বৃহস্পতিবার, ২০শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

কুমিল্লাজুড়ে নির্বিচারে চলছে আবাদি জমির মাটি  কাটাঃ উর্বরতা শক্তি হারিয়ে জমি হচ্ছে অনাবাদি

কুমিল্লাজুড়ে নির্বিচারে চলছে আবাদি জমির মাটি কাটাঃ উর্বরতা শক্তি হারিয়ে জমি হচ্ছে অনাবাদি

Views

            ষ্টাফ রিপোর্টার\ মাটি খেকোদের জন্য শুষ্ক মৌসুমের পুরো সময়টা যেন সোনায় সোহাগা। কুমিল্লায় তিন ফসলি জমি থেকে মাটি বিক্রির হিড়িক পড়েছে। যার ফলে আশঙ্কাজনক হারে কৃষিজমি হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। মাটি খেকোরা আইনের তোয়াক্কা না করেই অবাধে চালাচ্ছে এ ফসলি জমির মাটির ব্যবসা। জমির উপরিভাগের মাটি পাঁচ/সাত ফুট গভীর পর্যন্ত কেটে নিচ্ছে তারা। এতে করে এসব জমি উর্বরতা শক্তি হারিয়ে অনাবাদিতে পরিণত হচ্ছে। মাটি ব্যবসায়ীরা কৃষকদের টাকার লোভ দেখিয়ে ফসলি জমিতে ভেকু বা ড্রেজার মেশিন বসিয়ে মাটি কেটে বিক্রি করছেন বিভিন্ন বাড়ির ভিটে, নিচু জমি, পুকুর ভরাট এবং ইটভাটায়। আবার এসব মাটি ডাম্প ট্রাক, ট্রাক্টর ও ট্রাক দিয়ে নেয়ার সময় কৃষিজমির পাশাপাশি গ্রামীণ এবং পাকা রাস্তার ক্ষতি হচ্ছে।

            কুমিল্লার যেসব এলাকার জমি থেকে মাটি কাটা হয়ে থাকে এসব জমিতে ধান, পাট, গম, ভুট্টা, আলু, সরিষা, মরিচ, বেগুনসহ বিভিন্ন জাতের কৃষিপণ্য উৎপাদন হয়ে থাকে। ফসল উৎপাদনের জন্য জমিতে শতকরা পাঁচ ভাগ জৈব উপাদান দরকার এবং তা সাধারণত মাটির ওপর থেকে আট ইঞ্চি গভীর পর্যন্ত থাকে। কৃষকরা জমির উর্বরতা শক্তির ক্ষতি হবে, এমন দিক চিন্তাভাবনা না করেই কেউ সামান্য লাভের আশায় কেউবা প্রভাবশালী মাটি খেকোদের ভয়ে জমির ভবিষ্যতের ফসল উৎপাদনের পথ বিক্রি করে দিচ্ছেন।

            গত কয়েকদিন ধরে খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, কুমিল্লা সদরের গোমতীর উত্তর ও দক্ষিণ পাড়ে চাঁনপুর, পাচথুবী এলাকার হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমির মাটি দিনে-রাতে কাটা হচ্ছে। মুরাদনগরের গোমতী নদীর চর এলাকায় অন্তত এক হাজার হেক্টর ফসলি জমি থেকে প্রতিদিন ভেকু মেশিন বা ড্রেজার বসিয়ে মাটি গভীর করে কেটে নিয়ে ড্রাম ট্রাক, ট্রাক্টর করে ইটভাটাসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করছে মাটি ব্যবসায়ীরা। এছাড়াও চৌদ্দগ্রাম, লালমাই, সদর দক্ষিণ, নাঙ্গলকোট, বরুড়া, চান্দিনা, দেবিদ্বার, বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়াসহ বিভিন্ন উপজেলায় সহ¯্রাধিক স্পটে ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি কাটার হিড়িক চলছে।

            সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও জমিতে দুই থেকে তিন ফুট, কোথাও পাঁচ থেকে সাত ফুট গভীর করে মাটি কাটা হচ্ছে। মাটি কাটার কাজে ভেকু মেশিন ব্যবহার করতে দেখা গেছে। মাটি ভর্তি ড্রাম ট্রাক, ট্রাক্টরগুলো অন্যের জমি মাড়িয়ে চলাচল করছে।

            মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুর রহমান জানান, এ উপজেলার যেসব স্পটে ফসলি জমি ও নদীর পাড়ের মাটি কাটা হয় সেখানে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এরিমধ্যে মাটি কাটা চক্রের বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি মামলা করা হয়েছে।

            চৌদ্দগ্রাম উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জাকিয়া সরওয়ার লিমা জানান, কয়েকটি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে বেশ কয়েকটি ভেকু ও ড্রেজার মেশিনসহ মাটি কাটা সরঞ্জামাদি জব্দ এবং কয়েকজনকে অর্থদন্ড, কারাদন্ডও দেয়া হয়েছে।

            কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপ-পরিচালক আইউব মাহমুদ জানান, কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি কাটলে জমি তার উর্বরতা হারায়। মাটির গভীরে মাটি খনন মেশিনের আঘাতে নষ্ট হয় প্রাকৃতিক লাঙ্গল কেঁচোসহ জমির উপকারী পোকামাকড়। এতে জমির স্থায়ী ক্ষতি হয়। এতে করে ফসল উৎপাদনও আশঙ্কাজনক হারে কমে যাবে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে কৃষক ও জমির মালিকদের উপরিভাগের মাটি বিক্রি না করতে পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

            কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়সার সাংবাদিকদের জানান, কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি কেটে শ্রেণি পরিবর্তন করা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। এ কাজের সঙ্গে জড়িত জমি ও ইটভাটার মালিক উভয়ের জন্যই সমান শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। কৃষিজমি থেকে যারাই মাটি কাটার সঙ্গে জড়িত থাকুক না কেন, অভিযোগ পেলেই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে থাকে। মাটি কাটা বন্ধে দিনে এবং রাতেও অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রয়েছে।

Share This

COMMENTS