
আবারো বাড়ছে চিকিৎসা খরচ

ষ্টাফ রিপোর্টার॥ সরকার মেডিক্যাল ডিভাইস বা চিকিৎসা সরঞ্জামের ওপর ভ্যাট বাড়াতে পারে- এমন আশঙ্কায় আগেই কিছু জিনিসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে আমদানিকারক ব্যবসায়ী সমিতি। এর মধ্যে রয়েছে চোখের কৃত্রিম লেন্স ও হৃদরোগের জরুরি চিকিৎসায় ব্যবহৃত স্টেন্ট।
গত সোমবার ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট আমদানিকারকদের মধ্যে এ বিষয়ে একটি সভা হয়েছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মাঝপথে এসে শতাধিক পণ্য এবং সেবার ওপর মূল্য মূসক ও সম্পূরক শুল্ক বাড়াল সরকার। এতে মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সঙ্গে ওষুধের দাম ২.৪ থেকে ৩ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এতে প্রতিটি ওষুধের দাম বাড়ছে।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের হলরুমে অনুষ্ঠিত এক সভায় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. শামীম হায়দার, পরিচালক মো. আসরাফ হোসেন ও ড. মো. আকতার হোসেনসহ মেডিক্যাল ডিভাইস ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) মো. ওয়াসিম আহমেদ, অফথালমিক প্রডাক্টস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সহসভাপতি আমানউল্লাহ বাদল উপস্থিত ছিলেন।
অধিদপ্তর সূত্র বলেছে, মেডিক্যাল ডিভাইসের ওপর ভ্যাট বাড়াতে পারে- এমন আশঙ্কা থেকে ডলারের মূল্য সমন্বয় ও পণ্যমূল্যের সঙ্গে ভ্যাট যুক্ত করে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য পুনর্র্নিধারণের দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে, মানুষের কষ্ট হয়- এমন লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি যেন না হয়। তবে আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা বলছেন, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়হার ৫ শতাংশ বা তার বেশি বাড়লে বা কমলে সংশ্লিষ্ট কম্পানির সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য পুনর্র্নিধারণ এক মাসের মধ্যে করার অনুরোধ জানিয়েছেন। একই সঙ্গে ডলারের মূল্য সমন্বয়, পণ্য নিবন্ধন ও সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ প্রক্রিয়া সহজীকরণ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ডলারপ্রতি ১১০ টাকা ধরা হয়েছে। বাস্তবে সরকারি মূল্য ১২০ টাকা, ব্যাংক নিচ্ছে ১২৫ থেকে ১২৭ টাকা পর্যন্ত। এ ছাড়া আমদানির সময় অগ্রিম কর, হাসপাতালে সার্ভিস চার্জ, বিপণন ভ্যাট ও অগ্রিম আয়কর দেয়া হলেও সেটি মূল্যের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়নি। সেটি সমন্বয় করে নতুন করে যেন মূল্য নির্ধারণ করা হয়।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. শামীম হায়দার ব্যবসায়ীদের বলেন, আপনারা সরাসরি এখানে এসে অভিযোগ করতে পারেন, ভোক্তারা কিন্তু আসে না। আমাদের শতভাগ তাদের বিষয় মাথায় রেখে কাজ করতে হয়। জনগণের সমস্যা যাতে না হয়, একই সঙ্গে তারা যেন নিরাপদ ও মানসম্পন্ন পণ্য পায় এ বিষয়টি বিবেচনা করতে হয়।
অফথালমিক প্রডাক্টস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সহসভাপতি আমানউল্লাহ বাদল বলেন, ‘ডলারের দামের সঙ্গে মূল্য নির্ধারণের দাবি জানিয়েছি আমরা। ডলারের সঙ্গে মূল্য সমন্বয় না হলে আমাদের পক্ষে ব্যবসা করা কঠিন।’
আমানউল্লাহ বাদল বলেন, ‘সরকার ভ্যাট নিচ্ছে, কিন্তু মূল্যের সঙ্গে যুক্ত করছে না। এর আগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড মূল্যের সঙ্গে ভ্যাট যুক্ত করার কথা বলেছিল, সেসব তথ্য-উপাত্ত ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে দিয়েছি। নতুন করে ভ্যাট যুক্ত হলে কার্ডিয়াক স্টেন্ট, লেন্সের দাম বাড়াতে হবে, এতে রোগীর খরচ বাড়বে।’ তিনি বলেন, এগুলো আমদানিনির্ভর পণ্য। ডলারের সঙ্গে সমন্বয় করতেই হবে। না হলে অবৈধভাবে পণ্য আসবে বস্তায় করে। সেগুলোর মান নিয়ন্ত্রণ করা হবে না। রোগী ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এর আগে ২০২৩ সালের ১৩ই ডিসেম্বর সাতটি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ৪৪ ধরনের কার্ডিয়াক স্টেন্টের দাম ২ হাজার থেকে ৫৬ হাজার টাকা পর্যন্ত কমিয়েছিল ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। ১৪ই ডিসেম্বর ১২ দেশের ১২৯ ধরনের লেন্সের দাম নির্ধারণ করে তারা।
মেডিক্যাল ডিভাইস ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) মো. ওয়াসিম আহমেদ বলেন, ‘চিকিৎসা সরঞ্জামের নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করা, এমআরপি পুনর্বিবেচনা করা, ভ্যাট এমআরপিতে যুক্ত করার বিষয়ে আমরা কথা বলেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের ৭.৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। এখন যদি সেটি বেড়ে যায়, তাহলে তো আমাদের দাম বাড়ানো ছাড়া উপায় থাকবে না।’
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক ড. আকতার হোসেন বলেন, ‘আজ দুই সংগঠনের বক্তব্য শুনেছে ঔষধ প্রশাসন। সরকারের দেয়া ডলারের মূল্য ও বাজারমূল্যের পার্থক্য রয়েছে। ব্যবসায়ীরা তাঁদের চিন্তা, শ্রম, অর্থ বিনিয়োগ করে ব্যবসায়ে আসেন। এখানে তাঁদের লাভ থাকতে হয়। আজকের বৈঠকে আমরা জানার চেষ্টা করেছি, কার্ডিয়াক ও চোখের যেসব মেডিক্যাল ডিভাইস রয়েছে, এগুলো কারা আনছে, বাস্তবে বাংলাদেশে কত ধরনের ব্যবহার হয়। এর মধ্যে নিবন্ধনের বাইরে কারা রয়েছে। যারা নিবন্ধন করেনি, তাদের নিবন্ধনের আওতায় কিভাবে আনা যায় এবং যারা মানসম্পন্ন ডিভাইস আমদানি করছে, তাদের সুযোগ সৃষ্টি করা যায়।’
মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে কিছু আলোচনা হয়েছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভ্যাট বাড়ানোর বিষয়টি সরকার নির্ধারণ করে। তারা যখন যে নির্দেশ দেয়, আমরা সেটা বাস্তবায়ন করি মাত্র। আমাদের ব্যবসায়ীরা যদি সার্বিকভাবে দেশের মানুষের কথা ভাবেন, তাহলে তাঁরা মাদার কম্পানির কাছে কম মূল্যে কিনে মূল্য সমন্বয় করতে পারেন। এতে মানুষ উপকৃত হবে।’