“নরহরিপুর” মনোহরগঞ্জ উপজেলার একটি অবহেলিত গ্রাম! শিক্ষা-দীক্ষা আর ভদ্রতা-সৌজন্যতা সবই বিদ্যমান শুধু নেই রাস্তা-ঘাট ও পুল-কালভার্টগুলোর উন্নয়ন?


শহীদুল্লাহ ভূঁইয়াঃ
নরহরিপুর; কুমিল্লা জেলার মনোহরগঞ্জ উপজেলার ৫নং দক্ষিণ ঝলম ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত ঐতিহ্যবাহী একটি গ্রামের নাম। এই গ্রামের রাস্তা-ঘাটের দৈন্যদশায় এলাকাবাসীরা নিদারুণ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন বলে গত দু’বছর ধরে স্যোসাল মিডিয়ায়ও নানা লেখা-যোখা চোখে ভাসছে এবং সেগুলো অনেকের চোখেও পড়ছে। কিন্ত চলাচলে মানুষের দুর্দশার শেষ হয়নি।
এ সম্পর্কে নরহরিপুর গ্রামের একজন স্বনামধন্য বাসিন্দা হাফিজ আহমেদ ভূঁইয়া লিখেছেন- মনোহরগঞ্জ উপজেলার ৫ নং দ: ঝলম ইউনিয়নের অর্ন্তগত “নরহরিপুর” গ্রামবাসীর চলাচলে দারুন বেহাল অবস্থা। এ গ্রামে যেন সব মোঘল আমলের পরিত্যক্ত রাস্তা-ঘাট। ভুক্তভোগী গ্রামবাসীদের এহেন দুরাবস্থা দেখার মতো কেউ নেই।
তিনি ‘বাতির নীচে অন্ধকার’ হেডিং দিয়ে উল্লেখ করেন যে, ‘আমাদের সকলের প্রিয় ও শ্রদ্ধাভাজন মাননীয় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সুযোগ্য মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম এমপি মহোদয়ের নিজের ইউনিয়নই এটি। আর মন্ত্রী মহোদয়ের নিজ গ্রাম পোমগাঁও থেকে অতি নিকটবর্তী মাত্র মাইল খানিক দূরেই এই নরহরিপুর গ্রামের অবস্থান। অথচ, নরহরিপুরের রাস্তা-ঘাটগুলোর এহেন বেহাল অবস্থার কথা কল্পনা করা কষ্টকরই বটে।
হাফিজ আহমেদ ভূঁইয়া লিখেছেন যে, অনেক ঐতিহ্য, সুনাম ও সন্মানের ধারক ও বাহক এই গ্রাম। এই নরহরিপুর গ্রামে হাট-বাজার, মসজিদ, স্কুল-মাদরাসা, মক্তব সবই আছে। আঁশ-পাশের রাস্তা-ঘাটের যথেষ্ট উন্নয়ন সাধন হয়েছে এবং অনেক প্রকল্প চলমানও আছে। কিন্তু দীর্ঘদিন যাবত নরহরিপুরের ইমামপাড়া থেকে নছর উদ্দিন মিয়াজীর মাজার সংলগ্ন সংযোগ সড়কসহ আবুল মার্কেট পর্যন্ত পুরো রাস্তাটির মারাত্মক বেহাল ও জরাজীর্ন অবস্থা। অথচ, এ রাস্তার উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কেনো কার্যকর পদক্ষেপ নেই।
হাফিজ আহমেদ উল্লেখ করেন যে, ‘বিগত সময়ের দু’জন মেম্বার জনাব আব্দুর রব দাদা ও মোঃ ফজলুল করিম কাকার সময়ে এ রাস্তায় কিছু নতুন মাটি ভরাট করা হলেও সাম্প্রতিক সময়ে আর কোনরূপ সামান্যতম মেরামতের কাজও হয়নি এই রাস্তাটিতে। গত ঈদের সময় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান বাবুলের ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও পাড়ার যুব সমাজের সার্বিক সহযোগিতায় কিছু বালু ও কংক্রিট ফেলার কাজ হয়েছে। তাতেও এলাকাসীরা তেমন সুফল পান নি। অথচ এই গ্রামের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও জনবসতিপুর্ন পাড়া হওয়া সত্ত্বেও দুর্ভাগ্যবশত: দীর্ঘদিন যাবত সরকারী ও প্রশাসনিকভাবে এই রাস্তাটির যথাযথ উন্নয়নে কোনো বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি।
অনেকে আক্ষেপ করে বলে থাকছেন যে, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও বিদেশ থেকে আসতেও এতো কষ্ট হয় না; বিশেষ করে বর্ষা সময়ে এই পথটুকু পার হতে জনসাধারণকে যে কষ্ট ভোগ করতে হচ্ছে। অনেকে মারাত্মক অসুস্থ রোগীকেও এখানকার এহেন রাস্তা ও যানবাহনের অসুবিধার কারনে সময়মত ডাক্তার ও হাসপাতালে নেয়া সম্ভব হয়ে উঠছেনা।
তিনি আরো লিখেছেন, ‘আমাদের বর্তমান চেয়ারম্যান সাহেবের নানার বাড়িও এই গ্রামে এবং উক্ত পথ দিয়েই যাওয়া লাগে। কিন্ত তিনিও বিষয়টি আন্তরিকভাবে দেখলেন না।
এছাড়া, এ রাস্তা সম্পর্কে সোস্যাল মিডিয়ায় কয়েক জনের কমেন্টের নমুনা: ‘আমরা এই রাস্তার উন্নয়নে সরকার ও স্থানীয় প্রতিনিধিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’
‘আমাদের বর্তমান মেম্বার নিজের মুখে বলুক- উনি কি কি কাজ করেছেন নরহরিপুর গ্রামের উন্নয়নের জন্য? ওনাকে বলেছিলাম- আমাদের রাস্তাটা কবে নাগাদ ঠিক হবে? উনি বলেছিলেন- প্রকল্প আছে বাস্তবায়ন হবে। কিন্ত কবে হবে তা তিনি বলেনি।’
‘আমাদের এই রাস্তার এখনো উন্নয়ন কেন হয় নাই- কারণ আমাদের নেতা বেশি কিন্তু কাজ কম- এটাই আমাদের দুর্ভাগ্য!’
