়েছিল, চলতি ২০২৪ সালে মাত্র ৩ শতাংশ আবেদনকারীকে গ্রিন কার্ড (আবাসন) দেওয়া হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসীদের জন্য গ্রিন কার্ড অপরিহার্য একটি নথি। স্থায়ীভাবে বসবাস এবং যে কোনো প্রতিষ্ঠানের বৈধ কর্মী হওয়ার জন্য গ্রিন কার্ড অপরিহার্য। অতীতে এক গ্রিন কার্ডেই উভয় চাহিদা পূরণ হতো, তবে এখন বসবাস ও কর্মসংস্থানের জন্য আলাদা কার্ডের প্রয়োজন পড়ে।
যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসী ও অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে ক্যাটো ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, মন্ত্রনালয়ে আবাসন বাবদ গ্রিন কার্ডের জন্য আবেদন সংখ্যা বর্তমানে পৌঁছেছে প্রায় ৩ কোটি ৪৭ লাখে। আর কর্মসংস্থানের জন্য গ্রিনকার্ডের আবেদন জমেছে ১৮ লাখ।
এই আবেদনকারীদের মধ্যে বৈধ আবাসনের জন্য ৩ শতাংশ এবং কর্মসংস্থানের জন্য ৮ শতাংশ আবেদনকারীর আবেদন মঞ্জুর করা হবে বলে উল্লেখিত শ্বেতপত্রে উল্লেখ করেছেন ক্যাটো ইনস্টিটিউট। উক্ত আবেদনের এই ব্যাপক জটের প্রধান কারণ অভিবাসন ইস্যুতে মার্কিন সরকারের কঠোর নীতি। ১৯৯০ সালের পর থেকে গ্রিন কার্ড ইস্যুর হার সীমিত রাখার নীতি মেনে চলছে দেশটি। ক্যাটো ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর আবাসন এবং কর্মসংস্থান বাবদ মোট ১ লাখ ৪০ হাজার অভিবাসীকে গ্রিন কার্ড প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অভিবাসী ওঅভিবাসন মন্ত্রণালয়।
আবেদনপত্রের জট কাটানোর জন্য নিজেদের শ্বেতপত্রে আবাসন-কর্মসংস্থানের পাশাপাশি আরও কয়েকটি ক্যাটাগরি সংযোজনের প্রস্তাব দিয়েছে ক্যাটো ইনস্টিটিউট। সেই সঙ্গে প্রতি বছর অন্তত ৩৫ লাখ মানুষকে কোনো না কোনো ক্যাটাগরির অন্তত একটি গ্রিনকার্ড প্রদানের জন্য সংস্থাটি সুপারিশও করেছিলেন।
আসলে আমেরিকার ভিসা পাবেন যেভাবে- সে সম্পর্কেও কিছু ধারণা নেয়া আবশ্যক রয়েছে। কারণ বিশ্বের লাখ লাখ মানুষের কাছে এক স্বপ্নের দেশের নাম বহুল আলোচিত একটি বিষয়। বিশ্বের শক্তিশালী অর্থনীতি আর চাকচিক্যময় জীবনের জন্য অনেকের আকাঙ্খিত এক গন্তব্যও দেশটি। প্রত্যেক বছর বিশ্বের নানা প্রান্ত—র লাখ লাখ মানুষ দেশটিতে পাড়ি জমান। অনেকে বৈধ উপায়ে আবার কেউ কেউ ভিন্ন পথে সাগর-নদী-জঙ্গল পেরিয়ে দেশটিতে যাওয়ার চেষ্টা করেন। বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক সংকট, দারিদ্র্যতা, নিপীড়ন-নির্যাতন, দুঃস্বপ্ন থেকে পালিয়ে বাঁচতে কিংবা স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে আমেরিকায় যান। কিন্তু অনেকেই বৈধ উপায়ে যাওয়ার কৌশল জানেন না। আমেরিকায় বৈধ উপায়ে যাওয়ার খুঁটিনাটি নিয়ে নিম্নে এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
যেভাবে ভিসার আবেদন করবেন:
সাধারণত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বিদেশিদের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা দূতাবাস এবং কনস্যুলেটের মাধ্যমেভিসা ইস্যু করে থাকে। কেউ যদি ভিসা ওয়েভার প্রোগ্রামে অংশগ্রহণকারী ৩৯টি দেশের নাগরিক হন, তাহলে তার ব্যবসায়ী কমিটিং বা ছুটি কাটাতে যাওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ভিসার প্রয়োজন হয় না।
