শনিবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ফিলিস্তিনে আল্লাহ’র সাহায্য কতদূরে?

১৭ Views

\ মোঃ ইয়াছিন মজুমদার \

আল্লাহ আবাবিল পাখি দিয়ে কাবাঘর রক্ষা করতে পারলে, বদর যুদ্ধে সাহায্য করতে পারলে ফিলিস্তিনের নির্যাতিত মুসলমানদের সাহায্য করতে পারছেন না কেন? শত শত মুসলমানের দোয়া কবুল করছেন না কেন? বর্তমানে গাজায় ইসরায়েলি হামলা প্রসঙ্গে কেউ কেউ এ ধরণের প্রশ্ন করছেন। এ বিষয়ে কিছু কথা নিম্নে তুলে ধরছি –

প্রথমে যুক্তি দিয়ে বিষয়টি দেখুন। একটি মুরগি খাবারের দানা খুঁজে পেলে ঠোঁটে করে এনে এক রকম আওয়াজ করে ছোট বাচ্চাগুলোকে নিজে না খেয়ে  খাওয়ায়। চিল কাক থেকে রক্ষার জন্য জীবনবাজি রেখে লড়াই করে। সে বাচ্চাগুলো একটু বড় হয়ে মায়ের খাবারে ভাগ বসাতে এলে মা মুরগি তাদের ঠোকর দিয়ে তাড়িয়ে দেয়, ভাবখানা এমন যে তোরা এখন স্বাবলম্বী এখন আমার দায়িত্ব শেষ। চিল, বাজপাখি শিকার করে এনে বাচ্চাকে খাওয়ায়। বাচ্চারা উড়তে শিখলে একদিন মা-বাবা বাজপাখি তাদেরকে নিয়ে মাঠে চলে যায় এবং শিকার ধরার নিয়ম শেখানোর জন্য তাদের সামনে একটি শিকার করে রেখে দেয়, বাচ্চারা ওই শিকার খাওয়ার দিকে মনোযোগী হলে তাদেরকে ফেলে মা-বাবা চলে যায়। মা বাবা তাদের দায়িত্ব পালন শেষ করে। এরপর থেকে ওই বাচ্চারা নিজেরা শিকার করে খেয়ে জীবন ধারণ করে, মা বাবার উপর নির্ভর করার দিন তাদের শেষ। প্রকৃতির অনেক কিছুর দিকে তাকালে আপনি তাই দেখবেন। এবার মিলিয়ে দেখুন, যখন মুসলমান ছিল না তখন আল্লাহ কাবা ঘর রক্ষায় আবাবিল পাঠিয়েছেন। যখন মুসলমান হাতে গোনা, তখন বদর যুদ্ধে আল্লাহ সরাসরি সাহায্য করেছেন। এখন সারা বিশ্বে ২০০ কোটির উপর মুসলমান, যে তৈল দিয়ে যুদ্ধ বিমান চলে, যুদ্ধ জাহাজ চলে, সে তৈলের খনির সিংহভাগই মুসলমানদের হাতে। মাত্র কয়েক লাখ ইহুদীর বিরুদ্ধে কার্যকর কোন পদক্ষেপ না নিয়ে শুধু মুখের বুলি দু’চারটি কথা বলে দায়িত্ব শেষ করবে, ইহুদীদের পণ্য সামগ্রী ব্যবহার করবে, জ্ঞান বিজ্ঞানে এগিয়ে যেতে পরস্পর সহযোগিতা করবে না, নতুন কার্যকরী অ¯্র আবিষ্কার করবে না। অনেক মুসলিম দেশ ঘাটি আকাশপথ ব্যবহারের সুযোগ দিবে, অবৈধ ইজরায়েল রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিবে, ইহুদী সুন্দরী তরুণীদের প্রেমে মত্ত হবে। আর আল্লাহর সাহায্য কামনা করবে তা কি হাস্যকর নয় ?

অপরদিকে আল্লাহপাক যা ভালো তাই করেন। ফিলিস্তিনের মানুষের জন্য এখনই সহযোগিতা না করা কোন কল্যাণের জন্য ও হতে পারে। শিয়াদের কোন কোন শাখা বাস্তবে সঠিক ইসলামের পথ থেকে দূরে, মধ্যপ্রাচ্যে ইরান শিয়াদের একটি বিশাল বলয় তৈরি করছে। এই বলয় সত্যিকারের সুন্নি মুসলমানদের জন্য সমস্যার কারণ হতে পারে। আর ইরানের সহযোগিতায় ফিলিস্তিনের বিজয় হলে, ফিলিস্তিন শিয়া প্রভাবিত হলে ওই অসুবিধা আরো বাড়তে পারে বলে কেউ কেউ মনে করছেন।

ফিলিস্তিনে ইসলামী আন্দোলন দুই গ্রæপে বিভক্ত। এক গ্রæপ পিএলও সংশ্লিষ্ট, যাদের এখন বলা হয় আলফাতাহ গ্রæপ। তারা পশ্চিম তীর নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা ইজরায়েল রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। তারা ১৯৯৩ সালের অসলো চুক্তি অনুযায়ী ইজরায়েল ও ফিলিস্তিন দুই রাষ্ট্রে ভাগ করার পক্ষে। অপরদিকে হামাস গ্রæপ নিয়ন্ত্রণ করছে গাজা এলাকা। তারা দখলদার ইজরায়েল রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে রাজি নয় বরং স্বশ¯্র যুদ্ধের মাধ্যমে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা চায়। এ দু’গ্রæপের চাওয়া দুই রকম, আল্লাহ কার চাওয়া পুরণ করবেন? তাদের অনৈক্য ও সমস্যা সমাধানের অন্তরায় হচ্ছে।

অপরদিকে দুনিয়ার জয় পরাজয় আল্লাহর কাছে কিছুই নয়। ফিলিস্তিন সমস্যা জিইয়ে রেখে আল্লাহ মুসলমানদের ঈমানের পরীক্ষা ও আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করতে জান মাল দিতে কারা প্রস্তুত, বিশ্ব মুসলিম নেতৃবৃন্দের ভুমিকা কি, এ পরীক্ষা নিচ্ছেন। সুন্নি মুসলিম রাষ্ট্রের নেতৃবৃন্দের ভুমিকা কি, তা দেখছেন।

কখন কাকে জয়ী করবেন, কাকে পরাজিত করবেন, তা আল্লাহর হাতে। বাংলাদেশে সকল রাজনৈতিক দল ১৬ বছর ধরে কত আন্দোলন করেছে, কত লোক জীবন দিয়েছে কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের কিছুই করতে পারেনি। সকলের এ ধারণা ছিল আওয়ামী লীগ সরকারকে হঠানোর সাধ্য কারো নেই। আল্লাহ শুধু মাত্র ছাত্রদের কোটা আন্দোলনকে এমন স্তরে নিয়ে গেছেন সরকার পরিবর্তন হয়ে গেছে। ঠিক তেমনি ফিলিস্তিনের বিজয় কখন কি ভাবে দিবে, আদৌ দিবেন কি না তা আল্লাহ ভালো জানেন।

লেখকঃ অধ্যক্ষ, ফুলগাও ফাযিল ডিগ্রি মাদরাসা, লাকসাম, কুমিল্লা। ০১৯৭১৮৬৪৫৮৯

Share This