অর্থনীতি না বাঁচলে গণতন্ত্র বাঁচবে না

অদিতি করিম\ অর্থনীতি এবং গণতন্ত্র একে অন্যের পরিপূরক। অনেকটা রেললাইনের মতো। রেল যেমন দু’টি লাইন ছাড়া চলতে পারে না, ঠিক তেমনি একটি রাষ্ট্র রাজনীতি ও অর্থনীতির ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান ছাড়া চলতে পারে না। রাজনীতি ঠিক না থাকলে যেমন অর্থনীতি ভঙ্গুর হয়ে পড়ে, তেমনি অর্থনীতি না বাঁচলে গণতন্ত্রের মৃত্যু হয়।
সুশাসন, জবাবদিহি ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ অর্থনীতিকে এগিয়ে নেয়। বিনিয়োগকারীদের আস্থা সৃষ্টি করে। ঠিক তেমনি অর্থনীতিকে সহায়ক পরিবেশ না দিলে গণতন্ত্র চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। গণতন্ত্র বিকাশের জন্য অর্থনীতিতে স্বস্তি অপরিহার্য।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে আমরা যদি ইতিহাস পর্যালোচনা করি তাহলে দেখব, যখন গণতন্ত্র ধ্বংস হয়েছে, রাজনীতি নষ্ট হয়েছে, তখন অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, মুখ থুবড়ে পড়েছে। আবার যখন অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে, তখন গণতন্ত্র রক্ষা পায়নি। শুধু বাংলাদেশের ইতিহাস নয়, গোটা বিশ্বের ইতিহাসই এ রকম।
বিগত সাড়ে ১৫ বছর দেশে কোনো রাজনীতি ছিল না। রাজনীতির নামে মূলত একদলীয় কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা কায়েম করা হয়েছিল। ফলত অর্থনীতিও সঠিক পথে চলেনি, বরং ব্যবসায়ী, শিল্প উদ্যোক্তাদের বাধ্য করা হয়েছিল ক্ষমতাসীন দলের আজ্ঞাবহ হতে, সরকারের নিয়ন্ত্রণ ছিল সর্বত্র। ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে এবং সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক না রাখলে ব্যবসায়ীদের ব্যবসা করা ছিল অসম্ভব। সেই বাস্তবতায় একদিকে যেমন ব্যবসায়ীরা অনেকটা বাধ্য হয়েই তৎকালীন শাসক দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন, হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য তাঁদের সামনে আর কোনো বিকল্প ছিল না। সেই অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ খোলে গত বছর জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার এক অভূতপূর্ব অভ্যুত্থানের মাধ্যমে। এই জুলাই বিপ্লব ছিল একটি নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের আকাঙ্া। সেই নতুন বাংলাদেশ কেমন হবে তা নিয়ে এখন নানা রকম আলাপ-আলোচনা চলছে। কিন্তু এসব আলোচনায় অর্থনৈতিক ভাবনাগুলো সামনে আসছে না।
সরকারের পক্ষ থেকে প্রথম ছয় মাসের মধ্যে অনেক বিষয়ে সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। এই সংস্কার কমিশনগুলোর রিপোর্ট পর্যালোচনা করা, কোনটিকে গ্রহণ করা হবে, কোনটি গ্রহণ করা হবে না তা নিয়ে একটি ঐকমত্যে পৌঁছানোর জন্য জাতীয় ঐকমত্য কাউন্সিল গঠিত হয়েছে। এই কাউন্সিলের একটি বৈঠক গত ১৫ই ফেব্রæয়ারি অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা নিজেই বলেছেন, সরকারের দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু হয়েছে এবং ডিসেম্বরের মধ্যে একটি নির্বাচন হওয়ার ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টা, নির্বাচন কমিশন আশাবাদ ব্যক্ত করেছে। নির্বাচন হবে কিন্তু দেশে অর্থনীতির কী হবে সেটি যেন এখনো উপেক্ষিত। বরং এই সরকারের কিছু পদক্ষেপ ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, বিনিয়োগকারীদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। বেসরকারি খাত হয়ে পড়েছে উদ্যমহীন, হতাশ, আতঙ্কিত।