“এ রাস্তার উপরেই ইউনিয়ন ওয়ার্ড সভাপতির বাড়ি। আরো সামনে গেলে একজন বড় লিডার রায়হান সাবের বাড়ি, আরো সামনে গেলে তো বুঝেন অনেক বড় নেতার নাম আসবে তাই। আবার আপনার প্রিয় বন্ধু মহসিন খানের বাড়ি।”
‘সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ- এ রাস্তাটি চলার অনুপোযোগী। দায়িত্বশীল যারা আছেন- তারা একটু চেষ্টা করলে অবশ্যই রাস্তাটির উন্নতি হবে।’
‘শুনেছি- টেন্ডার ও কাজের অর্ডার হয়েছে। কিন্তু এখনও বাস্তবায়ন শুরু হয়নি।’
“আন্নেরা হেতেনগরে ভোট দেন নাই। হেতেনরা রাতদিন দুইজনে বাইকে অনেক তেল খরচ কইরে ভোটের দিন নিজেরা কষ্টকরে আন্নাগ ভোট ও দিয়া দিছে। আমি নাখান্দা ২৮ তারিখ ভোট দিতে যাইয়া এলাকার পরিস্থিতি দেইখা ২৯ তারিখ মহা খুশীতে ঢাকা চলে আসি। আমার শালাত ভাই-এর সাথে কথা বলার পর তিনি আমাকে বলেন আপনার নিরাপত্তার দায়িত্ব কে নিবে। উনার কতা শুনে কি হবে বুঝতে পেরেই আসতে হয় ফিরে। ঢাকায় আমরা যে এলাকায় থাকি সেম টু সেম এখানের রাস্তাও একই রকম। যেখানে অনেক নতুন রাস্তা হয়েছে। অথচ, অনেক পুরোনো রাস্তাগুলো এখনো অবহেলিত। অথচ, এ রাস্তাগুলো দিয়ে প্রতিদিন অনেক মানুষ কষ্ট করে যাতায়াত করে থাকেন। দিঘির দক্ষিন পূর্ব কোনা হতে ঈমামপাড়া রাস্তাটি অনেক পুরোনো আর এটি অতি গুরুত্বপূর্ন। এ রাস্তাটির উন্নয়ন হলে অনেক পথ কমে যাবে। দক্ষিণ পাড়ার বা মির্জাপুর পূর্ব পাড়ার মানুষগণ- যারা সহজে পোমগাঁও কিংবা মনোহরগঞ্জে চলাচল করে থাকেন। আমিও আশাবাদি আমাদের গ্রামের নেতা আর মেম্বার সাহেবরা উদ্যোগী হয়ে মন্ত্রী মহোদয়কে বললে তিনি এ রাস্তাটি করে দিতে অবশ্যই সহযোগীতা করবেন। তিনিতো উদার মনের মানুষ।”
‘দুই বছর চলে গেছে দ্বিতীয় পর্বের অপেক্ষায় আছি।’
আরেক জনের কমেন্ট হলো: “এই গ্রামে উত্তর পাড়ারও একই অবস্থা। এখানে রাস্তার এমন অবস্থা যে, সাব্দির বাড়ি থেকে শুরু করে উত্তর পাড়া পর্যন্ত খুবই বেহাল অবস্থা।”
প্রকাশ থাকে যে, উক্ত নরহরিপুর গ্রামের বাসিন্দা মাষ্টার দেলোয়ার হোসেন-এর সুত্র মতে এই সুনামধন্য নরহরিপুর গ্রামে ২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১টি হাই স্কুল, ১টি ফাজিল মাদরাসা (১৯১০ সালে প্রতিষ্ঠিত), ৩টি নূরানী মাদরাসা, ৮টি মসজিদ এবং জমজমাট বাজার রয়েছে। এছাড়া, গ্রামটিতে ১টি বিশাল-বড় দীঘি ও ১ জন প্রসিদ্ধ ওলিয়ে কামেলের মাজার রয়েছে। রয়েছে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক। এই গ্রামের লোক সংখ্যা প্রায় ৭ হাজার। এর মধ্যে বেশ কয়েকজন ডাক্তার ও ইঞ্জিনিয়ারও রয়েছেন। নরহরিপুর সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা হলেন মরহুম আব্দুল হামিদ মুন্সী।
অবশেষে উল্লেখিত নরহরিপুর এলাকার রাস্তা-ঘাটগুলোর দৈন্যদশার উন্নয়নে উক্ত হাফিজ আহমেদ ভূঁইয়া “মনোহরগঞ্জ উপজেলা সন্মানিত চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং সামনে যারা ভোট যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক, এই অবহেলিত রাস্তাটির উন্নয়ন ও মেরামতের জন্য তাদের সকলের সু-দৃষ্টি কামনা করছেন। এতে করে ইনশাল্লাহ অচিরেই ‘গ্রাম হবে শহর’ আমাদের সন্মানিত মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম মহোদয়ের এই স্লোগান বাস্তবায়ন হবে এই সকল গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার উন্নয়ন ও সংস্কারের মাধ্যমেই।”