তবে কী কারণে আপনি যুক্তরাষ্ট্রে যেতে চান এবং ভিসা কেন প্রয়োজন সেটির ওপর নির্ভর করছে ভিসা পাবেন কিনা। যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস অথবা কনস্যুলেটগুলো থেকে যেসব ভিসা দেওয়া হয়, তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো: ১. স্থায়ী বসবাসেরজন্য অভিবাসী ভিসা। ২. পর্যটন বা ব্যবসার জন্য ভিজিটর ভিসা। ৩. মার্কিন নাগরিক পুরুষ বা নারীকে বিয়ে করার জন্য বাগদত্তা ভিসা। ৪. শিক্ষার্থীদের জন্য ভিসা। ৫. কানাডা এবং মেক্সিকোর নাগরিকদের জন্য ব্যবসায়িক বা পেশাজীবী ভিসা। ৬. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হয়ে অন্য দেশে যাওয়ার জন্য ট্রানজিট ভিসা। এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রে যেভাবে ঢুকা যাবে প্রসঙ্গ:
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে সেখানে পৌঁছানোর পর আপনাকে অবশ্যই বৈধ ভ্রমণ নথি দেখাতে হবে। তবে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং ভ্রমণের তারিখ থেকে পরবর্তী ছয় মাসের জন্য পাসপোর্টের মেয়াদ থাকতে হবে কিনা; তা নির্ভর করে আপনি যে দেশ থেকে যাচ্ছেন এবং সেদেশে আপনার নাগরিকত্বের ওপর। উপরন্তু, দেশটিতে প্রবেশের আগে বিদেশি নাগরিকদের অবশ্যই কোভিড-১৯ এর পূর্ণ ডোজের টিকা নেওয়া থাকতে হবে।
এছাড়া, অন-অ্যারাইভাল ভিসাধারীরা ছাড়া অন্যরা যেভাবে যেতে পারবেন:
তা হলো আসলে সব দেশ থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকারীদের সেখানে যাওয়ার জন্য একটি বৈধ পাসপোর্ট থাকতে হবে। আর এই ভ্রমণকারীদের নাগরিকত্ব যে দেশেরই হোক না কেন পাসপোর্ট থাকা অপরিহার্য। স্থায়ী বাসিন্দা এবং বিদেশি নাগরিকদেরও মার্কিন ভিসার প্রয়োজন হবে। স্বপ্নের এই দেশে যাত্রা শুরুর আগে আপনাকে অবশ্যই ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। আর নির্দিষ্ট কিছু দেশের নাগরিকরা ‘গ্লোবাল অ্যান্ট্রি’ প্রোগ্রামের সদস্য পদ পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারেন। আপনি গ্লোবাল অ্যান্ট্রির জন্য আবেদন করার যোগ্য কিনা তা অনলাইনে দেখে নেওয়া যেতে পারে।
বাস্তবে, প্রত্যেক বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রায় ১০ লাখ মানুষ আমেরিকার গ্রিন কার্ড পেয়ে থাকেন। এই কার্ডের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন স্থায়ী বাসিন্দা হিসাবে মনোনীত করা হয় তাদের। আর এই ১০ লাখ মানুষের মধ্যে অনেকেই অভিবাসী ভিসার মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান।
অভিবাসী ভিসার ধরন হলো: যারা অভিবাসী ভিসা ব্যবহার করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যান, তাদের বেশির ভাগই নিচের যেকোনও একটি ভিসা পান:
পরিবার-ভিত্তিক ভিসা। অর্থাৎ যাদের পরিবারের সদস্য মার্কিন নাগরিক বা স্থায়ী বাসিন্দা তারা এই ভিসা পাবেন।
আর কাজ বা চাকরির ভিসা: এজন্য সাধারণত একজন মার্কিন নিয়োগকর্তার কাছ থেকে চাকরির অফার লেটারের প্রয়োজন হয়। বাস্তবে অভিবাসী ভিসা পাওয়ার জন্য একান্ত জরুরি হলো:
১. বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে কারও স্পন্সর নেওয়ার প্রয়োজন হবে অথবা অভিবাসী হিসেবে পিটিশন জমা দিতে হবে। ২. পিটিশন অনুমোদন না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। পিটিশনের অনুমোদন মিললে অভিবাসী ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। আর এই আবেদন করতে হবে বিদেশে মার্কিন কনস্যুলেটের মাধ্যমে। ৩. এরপর মেডিক্যাল টেস্ট সম্পন্ন করতে হবে। ৪. এবার সব কাগজপত্র নিয়ে সাক্ষাৎকারের জন্য যেতে হবে এবং ৫. আবেদনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত অবশ্যই অপেক্ষা করতে হবে।