অন্তর্র্বতী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ছয় মাসে দেশের অর্থনীতির তেমন অগ্রগতি কারো চোখে পড়েনি। অতীতের দুর্নীতির অনুসন্ধানের পাশাপাশি আগামী কর্মপরিকল্পনা এবং ব্যবসায়ীদের আস্থায় নিয়ে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে আয়োজন নেই সরকারের। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা, রিজার্ভ এখন পুরোপুরি রেমিট্যান্স নির্ভর। প্রবাসীরা যে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন সেটিই অর্থনীতির একমাত্র সুখবর। কিন্তু অর্থনৈতিক সম্পর্কে ন্যূনতম যাঁদের জ্ঞান আছে, তাঁরা জানেন, এভাবে একটি দেশের অর্থনীতি চলতে পারে না। গত ছয় মাসে ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা শোচনীয়। কোনো শিল্পোদ্যোক্তা নতুন বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন না, সাহস পাচ্ছেন না। বাস্তবতা হলো, এ রকম অস্থির পরিস্থিতিতে কোনো ব্যবসায়ী নতুন কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করতে চান না। গত ছয় মাসে শত শত শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়েছে। কয়েক লাখ শ্রমিক চাকরিচ্যুত হয়েছে। ৫ই আগস্টের পর বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় সন্ত্রাসী তান্ডব হয়েছে, হামলা হয়েছে। এই কারখানাগুলো এখন পর্যন্ত ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। ব্যাংকিং খাতের অবস্থা খুবই নাজুক। কয়েকটি ব্যাংককে টাকা ছাপিয়ে তারল্য সরবরাহ করা হলেও সেই ব্যাংকগুলো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। যে পরিমাণ সুদের হার নির্ধারণ করা হয়েছে তা দিয়ে আর যাই হোক ব্যবসা-বাণিজ্য করা যায় না। ব্যাংকগুলোতে এখনো ডলারের সংকট তীব্র। ফলে আমদানিতে ব্যাপক সংকট দেখা দিচ্ছে। আমদানি সংকটের প্রভাব পড়েছে রপ্তানিতেও। সরকার ব্যবসায়ীদের আস্থায় নিতে পারেনি এখনো। শিল্প-কারখানা বন্ধ, শিল্পবান্ধব পরিবেশের অভাব, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে। গ্যাস, বিদ্যুৎ সংকট চালু কারখানাগুলোকেও কঠিন সংকটে ফেলেছে। এর মধ্যে বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহল সরকারকে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে রীতিমতো যুদ্ধের জন্য উসকানি দিচ্ছে। বিভিন্ন ব্যবসায়ী শিল্প গ্রæপকে নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হচ্ছে। ‘আওয়ামী লীগের দালাল’ তকমা দিয়ে স্বাভাবিক ব্যবসা কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা কোন পরিস্থিতিতে, কিভাবে বাধ্য হয়ে স্বৈরাচারী সরকারের কাছে আনুগত্য প্রকাশ করেছিল, তা কারো অজানা নয়। এ জন্য তাঁদের দায়ী করাটাও অযৌক্তিক। মনে রাখতে হবে, প্রকৃত শিল্পোদ্যোক্তা, ব্যবসায়ীরা কোনো দলের নয়, দেশের দালাল। তাঁরা যা করেন তা দেশের স্বার্থেই করেন। অথচ এখন এমন একটি প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে, যেখানে তাঁরা ব্যবসা বন্ধ করে হাত-পা গুটিয়ে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। এ রকম অবস্থা দেশের অর্থনীতির জন্য অশনিসংকেত। বিদ্যুৎসংকট আস্তে আস্তে দানা বেঁধে উঠছে। আগামী গ্রীষ্ম মৌসুমে বিদ্যুৎ সংকট প্রবল হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গ্যাসসংকটের কারণে অনেক শিল্প-কারখানা প্রচন্ড সংকটে। এ ক্ষেত্রেও সরকার যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারছে না। এসব বিষয়কে এখনই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। যেকোনো দেশের অর্থনীতির