দেশের অর্থনীতি বাঁচাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন হতে হবে: সিইসি
ষ্টাফ রিপোর্টার\ প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, দেশের অর্থনীতি ও ভবিষ্যৎ বাঁচাতে হলে আসন্ন সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য হতে হবে।
গত সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনিস্টিটিউট ভবনে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটির সদস্যদের আইন-বিধি ও কর্মপদ্ধতি বিষয়ক প্রশিণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
সুষ্ঠু, অবাধ ও আইনানুগভাবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে এই নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়ে সিইসি বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশে সার্বভৌম নয়। আমাদের যেভাবে যুক্তরাষ্ট্র কমেন্ট করতে পারে, আমরা কিন্তু ওয়াশিংটনে গিয়ে সে রকম হুমকি-ধামকি দিতে পারছি না। তবে আমাকে বাঁচাতে হলে, সাধারণ জনগণকে বাঁচাতে হলে, গার্মেন্টস শিল্পকে বাঁচাতে হলে যে দাবিটা আমাদের বা বাইরের- ওরা (বিদেশি) খুব বেশি দাবি করেনি। তাদের (বিদেশিদের) একটাই দাবি, বাংলাদেশের নির্বাচন ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল হতে হবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে দেশ ‘সংকটে’ রয়েছে। আস্থা নিয়ে সন্দেহ আছে, আমাদের তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। প্রত্যেকেরই দায়িত্বশীলতার সাথে দায়িত্ব পালন করা উচিত।’ তিনি বলেন ‘কয়েকটি দেশকে বাদ দিলে বেশিরভাগ দেশই সত্যিকারের সার্বভৌম নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে নির্দেশ দিতে পারে, আমরা সেভাবে করতে পারি না।’
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘এটা দুর্ভাগ্যজনক যে কিছু বিদেশি দেশ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের ওপর তাদের থাবা বাড়াচ্ছে। তারা থাবা বিস্তার করে রেখেছে। তাই আমাদের অর্থনীতি, আমাদের ভবিষ্যৎ, আমাদের অনেককিছুই রক্ষা করতে হলে এই নির্বাচনটাকে ফ্রি, ফেয়ার ও ক্রেডিবল করতে হবে।’
সিইসি বলেন, সম্প্রতি খুব কষ্ট পেয়েছি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং ল²ীপুরে সিল মারা হয়েছে। আমরা সেখানে প্রতিহত করতে পারিনি। আমাদের প্রশাসন পারেনি। আমাদের নির্বাচন কর্মকর্তারা পারেনি। এটা লজ্জাকর। তবে এই সিল মারাটাও কিন্তু আমাদের নির্বাচনের সংস্কৃতির একটা অংশ হয়ে গেছে। এটা মন্দ সংস্কৃতি। পেশিশক্তি ব্যবহার করা, কালো টাকা ব্যবহার করা এবং এই ধরনের কারচুপি করা দীর্ঘদিন ধরে চর্চার মাধ্যমে একটা অপসংস্কৃতির চর্চা হয়ে গেছে। ক্রমান্বয়ে আমাদের এই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমরা নিরন্তর চেষ্টা করছি।
‘আমরা নির্বাচন কমিশন থেকে প্রতিশ্রæতি দিয়েছি- নির্বাচনকে অবাধ, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য করতে নির্বাচন কমিশন যথাসাধ্য চেষ্টা করবে।’ এজন্য সকলের আন্তরিক ও সাহসি সহায়তা আমাদের লাগবে বলে জানান সিইসি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করব আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সকলে চোখকান খোলা রেখে, সৎভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করবেন এবং আপনারা যারা ইলেকটোরাল ইনকোয়ারি কমিটিতে কাজ করবেন তাদেরও ব্যাপক দায়িত্ব রয়েছে।’
সিনিয়র সহকারী জজ ও যুগ্ম জেলা জজদের উদ্দেশ্যে সিইসি বলেন, নির্বাচনকালে দায়িত্ব পালনে সততা এবং সাহসিকতা যেন থাকে। বাংলাদেশ একটা প্রজাতন্ত্র। নির্বাচন ছাড়া বাংলাদেশ কখনো প্রজাতন্ত্র হতে পারে না। প্রজাতন্ত্র মানেই জনগণের প্রতিনিধিদের দ্বারা শাসন পদ্ধতি। একনায়কতন্ত্র ও রাজতন্ত্র খুব একটা খারাপতন্ত্র আমরা বলছি না। তবে প্রজাতন্ত্রের শাসন ব্যবস্থা সবচেয়ে জনপ্রিয়।
গণতন্ত্রকে বাঁচিয়ে যদি রাখতে হয় তাহলে নির্বাচনকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে উল্লেখ করে কাজী হাবিবুল আউয়াল আরো বলেন, নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক অনাকাঙ্খিত। নির্বাচনের ফেয়ারনেসকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক ব্যক্তিরা বিভক্ত হয়ে গেছেন, এটা কাঙ্খিত ছিল না। সেজন্য বলা হয়, ইলেকশন ক্রেডিবল হতে হবে। ক্রেডিবল বা বিশ্বাসযোগ্য জিনিসটা চোখে দেখা যায় না। তারপরও এটাকে বলা হয় পাবলিক পারসেপশন। নির্বাচন ক্রেডিবল ও ফ্রি হয়েছে কি না ওটা পাবলিক পারসেপশন; এটার কোনো মানদন্ড নেই। জনগণকে বলতে হবে, নির্বাচন ক্রেডিবল হয়েছে।
ওদিকে, বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ৩০০ ‘নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি’ গঠন করে গত বৃহস্পতিবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে ইসি। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, দায়িত্ব পাওয়া নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির কর্মকর্তারা নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের জন্য নির্বাচন কমিশনে ন্যস্ত থাকবেন। এসব কমিটি দায়িত্ব পালনকালে নির্বাচনপূর্ব অনিয়ম সংঘটিত হলে, তা অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন পাঠাবে সংশ্লিষ্ট জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে। এরপর সংশ্লিষ্ট জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ওই অনুসন্ধান প্রতিবেদন পাঠাবেন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিবের কাছে। জবভ: ঞযব উধরষু ঝঃধৎ