তাছাড়া, অভিবাসী ভিসা পাওয়ার আরেকটি উপায় হলো- ডাইভারসিটি ভিসা বা ডিভি লটারি কর্মসূচি। তবে বাংলাদেশ বর্তমানে উক্ত ডিভি লটারির আওতায় নেই। সেহেতু, বাংলাদেশ থেকে আপাতত ডিভি লটারি প্রোগ্রামে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার সুযোগ নেই। আর এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে যেসব দেশের অভিবাসীর হার যুক্তরাষ্ট্রে কম, সেসব দেশকে অগ্রাধিকার হিসেবে ধরে ডিভিলটারিতে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়ে থাকে।
অভিবাসী ভিসা পাওয়ার পর কী করনীয়:
একবার অভিবাসী ভিসা পেয়ে গেলে আপনাকে ইউএসসিআইএস নামে অবশ্যই অভিবাসী ফী জমা দিতে হবে। এরপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রবেশদ্বারে কর্মকর্তাদেরকে দেওয়ার জন্য একটি সিল করা নথির প্যাকেট পাবেন। যা সেখানে পৌঁছানোর পর মার্কিন কর্মকর্তাদের হাতে তুলে দিতে হবে। বারে আপনার সেই স্বপ্ন হাতের মুঠোয় চলে আসতে পারে। আপনি স্থায়ী বাসিন্দা হিসাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারবেন এবং ই-মেইলে পৌঁছে যাবে বহুল আকাঙ্খিত সেই ‘গ্রিন কার্ড’ নামের সোনার হরিণ আপনার ঠিকানা অনুযায়ী।
ওদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকারীদের অভিবাসী ভিসার আবেদন করা নিষ্প্রয়োজন। আপনি যদি ইতোমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্টে ্রঅবস্থান করে থাকেন, তাহলে আপনাকে অভিবাসী ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে না। বরং আপনার সাম্প্রতিক স্ট্যাটাসের ভিত্তিতে গ্রীন কার্ডের জন্য আবেদন করতে হবে। এজন্য আপনাকে নিজ দেশেও ফিরতে হবে না। তবে অভিবাসীভিসার আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে আপনাকেও।
*তবে অবশ্যই আপনাকে কারও স্পন্সর নেওয়ার প্রয়োজন হবে অথবা অভিবাসী পিটিশন জমা দিতে হবে। *পিটিশন এবং অভিবাসী ক্যাটেগরির ভিসার অনুমোদন না পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তারপর যুক্তরাষ্ট্রে থেকেই গ্রিন কার্ডের জন্য আবেদন করতে হবে। *যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানের পরও আপনাকে মেডিকেল টেস্ট সম্পন্ন করতে হবে। এরপর সাক্ষাৎকারে যেতে হবে এবং আবেদনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
এছাড়া, শরণার্থী এবং আশ্রয় প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে, শরণার্থী বলা হয় এমন লোকজনকে- যারা দেশে নির্যাতন-নিপীড়ন (বা নিপীড়নের ভয়ে) এবং যুদ্ধসহ বিভিন্ন কারণে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্রে নিরাপত্তা পাওয়ার খোঁজ করে থাকেন।
এ ক্ষেত্রে আপনি যদি মনে করেন যে, শরণার্থী হিসাবে সুরক্ষা প্রয়োজন, তাহলে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ইউএনএইচসিআর বা অন্য আন্তর্জাতিক অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। এসব সংস্থার কাছে পৌঁছাতে ব্যর্থ হলে নিকটস্থ মার্কিন দূতাবাস বা কনস্যুলেটের সাথে যোগাযোগ করলেও প্রয়োজনীয় সহায়তা পাবেন।
এছাড়া, শরণার্থীদের সুরক্ষা নিশ্চিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার লোকজনকে ‘আশ্রয়’ও দিয়ে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয়ের আবেদনের জন্য আপনাকে অবশ্যই কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে।
যেমন: যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় পাওয়ার পর আপনি যা করতে পারবেন: এর পর স্বামী/স্ত্রী এবং সন্তানদেরকেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আনার অনুমতি পেয়ে যেতে পারেন। তদুপরি, স্থায়ী বাসিন্দার মর্যাদাও লাভ করতে পারেন। ঝড়ঁৎপব ড়ভ রহভড়ৎসধঃরড়হ ধহফ ঢ়যড়ঃড়ং- ঈড়ঁৎঃবংু: ফবংযঁং/ ফযধশধঢ়ড়ংঃ.