গতিপ্রবাহ নির্ভর করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর। যদি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো না থাকে, তাহলে অর্থনীতিতে গতি আনা অসম্ভব ব্যাপার। গত সাড়ে ছয় মাসে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। নিয়ন্ত্রণহীন সন্ত্রাস শিল্পাঞ্চলে রীতিমতো আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। এ রকম পরিস্থিতিতে অর্থনীতির জন্য কোনো ইতিবাচক সংকেত নেই, পূর্বাভাসও নেই। অর্থনীতির দিকে রাজনৈতিক দলগুলোর মনোযোগ কম, বরং অর্থনীতির চেয়ে রাজনৈতিক বিষয়ে তাদের আগ্রহ এবং মনোযোগ বেশি। কোন নির্বাচন আগে, কোনটা পরে ইত্যাদি নানা টানাপড়েনের মধ্যে তারা নিজেদের ব্যস্ত রাখছে। কিন্তু একটি কথা ভুলে গেলে চলবে না, দেশের অর্থনীতি যদি মুখ থুবড়ে পড়ে, অর্থনীতি যদি স্থবির হয়ে যায়, তাহলে জনগণকে স্বস্তি দেওয়া যাবে না। মানুষের মধ্যে নানারকম অসন্তোষ দানা বেঁধে উঠবে। এটি শেষ পর্যন্ত গণতন্ত্রকেই আঘাত করবে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আগে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার প্রয়োজন।
অন্তর্র্বতী সরকার অনেক বিষয় সংস্কার করেছে। কিন্তু অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারের জন্য এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো উদ্যোগ নেই। ব্যবসায়ীদের আস্থায় নিয়ে সবার সঙ্গে বৈঠক করে একটি ঐক্যবদ্ধ অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণের কোনো উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়।
নানা রকম সীমাবদ্ধতা সত্তে¡ও স্বাধীনতার ৫৩ বছরে বাংলাদেশ যে অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক উন্নতি করছে, তার পেছনে প্রধান কারণ হলো বেসরকারি খাত। বেসরকারি খাতের বিনিয়োগকারীরা তাঁদের শ্রম, মেধা এবং উদ্ভাবনী সৃজনশীলতা দিয়ে নিত্যনতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছেন, শিল্প-কারখানার বিকাশ ঘটিয়েছেন এবং বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশে কখনোই ব্যবসায়ীদের দেশ গড়ার কারিগর হিসেবে বিবেচনা করা হয়নি। সব সময় ব্যবসায়ীদের একটি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে চিহ্নিত করার এক ধরনের অনাকাঙ্খিত প্রয়াস লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একজন ব্যবসায়ী তিনি কোনো দল-মতের নন, তিনি বাংলাদেশের, তিনি একজন শিল্পোদ্যোক্তা। তাঁর শিল্প উদ্যোগের মাধ্যমে দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটে, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়। খুব কমসংখ্যক ব্যবসায়ী আছেন, যাঁরা লুটেরা, যাঁরা অর্থ পাচার করেন এবং ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে লোপাট করেন। এঁরা মূলত রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় থাকেন। যেসব ব্যবসায়ী শিল্প উদ্যোগে মনোযোগী, শিল্প উদ্যোগে আগ্রহী, তাঁরা নির্বিঘেœ নির্ভয়ে ব্যবসা করতে চান। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা হলো, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলগুলো ব্যবসায়ীদের কুক্ষিগত করতে চায়, তাঁদের ব্যবহার করতে চায়। যতক্ষণ পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা তাদের আনুগত্য স্বীকার না করে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাঁদের নানা রকম রাজনৈতিক বাধার মুখে পড়তে হয়। এ কারণেই অনেক ব্যবসায়ী বাধ্য হয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠানে যোগ দেন। কারণ, এটি শুধু তাঁদের স্বার্থের বিষয় নয়, এর সঙ্গে লাখ লাখ উৎপাদন কর্মী, শ্রমিকের স্বার্থ জড়িত। কিন্তু অনেকেই এই বাস্তবতা উপলব্ধি করেন না। কোনো ব্যবসায়ী কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দলের সমর্থক থাকতেই পারেন, সেটি ভিন্ন বিষয়। কিন্তু যেসব ব্যবসায়ী কোনো রাজনৈতিক দল করেন না বা কোনো রাজনৈতিক চিন্তা-ভাবনাকে লালন করেন না, তাঁরা বিভিন্ন সময় সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হন শুধু দেশের স্বার্থে। দেশের উন্নয়ন এবং উৎপাদন বৃদ্ধির স্বার্থে। কাজেই যেকোনো সরকার পরিবর্তনের পর একটা দলীয় তকমা ব্যবসায়ীদের লাগিয়ে দেয়াটা সঠিক নয়। এর ফলে একটা নেতিবাচক বার্তা যায়। ব্যবসায়ীরা উদ্যম হারিয়ে ফেলেন। এ দেশে যেমন রাজনীতিবিদদের অবদান আছে, তাঁরা গণতন্ত্রকে সুসংহত করেন, তেমনি শিল্পোদ্যোক্তা এবং ব্যবসায়ীরা ছাড়া দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখা অসম্ভব ব্যাপার। আর সে কারণেই অতীতে কে কী করেছেন তার পেছনে না ছুটে বর্তমানে একজন শিল্পোদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী কিভাবে দেশকে এগিয়ে নেবেন, তাঁর ভাবনাকে গ্রহণ করা উচিত। সারা দেশে একটি ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা হলো বর্তমান সরকারের প্রধান দায়িত্ব। সাড়ে ১৫ বছর আওয়ামী লীগ কিভাবে ব্যবসায়ীদের জিম্মি করেছে, কিভাবে ব্যবসায়ীদের আনুগত্যে বাধ্য করেছে তা সবাই জানে। আর সে কারণেই আমলাদের অনেককে সরকারের আনুগত্য স্বীকার করতে হয়েছে, যে কারণে রাজনৈতিক দলগুলোকে স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থার বাস্তবতাকে হজম করতে হয়েছে, ঠিক সেভাবেই ব্যবসায়ীরাও শুধু দেশের স্বার্থে এবং কর্মসংস্থানের জন্য লাখ লাখ কর্মীর মুখের দিকে তাকিয়ে মুখ বুজে অন্যায় সহ্য করেছেন। এ জন্য কোনোভাবেই একজন ব্যবসায়ীকে দোষী করা যায় না।
এখন দেশে রাষ্ট্র সংস্কার চলছে। নানা বিষয়ে সংস্কার প্রস্তাব দেয়া হচ্ছে। আমার মনে হয়, এসব সংস্কার প্রস্তাবে বেসরকারি খাতের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা দরকার। ভবিষ্যতে যারাই ক্ষমতায় আসবে তারা ব্যবসায়ীদের জিম্মি করবে না। সরকারের আনুগত্য, দেনদরবার, ঘুষ ছাড়া শিল্প উদ্যোক্তারা, ব্যবসায়ীরা তাঁদের কাজ যেন এগিয়ে নিতে পারেন, সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রæতি এবং অঙ্গীকার থাকতে হবে। ব্যাংকঋণ, গ্যাসলাইন, বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে সরকারের কাছে ধরনা দিতে হবে না। মন্ত্রী-এমপিদের কাছে তদবির করতে হবে না। রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ব্যবসায়ীদের যোগ দিতে বাধ্য করা যাবে না। সবচেয়ে বড় কথা, রাষ্ট্র সংস্কারের জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের উচিত হবে দেশের প্রতিষ্ঠিত শিল্প গ্রæপ ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও বৈঠক করা। দলীয় সরকারগুলো অতীতে তাঁদের কিভাবে ব্যবহার করেছে তা শোনা এবং এর প্রতিকারের ব্যবস্থা নেয়া। ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তাদের রাজনৈতিক ডামাডোল এবং বিতর্কের বাইরে রাখতে হবে। যেন সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা হয়রানির শিকার না হন। মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের অর্থনীতির হৃদপিন্ড বেসরকারি খাত। বেসরকারি খাত না বাঁচলে গণতন্ত্র বাঁচবে না, রাষ্ট্র পড়বে অস্বিত্বের সংকটে।
লেখক : নাট্যকার